যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বিতর্কিত ৩ নির্বাচন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক দেশ। এত দীর্ঘ সময় ধরে দেশটিতে এই রাজনৈতিক ব্যবস্থা টিকে থাকার পেছনে মূল কারণ হল, জনমনে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও বস্তুনিষ্ঠতা।
তা সত্ত্বেও, সব নির্বাচনই বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ২০০ বছরের ইতিহাসে অন্তত তিন বার নির্বাচনের ফল নিয়ে হয়েছে বিতর্ক।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানা গেছে।
১৮৭৬: দ্বিভাজিত যুক্তরাষ্ট্র
গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটার প্রায় এক দশক পরও যুক্তরাষ্ট্রে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে মতভেদ ছিল। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সামুয়েল টিলডেন ও রিপাবলিকান পার্টির রাদারফোর্ড বি. হেইসের মধ্যে নির্বাচনের কে জিতবেন, তা পরিশেষে দক্ষিণের তিন অঙ্গরাজ্যের ফলাফলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এই তিন অঙ্গরাজ্যে ভোটের ফল নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। এসব অঙ্গরাজ্যের সমর্থন ছাড়া উভয় প্রার্থীর কেউই ইলেক্টোরাল কলেজের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছিলেন না।
যার ফলে, অচলাবস্থা নিরসনে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একটি কমিটি নির্ধারণ করা হয়। সেই কমিটি দুই প্রার্থীর মধ্যে একটি চুক্তির ব্যবস্থা করে।
চুক্তি অনুযায়ী, রাদারফোর্ড প্রেসিডেন্ট হলেন।
বিনিময়ে সাবেক কনফেডারেসির আওতাধীন দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় সরকার।
২০০০: ৫৩৭ ভোটে জয়
২০০০ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী আল গোর সার্বিকভাবে রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশের চেয়ে বেশি ভোট (পপুলার ভোট নামে পরিচিত) পেয়েছিলেন। কিন্তু ইলেক্টোরাল কলেজে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি তিনি। শেষমেশ ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ফলেই বিজয়ী হন বুশ। সেখানে সামান্য ব্যবধানে গোরকে হারান তিনি।
গোর এই অঙ্গরাজ্যের বেশ কয়েকটি কাউন্টিতে ভোট গণনা প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করেন। কিন্তু ৩৬ দিনের আইনি লড়াই শেষে এই বিতর্কের অবসান হয়। মাত্র ৫৩৭ ভোট বেশি পেয়ে ফ্লোরিডায় জয়ী হন বুশ, যা তাকে তর্কসাপেক্ষে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক প্রশাসনিক পদটি এনে দেয়। গোর বলেন, 'এটাই চূড়ান্ত ফল। আমি মেনে নিলাম।'
২০২০: ক্যাপিটল কাণ্ড
২০২০ সালের বহুল আলোচিত নির্বাচনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করেন জো বাইডেন। তিনি দেশজুড়ে ট্রাম্পের চেয়ে ৭০ লাখ ভোট বেশি পান। ইলেক্টোরাল কলেজেও জেতেন তিনি। কিন্তু এই ফল মেনে নিতে অস্বীকার করেন ট্রাম্প। তিনি অসংখ্য মামলা ঠুকেন এবং নির্বাচনের ফল বদলানোর জন্য কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের নির্বাচন কর্মকর্তা, বিচারবিভাগ ও তার নিজের ভাইস প্রেসিডেন্টের ওপর চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু তার এসব উদ্যোগে কাজ হয়নি। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ট্রাম্প তার সমর্থকদের ক্যাপিটলের দিকে যাতা করার উসকানি দেন। সেখানে তখন কংগ্রেসে ইলেক্টোরাল ভোট গণনা করা হচ্ছিল। ট্রাম্পের সমর্থকরা মার্কিন পার্লামেন্ট ক্যাপিটলে জোর করে ঢুকে পড়ে। সংঘাতে জড়িয়ে অনেকেই আহত হন। পরবর্তীতে পুলিশ উপস্থিত ট্রাম্প-ভক্তদের ছত্রভঙ্গ করে।
কংগ্রেস বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করে।
Comments