ভিটামিন ডির ঘাটতি বুঝবেন যেভাবে
ভিটামিন ডি চর্বিতে দ্রবণীয় একটি ভিটামিন, যার মধ্যে আছে ভিটামিন ডি১, ডি২ ও ডি৩। এটি হাড় ও দাঁতের বৃদ্ধি ও বিকাশে সাহায্য করে। এ ছাড়া নির্দিষ্ট কিছু রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতাও তৈরি করতে পারে।
সরাসরি সূর্যের আলোতে আমাদের শরীর প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি উৎপন্ন করে। তবে কিছু নির্দিষ্ট খাবার ও সাপ্লিমেন্ট থেকেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
আমাদের শরীরে ভিটামিন ডির বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণ করা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া ভিটামিন ডির আরও কিছু উপকারিতা আছে।
এসব উপকারিতা, শরীরে ভিটামিন ডির ঘাটতির লক্ষণ ও ভিটামিন ডির উৎস কী— চলুন জেনে নিই ফরচুন হেলথ কেয়ার লিমিটেডের পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নওরিন মাহ্ফুজের কাছ থেকে।
ভিটামিন ডির উপকারিতা
হাড় শক্ত করে: শরীরে ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য প্রয়োজন ভিটামিন ডি। এই ২টি উপাদান হাড়ের মূল গঠন তৈরি করে। ভিটামিন ডির অভাবে হাড় দুর্বল হয় এবং আস্তে আস্তে হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে, যাকে অস্টিওপরোসিস রোগও বলা হয়।
শিশুদের জন্য উপকার: শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের হাড়ের বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন ডি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ডির অভাবে শিশুদের হাড়ে বিকৃতি বা রিকেট রোগ হতে পারে।
দাঁত শক্ত করে: গবেষণায় পাওয়া গেছে, ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট শিশু ও বয়স্কদের দাঁতের ক্ষয়রোধ করে৷ এটি দাঁতের মিনারেলের উন্নতি ঘটিয়ে দাঁতের ক্ষয় রোধ করে।
পেশির শক্তি বাড়ায়: শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ভিটামিন ডি পেশির শক্তি বৃদ্ধি করে। শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও এটি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে: ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার ক্ষুধা কমায় বলে ওজন কমাতেও সাহায্য করে৷ পরিশ্রমের ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্লান্তি কমায় বলে ওজন কমায়।
শরীরে ভিটামিন ডির ঘাটতি আছে বুঝবেন যেসব লক্ষণে
মাংসপেশির দুর্বলতা
ভিটামিন ডির অভাবে শরীরের মাংসপেশীর দুর্বলতা বেড়ে যায়। বিশেষ করে মাংসপেশী বেড়ে যাওয়া ও মাংসপেশী কাঁপার মতো সমস্যাগুলো হয়ে থাকে৷ কাজেই মাংসপেশীর দুর্বলতা কাটাতে নিয়মিত ভিটামিন ডি গ্রহণ করুন।
বিষণ্ণতা
ভিটামিন ডি বিষণ্ণতা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ এর ফলে সারাক্ষণ মানসিক চাপ অনুভূত হয়৷ এর অভাবে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
হাড়ে ফাটল
ভিটামিন ডির অভাবে হাড় দুর্বল হয়ে যায় বলে সহজেই হাড় ভেঙে যেতে পারে৷ অনেক সময় হাড়ে প্রচণ্ড ব্যাথা করলেও বুঝবেন ভিটামিন ডির ঘাটতি হতে পারে।
দাঁত ভাঙা
ভিটামিন ডির অভাবে শিশু ও বৃদ্ধদের দাঁতের ক্ষয় হতে পারে। পাশাপাশি দাঁত ভেঙেও যেতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ
ভিটামিন ডির অভাবে উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে।
ক্লান্তি ও অবসাদ
ভিটামিন ডির ঘাটতি হলে শরীর ক্লান্ত লাগে বেশি এবং অবসাদগ্রস্ত লাগে।
অস্টিওপরোসিস, বিষণ্ণতা, জরায়ু ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার এমনকি ডায়াবেটিস এবং মেদবৃদ্ধি প্রতিরোধে ভিটামিন ডির ভূমিকা আছে। অনেকেই আছেন যারা নিজেরাও জানেন না যে তারা ভিটামিন ডির অভাবে ভুগছেন। যদি নিজের মধ্যে ওপরের লক্ষণগুলো বুঝতে পারেন তাহলে কাছাকাছি হাসপাতালে গিয়ে ভিটামিন ডির মাত্রা পরীক্ষা করে নিন।
ভিটামিন ডির উৎস
ভিটামিন ডির মূল প্রাকৃতিক উৎস হলো সূর্যের আলো। বিশেষ করে ইউভি-বি রশ্মি৷ যখন শরীরের ত্বক অনাবৃত থাকে তখন ত্বকের কোষ ফোটোলাইসিস প্রক্রিয়ায় সূর্যালোককে ভিটামিন ডি-৩ তে পরিবর্তিত করে।
ভিটামিন ডির অন্যান্য উৎসগুলো হলো -
● ডিমের সাদা অংশ
● চিজ
● গরু বা খাসির কলিজা
● কড লিভার অয়েল বা মাছের তেল
● দুধ, সয়ামিল্ক
● ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট ও ট্যাবলেট
Comments