বাতরোগ স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস বিষয়ে যা জানা প্রয়োজন

স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস
ছবি: সংগৃহীত

আর্থ্রাইটিস অর্থ হচ্ছে বাত আর স্পন্ডাইলো মানে স্পাইন বা শিরদাঁড়া। এই দুয়ে মিলে বাতরোগ স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস।

স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস সর্ম্পকে বিস্তারিত জেনে নিন এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের রিউমাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং বিআরবি হসপিটালস লিমিটেডের রিউমাটোলজি অ্যান্ড মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. হাবিব ইমতিয়াজ আহমদের কাছ থেকে।

স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস কী ও কেন হয়

ডা. হাবিব ইমতিয়াজ বলেন, এই বাতের একটি বিশেষত্ব বা এই বাতের অন্তর্ভুক্ত যে রোগগুলো আছে তাদের একটি বিশেষ দিক হচ্ছে এটা কখনো না কখনো রোগীর কোনো এক পর্যায়ে শিরদাঁড়া বা মেরুদণ্ডকে আক্রান্ত করে। কোমরে ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা, বিশেষত মেরুদণ্ডের বিভিন্ন অংশে ব্যথার লক্ষণ প্রকাশ পায় স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিসে। অন্যান্য বাতরোগের ক্ষেত্রে দেখা যায় নারীরা বেশি আক্রান্ত হন। কিন্তু স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ প্রায় সমান। কিছু কিছু পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস কেন হয় সে বিষয়ে অন্যান্য বাতরোগের মতো সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি।

  • স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস হওয়ার পেছনে জেনেটিক বা বংশগতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। যার মধ্যে একটি অন্যতম জিন HLA-B27 যদি কোনো রোগী বহন করে থাকেন সেক্ষেত্রে দেখা যায় তার পারিবারিক ইতিহাস থাকতে পারে স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিসের।
  • বিভিন্ন রকমের সংক্রমণ বিশেষত ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, পেটের পীড়া, ডায়রিয়ার পরে অনেকের স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস হতে পারে।
  • বিভিন্ন যৌন সংক্রামক রোগ সংক্রমণের পরও স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস হতে পারে।
  • বিশেষ ধরনের ত্বকের রোগ সোরিয়াসিস যদি কারো থাকে তাদেরও স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস হতে পারে।
  • বিশেষ ধরনের পেটের পীড়া ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ (আইবিডি) যার মধ্যে ক্রোনস ডিজিজ, আলসারেটিভ কোলাইটিস নামে বিভিন্ন রকমের পেটের পীড়া থাকে, তাদের ক্ষেত্রেও স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস হতে পারে।
  • বয়স ভেদে এটি সাধারণত তরুণ বয়সে ২০ বছর এবং মধ্যবয়স্ক ৪৫ বছরের  লোকদের বেশি হয়। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় ছোট বয়সে জুভেনাইল আর্থ্রাইটিসে ভোগার পর ২০ বা ৪৫ বছর বয়সে স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস হতে পারে।

স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিসের ধরন

ডা. হাবিব ইমতিয়াজ বলেন, স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস কয়েক ধরনের হতে পারে।

১. অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস- মেরুদণ্ডে প্রদাহ তৈরি করে।

২. সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস- সোরিয়াসিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে।

৩. এন্টারোপ্যাথিক আর্থ্রাইটিস- যাদের পেটের পীড়া আছে, ক্রোনস ডিজিজ, আলসারেটিভ কোলাইটিস, অন্ত্রের প্রদাহজনিত সমস্যার সঙ্গে যুক্ত।

৪. রিঅ্যাক্টিভ আর্থ্রাইটিস- বিভিন্ন রকমের সংক্রমের পরে যেমন ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের পরে এটা হয়ে থাকে।

৫. আনক্লাসিফাইড স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস- কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় রোগীর লক্ষণ মিলছে কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিসের কোনো ধরনে ফেলা যায় না আবার চিকিৎসার পর সাড়া দিচ্ছে, তাদেরকে আনক্লাসিফাইড স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস ধরন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

লক্ষণ

  • স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিসের লক্ষণগুলো একটু অন্যরকম হয়। রোগী হয়তো মাঝে মাঝে কোমরে ব্যথা অনুভব করছেন, দীর্ঘক্ষণ চলাফেরা, বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে থাকার কারণে ব্যথা হতে পারে বলে ধারণা করেন অনেকে, শরীরের পোশ্চার বা ভঙ্গিমা পরিবর্তনের সময় মৃদু ব্যথা হয়। এক্ষেত্রে রোগীরা প্রথম দিকে লক্ষণগুলো গুরুত্ব দেন না।
  • কোমরে ব্যথা হয়। কোমরের ব্যথা রাতে বেশি হয় এবং ভোরের দিকে ব্যথার তীব্রতা বাড়তে থাকে। ঘুমের ভেতর এপাশ-ওপাশ করতে অসুবিধা হয় ব্যথার জন্য।
  • ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে, ঘাড় নাড়াতে অসুবিধা হয়।
  • শরীরের অন্যান্য জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধি বিশেষত বড় বড় জয়েন্ট যেমন- হাঁটু, গোড়ালি, কনুই, হিপ জয়েন্ট, কব্জি বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হয়। জয়েন্টগুলোতে ব্যথা হয়, ফুলে যায়, ভাঁজ করতে অসুবিধা হয়।
  • অস্থিসন্ধি ছাড়াও শরীরের অন্যান্য স্থানও আক্রান্ত হতে পারে। যেমন- চোখে প্রদাহ হতে পারে, স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিসের এর কারণে রোগীদের চোখে ইউভাইটিসের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
  • বাতরোগের প্রদাহের কারণে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
  • অনেকের বুকে ব্যথা হতে পারে।
  • এ ছাড়া দীর্ঘদিন চিকিৎসা না করার কারণে কোমর বেঁকে যাচ্ছে, কোমর সোজা করতে পারছেন না, ফুসফুসে ফাইব্রোসিস হচ্ছে, হার্টের সমস্যা, কিডনির সমস্যা এই ধরনের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসেন রোগীরা।

চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

ডা. হাবিব ইমতিয়াজ বলেন, ওষুধ ছাড়া এবং ওষুধ এই দুই মাধ্যমে মূলত স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিসের চিকিৎসা করা হয়। প্রথমে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করতে হবে।

ওষুধ ছাড়া চিকিৎসায় অন্যতম হচ্ছে ব্যায়াম। রোগীদের ব্যায়ামের অংশ হিসেবে সাঁতার কাটায় উৎসাহী করা হয়। স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিসের রোগীরা যদি দিনে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সাঁতার কাটতে পারেন সেক্ষত্রে ওষুধের মাত্রা এবং ওষুধের তীব্রতা দুটোই কম লাগে এবং রোগ ভালো নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর পাশাপাশি সাইকেল চালানো, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপান পরিহার করা, নিয়মিত টিকা নিতে হবে।

স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস চিকিৎসায় ওষুধ হিসেবে ব্যথা ও প্রদাহ কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয় রোগীকে। এ ছাড়া বাত নিয়ন্ত্রণকারী বিভিন্ন ওষুধ দেওয়া হয়। প্রয়োজনে ইনজেকশন দেওয়া হয় রোগীকে, যেগুলোকে বায়োলজিকস গ্রুপ অব ড্রাগস বলা হয় যা খুব ভালোভাবে কাজ করে স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস নিয়ন্ত্রণে।

অন্যান্য বাতরোগের মত স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিসও সর্ম্পূণভাবে প্রতিরোধযোগ্য নয়। ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। ওষুধ সেবন করলে রোগী ভালো থাকেন, এরপর ওষুধ বন্ধ করে দেওয়ার পর রোগী কিছুদিন ভালো থাকলেও পুনরায় আবার বাতরোগ ফিরে আসতে পারে আরও ভয়াবহভাবে।

স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিসের যে জটিলতা শিড়দাঁড়া বেঁকে যাওয়া, শিড়দাঁড়া সোজা করতে না পারা এগুলো দীর্ঘমেয়াদী। রোগী যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেন এবং নিয়ম মেনে ওষুধ সেবন, ব্যয়াম ও স্বাভাবিক জীবনাচার মেনে চলেন তাহলে রোগের জটিলতা এড়ানো ও সুস্থ থাকা সম্ভব।

 

Comments

The Daily Star  | English
Dhaka University JCD Leader Shahriar Alam Shammo Killed

3 arrested over killing of DU JCD leader near Suhrawardy Udyan

Masud Alam, deputy commissioner of Ramna Division Police, said the arrestees are outsiders

45m ago