ভিটামিন ই পাবেন যেসব খাবারে

ভিটামিন ই
ছবি: সংগৃহীত

খাবারের ছয়টি মূল উপাদানের মধ্যে অন্যতম একটি উপাদান ভিটামিন। সব ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করা অত্যাবশ্যক। শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি থাকলে অনেক ধরনের রোগ হতে পারে। বিভিন্ন ভিটামিনের মধ্যে একটি ভিটামিন হলো ভিটামিন ই।

ভিটামিন ই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য একটি উপাদান। ভিটামিন ই এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত এই ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত।

চলুন জেনে নিই ভিটামিন ই এর উপকারিতা এবং কোন কোন খাদ্যে ভিটামিন ই পাওয়া যায়। এ বিষয়ে আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ মাহফুজা নাসরিন শম্পা।

তিনি বলেন, ভিটামিন ই একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আমাদের দেহের সেলগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এটি চর্বি-দ্রবণীয় একটি ভিটামিন, যেটি আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এটি বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাওয়া যায়। যেমন বাদাম, বীজ, সবুজ শাকসবজি, তেল, ফল ইত্যাদি।

ভিটামিন ই এর বিভিন্ন উপকারিতা

১.অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ: ভিটামিন ই একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহের কোষকে মুক্ত মৌলিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এটি কোষের ক্ষয় রোধ করে এবং বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

২. চর্মের যত্নে সহায়ক: ভিটামিন ই ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং শুষ্ক ত্বকের সমস্যা কমায়। এ ছাড়া এটি সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয়।

৩.হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক: ভিটামিন ই এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাগুণ হৃদরোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি দেহে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় এবং রক্তনালীর মধ্যে ব্লকেজ প্রতিরোধ করে, যা রক্তপ্রবাহকে স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক।

৪. ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে: ভিটামিন ই দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ায় এবং বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে ভিটামিন ই কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

৫. চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখে: গবেষণায় দেখা গেছে যে ভিটামিন ই চোখের ম্যাকুলার ডিজেনারেশন এবং ছানি প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি চোখের কোষগুলোকে রক্ষা করে এবং চোখের সমস্যা কমায়।

৬. মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে: ভিটামিন ই মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আলঝেইমার ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমায়।

৭. হাড়ের শক্তি বাড়ায়: ভিটামিন ই হাড়ের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। এটি বিশেষ করে নারীদের জন্য উপকারী কারণ মেনোপজের পর তাদের হাড়ের ঘনত্ব কমে যায় এবং ভিটামিন ই এই সমস্যার প্রতিরোধে সহায়ক।

ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবারের কিছু উৎস

বাদাম: আমন্ড, কাজুবাদাম, আখরোট ইত্যাদি বাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই থাকে। বিশেষ করে আমন্ড ১০০ গ্রামে প্রায় ২৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই সরবরাহ করে, যা দৈনিক প্রয়োজনের একটি বড় অংশ পূরণ করতে সক্ষম।

বীজ: সূর্যমুখী বীজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই পাওয়া যায়। সূর্যমুখী বীজের ১০০ গ্রামে প্রায় ৩৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই থাকে, যা দৈনিক চাহিদার অধিকাংশ পূরণ করে।

সবুজ শাকসবজি: পালং শাক, সরিষা শাক, ব্রকলি, এবং অন্যান্য সবুজ শাকসবজিতে ভিটামিন ই বিদ্যমান থাকে। ব্রকলি এবং পালং শাকে অল্প পরিমাণে হলেও নিয়মিত খেলে ভিটামিন ই এর অভাব পূরণ হতে পারে।

উদ্ভিজ্জ তেল: সূর্যমুখী তেল, জলপাই তেল, সয়াবিন তেল এবং ক্যানোলা তেলে প্রচুর ভিটামিন ই পাওয়া যায়। বিশেষ করে জলপাই তেল এবং সূর্যমুখী তেল এই ভিটামিনের চমৎকার উৎস।

আভোকাডো: আভোকাডো একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল, যা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই সরবরাহ করে। একটি মাঝারি আকারের আভোকাডোতে প্রায় ২.১ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই থাকে।

ডিম: ডিমের কুসুমে কিছু পরিমাণে ভিটামিন ই থাকে, যা নিয়মিত ডিম গ্রহণের মাধ্যমে সহজেই দেহে প্রবেশ করানো যায়।

ফল: পেঁপে, কিউই এবং আমেও ভিটামিন ই এর ভালো উৎস। নিয়মিত এই ফলগুলো খেলে ভিটামিন ই এর চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ হয়।

 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh lost over Tk 226,000cr for tax evasion: CPD

CPD estimated that around 50 percent of this amount has been lost to corporate tax evasion.

2h ago