আগে সংস্কার, এরপর নির্বাচন: ইসলামী আন্দোলনের আমির

সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। ছবি: স্টার

নির্বাচনের চেয়ে সংস্কারকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তবে, নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়ও সরকারের ঘোষণা করা উচিত বলে মনে করছে দলটি।

দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, একটি মহাজোট গঠনের জন্য ইসলামি দলগুলোর মধ্যে আলোচনা চলছে। এ ছাড়া, দলটি সংসদ গঠনের জন্য প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তে ভোটের আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব চায়।

রেজাউল করিম জোর দিয়ে বলেন, সংস্কারের বিষয়ে কোনো আপস করতে তারা রাজি নন। 'সংস্কার ভালোভাবে করা উচিত এবং দ্রুত করা উচিত, যাতে আমরা নির্বাচনে যেতে পারি। কিন্তু, অগ্রাধিকার দিতে হবে সংস্কারকে।'

১৯৮৭ সালে গঠিত 'ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন' পরবর্তীতে 'ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ' হয়।

দলটির আমির রেজাউল করিম বলেন, 'সংস্কারের জন্য খুব বেশি সময় নেওয়া উচিত না। সময়ের কথা বলতে হলে আমি মনে করি, এটা এক বছর বা দেড় বছরের মধ্যে হওয়া উচিত।'

আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে সময়সীমা জানতে পারলে ভালো হতো।'

সব ইসলামি দল একটি মহাজোট গঠনের জন্য কাজ করছে উল্লেখ করে চরমোনাই পীর বলেন, 'আমরা আলোচনা করছি। নির্বাচনের জন্য একটি ঐক্যফ্রন্ট তৈরি করতে পারব বলে আশা করছি।'

 

তার ভাষ্য, ইসলামি দলগুলো একটি ব্যানারে নির্বাচনে যাওয়ার চেষ্টা করবে এবং প্রতিটি আসনে নিজস্ব প্রার্থী না দিয়ে জোট প্রার্থীদের সমর্থন দেবে।

এমন কোনো জোট হলে তার নেতৃত্ব কে দেবে, জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা বলেন, 'বেশিরভাগ দলই আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব চাচ্ছে। এ ধরনের ব্যবস্থায় নির্বাচনী জোটের প্রয়োজন হয় না। দলগুলো স্বাধীনভাবে প্রচারণা চালাতে পারে।'

তিনি ব্যাখ্যা করেন, এমনটা হলে নির্বাচনী জোটের পরিবর্তে তাদের জোট একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্মের মতো হবে।

ভোটের আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্বের সুবিধার বিষয়ে তিনি বলেন, 'প্রতিটি দলকে তাদের ভোটের অনুপাতে সংসদে আসন বরাদ্দ দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে প্রতিটি ভোটের মূল্য দেওয়া হবে।'

তিনি বলেন, 'আমরা বিষয়টি নিয়ে অনেক ভেবেছি এবং অন্যদের সঙ্গেও আলোচনা করেছি। এই ব্যবস্থা বিশ্বের ৯১টি দেশে কার্যকর রয়েছে। সবাই এই ধরনের ব্যবস্থা থেকে উপকৃত হয়।'

রেজাউল করিম বিশ্বাস করেন, প্রচলিত ব্যবস্থা জনগণের জন্য কাজ করছে না।

'আমরা দেখেছি, এর মাধ্যমে কেবল ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়', বলেন তিনি।

তার ভাষ্য, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে যতগুলো সরকার এসেছে, তার প্রতিটির মধ্যে ফ্যাসিবাদী বৈশিষ্ট্য ছিল এবং কেবলমাত্র আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির জানান, পূর্ববর্তী শাসনামলগুলো জনগণ ও দেশের জন্য ক্ষতিকর অনেক আইন করেছিল। তারা সংবিধানে বেশ কিছু পরিবর্তনও করেছে। 'সেগুলোই প্রথমে বাদ দেওয়া উচিত।'

তিনি কেমন রাষ্ট্র চান, সেখানে অমুসলিমদের মর্যাদা কেমন হবে, জানতে চাইলে সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, 'একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের জন্য ইসলামই একমাত্র মাধ্যম, যেখানে প্রত্যেকের অধিকারকে সম্মান জানানো হয়। আমি শুধু একটি কথাই বলব, যেকোনো ধরনের আশঙ্কা দূর করতে হবে। ইসলাম বলে, একজন অমুসলিমের সম্পত্তি ও সম্পদ সমান সম্মানের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে এবং এক্ষেত্রে তাদের মুসলিমের সমান মর্যাদা দিতে হবে।'

'ইতিহাস দেখেন, এই কারণেই অমুসলিমরা তাদের জন্মভূমি ছেড়ে ইসলামি শাসনের অধীনে বসবাস করতে এসেছে', দাবি করেন তিনি।

নারী অধিকার সম্পর্কে জানতে চাইলে চরমোনাই পীর বলেন, 'ইসলাম নারীদের সবচেয়ে বেশি অধিকার দিয়েছে। নারীর স্বাধীনতা মানেই নগ্নতার অধিকার নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, নারীর স্বাধীনতা বলতে এখন এটাই বোঝায়। এটা কেবল সমাজের ধ্বংস ডেকে আনে।'

রেজাউল করিমের বাবার অধীনে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ২০০৪ সালে নারীদের খেলাধুলার বিরোধিতা করেছিল। সংগঠনটি নারীদের একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল৷ তারা এটাকে 'নারীর জন্য অপমানজনক' বলে ঘোষণা করে।

রেজাউল করিম বলেন, 'ইসলামে নারীর মর্যাদা প্রকৃতপক্ষে পুরুষের চেয়ে বেশি। ইসলাম বলে, বাবা ও মা যদি কোনো সন্তানকে ডাকে, তাহলে সন্তানের উচিত আগে মায়ের ডাকের উত্তর দেওয়া।'

তিনি জানান, তাদের দলে লক্ষাধিক নারী কর্মী রয়েছেন। তবে, দলের নীতিনির্ধারণী কমিটি মজলিশ-ই-শুরা এবং কার্যনির্বাহী কমিটিতে এখনো ৩০ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নেই। যদিও এই লক্ষ্য অর্জনে তার দল কাজ করছে বলে তিনি জানান।

তাদের নীতিনির্ধারণী কমিটি দুটোতে নারী অংশগ্রহণের হার ঠিক কত শতাংশ, জানতে চাইলে তিনি একই উত্তর দেন যে, দলটির নীতিনির্ধারণী সংস্থায় ৩০ শতাংশ নারী অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

রেজাউল করিম মনে করেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের আর থাকা উচিত নয়।

'আমরা মনে করি, বৃহত্তর স্বার্থে তার নিজেরই পদত্যাগ করা উচিত। সেক্ষেত্রে আমাদের খুব একটা সমস্যা হবে না,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Ending impunity for crimes against journalists

Though the signals are mixed we still hope that the media in Bangladesh will see a new dawn.

13h ago