বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকের গানে খাঁটি লোকগীতির ছোঁয়া দিতে চেয়েছি: শান্তনু মৈত্র

‘মুজিব—একটি জাতির রূপকার’ চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ারে শান্তনু মৈত্র। ছবি: জাহিদ আকবর/স্টার

ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সুরকার ও সংগীত পরিচালক শান্তনু মৈত্র। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও একটি জাতির জন্ম নিয়ে শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় নির্মিত 'মুজিব—একটি জাতির রূপকার' চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালক তিনি।

শান্তনু মৈত্র বলিউডের আলোচিত 'পিকে', 'লাগে রাহো মুন্না ভাই', 'থ্রি ইডিয়টস', 'রাজনীতি', 'পরীনিতা' ও 'মাদ্রাজ ক্যাফে'সহ কলকাতার বাংলা চলচ্চিত্র 'অন্তহীন' এবং 'প্রজাপতি' সিনেমার গানে সুর দিয়েছেন। 'মুজিব—একটি জাতির রূপকার' চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার উপলক্ষে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছেন তিনি।

বাংলাদেশে পা রাখার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শান্তনু মৈত্র দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকের গান, তার সংগীত জীবন, প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসার অনুভূতিসহ বিবিধ বিষয়ে।

 

ডেইলি স্টার: প্রথমবার বাংলাদেশে আসলেন। বিমানবন্দরে নেমে কেমন অনুভূতি হলো?

শান্তনু মৈত্র: মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে বাংলাদেশে পৌঁছেছি। এটাই আমার প্রথম বাংলাদেশ সফর। তেমন কিছুই দেখা হয়নি। এয়ারপোর্ট থেকে আসার সময় চোখে পড়ল দেয়ালে দেয়ালে 'মুজিব—একটি জাতির রূপকার' সিনেমার পোস্টার। একজন বড় মাপের অসাধারণ মানুষের গল্প এটি। শ্যাম বেনেগালের সিনেমা। সেটাও অনেক বড় একটা ব্যাপার। একটা উৎসব উৎসব ভাব চারদিকে। সিনেমার 'অচিন মাঝি' গানটা মানুষ যে পছন্দ করেছে, সেটা দেখেছি।

ডেইলি স্টার: বলিউডের অনেক দর্শকপ্রিয় ও আলোচিত চলচ্চিত্রে সুরকার-সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন আপনি। বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকে কাজ করার অভিজ্ঞতাটা যদি বলতেন? 

শান্তনু মৈত্র: আমার সব সময় ভালো ভালো সিনেমার কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার চেষ্টা থাকে। ভালো গল্পের যেকোনো সিনেমায় কাজ করতে পারলে আনন্দ হয়। 'মুজিব—একটি জাতির রূপকার' তেমনই একটি সিনেমা। এটা বাবার সঙ্গে সন্তানদের ভালোবাসার গল্প, তার পরিবারের গল্প, একজন মহান ব্যক্তিত্বের গল্প, একজন জনপ্রিয় ও সরল রাজনীতিবিদের গল্প, যিনি মানুষকে ভালোবাসতেন। চিরদিন এটি আমার প্রিয় সিনেমার তালিকায় থাকবে।

ডেইলি স্টার: এই চলচ্চিত্রে কাজ করতে গিয়ে কি কোনো ধরনের চাপ অনুভব করেছেন?

শান্তনু মৈত্র: অবশ্যই চাপ অনুভব করেছি। এটা এমন একজন মহান ব্যক্তিত্বের গল্প, যার অনেক অবদান আছে বাংলাদেশের জন্য। তার ওপর এটা শ্যাম বেনেগেলের সিনেমা। আমাকে শ্যাম বেনেগাল বললেন, 'তুমি সব চাপ ভুলে যাও। এটা হলো একজন সরল মানুষের গল্প, দেশের প্রতি, মানুষের প্রতি যার অপরিসীম ভালোবাসা ছিল। সেটা ভাবো। আমার ভয়টা কাটাতে তিনি সাহায্য করেছিলেন। তারপর বাংলাদেশের আসল লোকগীতি নিয়ে ভেবেছি। কারণ আসল এই লোকগীতির ছোঁয়া দিতে চেয়েছি গানে। সিনেমার বিয়ের গান 'কী কী জিনিস এনেছো দুলাল' গানে সেটার ছোঁয়া আছে।

ডেইলি স্টার: এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন বিষয়টি আপনার ভালো লেগেছে?

শান্তনু মৈত্র: মানুষের মুখে অনাবিল হাসি। এতো ট্রাফিক জ্যাম, এতো—তারপরও তাদের মুখ থেকে হাসি সরছে না। এটা আমার খুব ভালো লেগেছে।

ডেইলি স্টার: বঙ্গবন্ধুর বহুল প্রত্যাশিত এই বায়োপিকের প্রিমিয়ারে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপনিও ছিলেন। কেমন ছিল সেই আয়োজন, সেই অভিজ্ঞতা?

শান্তনু মৈত্র: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে বসে তার বাবার গল্প দেখছেন—এটা আমার খুব ভালো লেগেছে। একেবারে অন্যরকম একটি বিষয় মনে হয়েছে। তিনি সিনেমার গানের বিষয়ে তার ভালো লাগা ব্যক্ত করেছেন, যা সত্যিই খুব অনুপ্রেরণামূলক। আমি না আসলে এমন মুহূর্তগুলো মিস করতাম।

ভিন্ন ভঙ্গিতে। ছবি: জাহিদ আকবর/স্টার

ডেইলি স্টার: আপনার বাবার সম্পর্কে কিছু বলুন। শুনেছি তিনি বাংলাদেশের মানুষ ছিলেন।

শান্তনু মৈত্র: আমার বাবা খুব করে চাইতেন যে, আমি  যেন বাংলাদেশে আসি। আমার রক্তে বাংলাদেশ আছে। আমার বাবা রংপুরের মানুষ ছিলেন। তিন বছর আগে যখন বাংলাদেশে আসতে চাইলাম , তখন কোভিড মহামারি শুরু হয়ে গেল। কোভিডের মধ্যেই আমার বাবা মারা গেলেন। ঠিক সে সময়েই  শ্যাম বেনেগাল আমাকে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকে কাজ করার প্রস্তাব দিলেন। তার মতো এমন একজনের সঙ্গে কাজ করার বিষয়টি আমার জন্য স্বপ্নের মতো। এ জন্য দীর্ঘদিন বাংলার ফোক নিয়ে কাজ করেছি। মাটির খাঁটি বিষয়টা তুলে আনতে চেয়েছিলাম এই সিনেমার গানগুলোতে।

ডেইলি স্টার: পশ্চিমবঙ্গের সংগীতবিষয়ক জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো সা রে গা মা পা'র দর্শকনন্দিত বিচারক আপনি। কিন্তু এখন আপনাকে তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। কারণ কী?

শান্তনু মৈত্র: আশা করছি সা রে গা মা প 'র নতুন সিজনে আবার দেখা যাবে আমাকে। ততদিন অপেক্ষায় থাকতে হবে।

ডেইলি স্টার: আপনি ভ্রমণপ্রিয় মানুষ। ঘুরে বেড়াতে খুব পছন্দ করেন। আপনার স্বভাবের এই দিকটি নিয়ে যদি কিছু বলতেন।

শান্তনু মৈত্র: জীবনকে ক্রমাগত নতুনভাবে দেখার চেষ্টা আছে আমার। জীবনকে বিভিন্নভাবে দেখার, জানার জন্য অনেক কৌতূহল কাজ করে মনের ভেতর। এসব কারণে ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে। এটা আমি বই পড়ে জানতে পারতাম। কিন্তু আমি বেড়িয়ে দেখতে পছন্দ করি। এজন্য আমি সাইকেল নিয়েও ঘুরেছি। এই স্বপ্নটা আমার ভেতরে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ভারতের প্রখ্যাত কবি-গীতিকার গুলজার।

ডেইলি স্টার: 'মুজিব—একটি জাতির রূপকার' সম্পর্কে আপনার ব্যক্তিগত মূল্যায়ন কেমন?

শান্তনু মৈত্র: এই সিনেমার সংগীত পরিচালনা ও আবহসংগীত করার জন্য ৫০ বারের বেশি সিনেমাটা দেখতে হয়েছে আমাকে। প্রত্যকবার নতুন করে আবিস্কার করেছি সিনেমাটাকে। এখানে কেউ যেন অভিনেতা নন। সবাই একেকটি চরিত্র হয়ে উঠেছেন। আরিফিন শুভ দারুণ করেছেন মুজিব চরিত্রে। এজন্য তিনি যে অনেক পরিশ্রম করেছেন, সেটা বোঝা যায়। তাজউদ্দীন আহমদের চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন তিনিও যেন আসল চরিত্র হয়ে গেছেন।

ডেইলি স্টার: নতুন সুরকার, সংগীত পরিচালকদের জন্য কিছু বলুন।

শান্তনু মৈত্র: বাংলাদেশ লোকসংগীতের ভাণ্ডার। এখান থেকে নতুনরা অনুপ্রাণিত হোক। তারা নতুন নতুন কাজ করুক। এখানে আমাদের ডাকার দরকারই নেই। এখানকার কোক স্টুডিও বাংলাতে ভালো ভালো কাজ হচ্ছে। সেটাও সত্যি সুন্দর।

Comments

The Daily Star  | English

RMG export to USA grows 14% in FY25

Bangladesh shipped $7.54 billion worth of apparel to the US in the last fiscal year

9m ago