আঙুরের পুষ্টিগুণ কি কিশমিশেও থাকে?  

আঙুর ও কিশমিশ
ছবি: সংগৃহীত

আঙুর পুষ্টিগুণে ভরপুর। এই ফলে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন ভিটামিন ও মিনারেলস রয়েছে। আঙুরের অন্য একটি রূপ বা শুকনো আঙুরকে বলা হয় কিশমিশ।

কিন্তু আঙুর থেকে কিশমিশ তৈরির পরে এ সব পুষ্টি উপাদান কি একই থাকে?  চলুন লাইফ ট্রাস্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পুষ্টিবিদ মাহিনুর ফেরদৌসের থেকে জেনে নেই এ বিষয়ে।

আঙুরকে কিশমিশে রূপান্তরিত করার মূল প্রক্রিয়া হলো আঙুরের পানি কমিয়ে তা শুকিয়ে ছোট আকারে পরিণত করা। বিভিন্ন ধরনের আঙুর থেকে বিভিন্ন ধরনের কিশমিশ বানানো যায়। যেমন কালো, সোনালি, ও সবুজ। পুরো আঙুর রোদে বা বাতাসে শুকিয়ে কিশমিশ তৈরি করা হয়। শুকানোর প্রক্রিয়া আঙ্গুরের ফ্রুক্টোজকে ফ্রুকটানে রূপান্তরিত করে, যা এক ধরনের ফাইবার যা কোলেস্টেরল শোষণ করতে পারে।

আঙুরের পুষ্টিগুণ কি কিশমিশেও থাকে?

আঙুরের অধিকাংশ পুষ্টিগুণ কিশমিশেও থাকে। কারণ কিশমিশ মূলত আঙুর থেকেই তৈরি হয়। তবে শুকানোর প্রক্রিয়ায় কিছু পুষ্টিগুণে পরিবর্তন আসতে পারে। যেমন-

শর্করা এবং ক্যালরি: কিশমিশে আঙুরের তুলনায় শর্করা ও ক্যালরি বেশি থাকে। কারণ শুকানোর ফলে আঙুরের পানি কমে যায়, ফলে শর্করা ঘন হয়ে যায়। এক কাপ আঙুর থেকে পাওয়া যায় ১০৩ ক্যালরি এবং ২৭ গ্রাম কার্বহাইড্রেট। আর এক এক কাপ কিশমিশে থাকে প্রায় ৪৯৩ ক্যালরি এবং ১৩০ গ্রাম কার্বহাইড্রেট। সেজন্য ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিশমিশ ক্ষতিকর হতে পারে।

ফ্যাট: কিশমিশে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি। ১ কাপ আঙুরে পাওয়া যায় ৩৮৫ মিলিগ্রাম ফ্যাট এবং কিশমিশে থাকে প্রায় ৮০০ মিলিগ্রাম।

ভিটামিন সি: শুকানোর প্রক্রিয়ায় আঙুরের কিছু ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়, তাই কিশমিশে ভিটামিন সি কিছুটা কম থাকে।

ফাইবার: কিসমিসে ফাইবারের মাত্রা বেশ ভালো থাকে, যা হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম: কিশমিশে এসব খনিজ উপাদান থাকে, যা শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়ক। কিশমিশে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।

কিশমিশের উপকারিতা

কিশমিশ শুধু মিষ্টি ও সুস্বাদু খাবারই নয়। এর রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা।

হজমে সহায়তা: কিশমিশে প্রচুর ফাইবার থাকে, যা হজম প্রক্রিয়া সহজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত কিসমিস খেলে অন্ত্রের চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং পাচনতন্ত্রের কার্যক্ষমতা উন্নত হয়।

রক্তশূন্যতা রোধে সাহায্য: কিসমিস আয়রনের ভালো উৎস, যা শরীরের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়ক। এটি রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে কিশমিশ খুব উপকারী। কারণ এটি আয়রন সরবরাহ করে যা মাসিকের সময় রক্তক্ষরণে হওয়া আয়রন ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: কিশমিশে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়েড শরীরের কোষগুলোকে সুরক্ষা দেয়। এগুলো শরীর থেকে ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিকেল দূর করতে সহায়তা করে, যা ক্যানসার, হৃদরোগ ও বার্ধক্যজনিত সমস্যার ঝুঁকি কমাতে পারে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: কিশমিশে থাকা পটাসিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। পটাসিয়াম রক্তনালীগুলোকে প্রসারিত করে এবং উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। এটি হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যও উন্নত করে।

হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় উপকারী: কিসমিসে ক্যালসিয়াম এবং বোরন আছে, যা হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে নারীদের জন্য এটি উপকারী, কারণ বোরন হাড়ের ক্যালসিয়াম শোষণ প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং হাড় ক্ষয় প্রতিরোধ করে।

শক্তি বৃদ্ধি করে: কিশমিশে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে, যা দ্রুত শক্তি সরবরাহ করতে পারে। তাই খেলোয়াড় বা শরীরচর্চা করা ব্যক্তিদের জন্য এটি একটি ভালো প্রাকৃতিক অ্যানার্জি বুস্টার হিসেবে কাজ করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে কার্যকরী: কিশমিশে সোরবিটল নামক একটি যৌগ আছে, যা প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভের মতো কাজ করে। এটি অন্ত্রের কার্যক্রমকে স্বাভাবিক করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি: কিশমিশে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন এ এবং ই ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। নিয়মিত কিশমিশ খেলে ত্বক উজ্জ্বল ও কোমল হয়, এবং বার্ধক্যের চিহ্নগুলো কমে যায়।

 

Comments

The Daily Star  | English

Economic expectations: Did govt fall short?

When an interim government was sworn into office following the ouster of the Awami League regime just 100 days ago, there was an air of expectation that the Prof Muhammad Yunus-led administration would take steps to salvage a scam-ridden financial sector and rescue an ailing economy.

8h ago