এপ্রিলের মধ্যে পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি নির্ধারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত

পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি

মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পোশাক শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হবে কি না সে বিষয়ে আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে ইতোমধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কমিটি করা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে শ্রমিকদের ১৮ 
দফা দাবির অগ্রগতি নিয়ে আলোচনার জন্য গতকাল রোববার এক বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যস্থতায় আলোচনার পর মজুরি নিয়ে শ্রমিক ও কারখানা মালিকরা ঐকমত্যে পৌঁছায়।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সচিবালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

কমিটি আগামী এপ্রিলের মধ্যে ন্যূনতম মজুরি পর্যালোচনার সম্ভাব্যতা ও প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে সুপারিশ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে দেবে।

শ্রমিক ও কারখানার মালিকপক্ষ থেকে তিনজন করে প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত কমিটি ইতোমধ্যে দুটি বৈঠক করেছে। পরের বৈঠকটি আগামী ২০ নভেম্বর হবে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) আওতায় ৯৯ শতাংশের বেশি কারখানা মালিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগের ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করেছেন।

গত বছরের নভেম্বরের পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মাসিক মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা চূড়ান্ত করে মজুরি বোর্ড।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত অক্টোবর পর্যন্ত দুই হাজার ১৪০ কারখানার মধ্যে অন্তত দুই হাজার ১২১ কারখানা ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করেছে।
দুই হাজার ১৪০ কারখানার মধ্যে দুই হাজার ১২৩ কারখানা গত সেপ্টেম্বরের মজুরি দিয়েছে।

বৈঠক শেষে উপদেষ্টা জানান, শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা মেটানো জটিল প্রক্রিয়া। কয়েকটি কারখানা মালিক দেউলিয়া হয়ে যাওয়ায় বকেয়া পরিশোধ কঠিন হচ্ছে। ওইসব কারখানার মালিকরা খেলাপি হওয়ায় ব্যাংক থেকে ঋণও নিতে পারেননি।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে শ্রমিক অসন্তোষে পোশাক খাতে সংকট দেখা দেয়। প্রায় ৪০ কোটি ডলারের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে তিন মাস হলো। সার্বিক শ্রম পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। যখন দায়িত্ব নিই তখন অবস্থা নাজুক ছিল।'

শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, 'শ্রম আইন আন্তর্জাতিকমানের করতে আগামী মার্চের মধ্যে সংশোধন করা হবে। অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে তা সংশোধন করা হবে।'

জেনেভায় গত ২৮ অক্টোবর শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির ৩৫২তম অধিবেশনে শ্রম আইন সংশোধনের অঙ্গীকার করা হয়।

একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি বর্তমানে ট্রেড ইউনিয়ন বিধি ও ডকুমেন্টেশনের প্রয়োজনীয়তা সহজ করাসহ আইনে সম্ভাব্য সংশোধনী নিয়ে কাজ করছে।
সেবা সুবিধার বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রম আইন অনুসারে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

এতে আরও বলা হয়, শ্রম আইনের ২৭ ও সংশ্লিষ্ট ধারা সংশোধন করা হবে।

এ ছাড়া, শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড দেওয়ার প্রস্তাব তৈরির দায়িত্ব কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরকে দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রমিকদের বার্ষিক বেতনবৃদ্ধির বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কমিটি করেছে।
ন্যূনতম মজুরি মূল্যায়ন কমিটি বর্তমান মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে ও শ্রম আইনের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে বার্ষিক বেতনবৃদ্ধির সক্ষমতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রস্তাব পেশ করবে।

কমিটি ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে শ্রমিকদের রেশনিং ব্যবস্থা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন।

কিছু শ্রমিককে কালো তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে মন্ত্রণালয় কারিগরি টিম গঠন করেছে। তারা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন জমা দেবে। এটি এখন প্রক্রিয়াধীন।

২০২৩ সালে ন্যূনতম মজুরির দাবিতে আন্দোলনের সময় শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নেওয়ার বিষয়ে ফরম সংগ্রহ করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে শ্রমিক নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছে কমিটি।

প্রতিবেদন জমা হলে তা জেলাশাসকদের কাছে পাঠিয়ে দেবে মন্ত্রণালয়।

আরও বলা হয়, ৮০ দশমিক ৫৫ শতাংশের বেশি কারখানা ডে-কেয়ারের ব্যবস্থা করেছে। বাকিগুলোয় তা করার বিষয়ে বিজিএমইএ পর্যবেক্ষণ করছে।
ন্যূনতম মজুরির সুপারিশের জন্য দায়বদ্ধ সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যূনতম মজুরি বোর্ডও শ্রম আইন সংশোধন ও এর বিধান হালনাগাদ করতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দিয়েছে।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কারখানায় মজুরি কাঠামোর কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে শ্রম আইন সংশোধনের জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে শ্রম আইন সংশোধনের দাবি দীর্ঘদিনের।

গত ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি কয়েকটি মূল ধারা আরও সংশোধনের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে সই ছাড়া 'বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল-২০২৩' ফেরত পাঠান।

রানা প্লাজা ভবন ধসপরবর্তী আন্তর্জাতিক চাপের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা ও শ্রম অধিকারের বিষয়গুলো আন্তর্জাতিকমানের করতে ২০১৩ সালের আগস্টে ২০০৬ সালের শ্রম আইন সংশোধন করে।

কারখানায় শ্রম আইনের যথাযথ প্রয়োগে সরকার ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে শ্রম বিধিমালা করে।

২০১৮ সালে আবার আন্তর্জাতিক চাপে আইনটি আরও সংশোধন করে ইউনিয়ন গঠনের জন্য শ্রমিকের সংখ্যা ৩০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনে।

Comments

The Daily Star  | English

Ending impunity for crimes against journalists

Though the signals are mixed we still hope that the media in Bangladesh will see a new dawn.

9h ago