সাক্ষাৎকার

অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারের তালিকা তৈরি করুন

আশরাফ আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

অর্থনীতি বিষয়ে শ্বেতপত্র তৈরির কমিটি ও সংস্কার নিয়ে গঠিত টাস্কফোর্সগুলোর কাজ শেষের পর সরকারের অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার নির্ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি।

গত সপ্তাহে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ ধরনের রোডম্যাপ অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনার দিকনির্দেশনা দেবে।'

'যেমন, আমরা জানি যে সরকার বড় অবকাঠামো প্রকল্পের পরিবর্তে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগে জোর দিচ্ছে।'

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আরও বলেন, 'এটি অবকাঠামো শিল্পে প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিলেও শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত ব্যবসায় উচ্চ প্রবৃদ্ধি দেবে।'

তিনি ব্যবসার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির গুরুত্ব, কর্মসংস্থান ও শিক্ষা, ব্যবসার চ্যালেঞ্জ ও অর্থনীতির অন্যান্য দিক নিয়েও কথা বলেছেন।

তার মতে, অর্থনীতিতে নতুন বিনিয়োগ আনতে হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার ও অর্থায়নের খরচ কমিয়ে উদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থা তৈরি করা জরুরি।

স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনৈতিক নীতি নির্দেশনায় অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের 'সতর্ক ও রক্ষণশীল' করে তুলবে বলে মনে করেন তিনি।

এই ধরনের অনিশ্চয়তা উদ্যোক্তাদের 'অপেক্ষা করার' ভাবনায় ফেলে দেবে। বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করাবে।

ডিসিসিআই আরও সভাপতি বলেন, 'সরকার যদি ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি নেয়, তবে এটি নীতি নির্দেশনার অনিশ্চয়তা কমাবে। নতুন উদ্যোগকে উত্সাহিত করবে।'

তিনি মনে করেন, ব্যবসার উন্নত পরিবেশ তৈরিতে সরকারের অঙ্গীকারের প্রতি আস্থা টেকসই বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বশর্ত।

শিক্ষা ও চাকরি

'গত কয়েক দশকে দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি শিক্ষা খাতে দ্রুত প্রবৃদ্ধি হয়েছে' উল্লেখ করে আশরাফ আহমেদ বলেন, 'জনগণ আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। আমরা যদি সঠিক পরিবেশ তৈরি করতে পারি এবং এতে বিনিয়োগ করতে পারি তবে তা কার্যকর করা যাবে।'

'প্রতি বছর লাখ লাখ তরুণ স্নাতক শেষ করে চাকরি শুরু করেন। তবে তাদের জন্য যথাযথ চাকরি পাওয়া বড় চ্যালেঞ্জ।'

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে, সামগ্রিক বেকারত্বের হার প্রায় পাঁচ শতাংশ। একটি গ্রহণযোগ্য। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যারা স্নাতক পাস করেছেন তাদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেকার। এটি অনেক বেশি।

ঢাকা চেম্বার সভাপতি মনে করেন, 'বর্তমান শিক্ষা কার্যক্রম দক্ষতা বাড়ানোর ওপর ভিত্তি করে চলছে না। চলছে ঐতিহ্যবাহী ব্যবস্থার ওপর। চাকরির বাজারের চাহিদার সঙ্গে পরিবর্তিত শিক্ষা কার্যক্রম পরিবর্তন করা হচ্ছে না।'

'স্নাতকদের বিশাল অংশ লিবারেল আর্টস নিয়ে পড়েন। এর চাকরির বাজার ছোট। ফলে চাকরিপ্রার্থীরা তাদের দক্ষতা তুলে ধরতে পারছেন না।'

'পরিষেবা খাতের জন্য মাধ্যমিক পাস করা তরুণদের বেশি প্রয়োজন। তারা ইতোমধ্যে অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছেন। আইসিটি খাতের ফ্রিল্যান্সিং ছাড়া বাংলাদেশ এখনো বড় সেবা রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হতে পারেনি।'

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, 'অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার জন্য আমাদের দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার। বিশেষ করে, অ্যাকাউন্টিং ও আইটির মতো খাতকে গুরুত্ব দেওয়ার সুযোগ আছে।'

স্বল্পমেয়াদে চাকরির দক্ষতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে উচ্চশিক্ষায় স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা ও প্রশিক্ষণ বাড়ানো বা সম্পূরক কোর্স চালুর পরামর্শ দেন তিনি।

চ্যালেঞ্জ

বেসরকারি খাতের জন্য সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ দেখছেন আশরাফ আহমেদ। তার ভাষ্য, তিনটি মূল বিষয়ে এখনই মনোযোগ দেওয়া দরকার। এগুলো হচ্ছে—আইন-শৃঙ্খলা, জ্বালানি ও অর্থ।

প্রথমত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। তবে এটি এখনো বড় উদ্বেগের বিষয়। তিনি বলেন, 'উৎপাদন বজায় রাখা ও শিল্পের সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য আইনশৃঙ্খলা জরুরি।'

তিনি জানান, প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, গ্যাস সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ শিল্পকারখানায় ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে উৎপাদন ব্যাহত হবে।

'আমাদের যদি ডিজেলের মতো বিকল্প রাখতে হয়, তা পাওয়া গেলেও খরচ বেড়ে যায়। খরচ বাড়লে পণ্যের দাম বাড়ে। বিক্রিও কমে যায়।'

তার দৃষ্টিতে, তৃতীয় চ্যালেঞ্জ হলো অর্থায়ন। গত কয়েক মাসে ছোট ব্যবসার জন্য সুদের হার প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে।

'ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ কমেছে। সুদের হার বাড়লে বিনিয়োগ কমে যায়।'

বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি নির্ভর করে নীতি সহায়তা, প্রণোদনা ও অবকাঠামো সেবার ওপর। এগুলো যথাযথভাবে নিশ্চিত করা গেলে ব্যবসার পরিবেশ ভালো হবে বলে মনে করেন তিনি।

আশরাফ আহমেদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রক্ষণশীল মুদ্রানীতির সমালোচনা করেন। তার দৃষ্টিতে, এটি চাহিদা কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।

তিনি মনে করেন, এটি স্বল্প মেয়াদে কার্যকর হলেও দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দেবে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক রাজস্ব নীতি, বাজেট ঘাটতি ও আমদানি শুল্ক কমানোর মতো অন্যান্য ব্যবস্থার পরামর্শ দিয়ে আশরাফ আহমেদ বলেন, 'এতে সরকারের রাজস্ব কমলেও শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাবে।'

Comments

The Daily Star  | English
conflict over security responsibilities at Dhaka airport

Dhaka airport: APBn at odds with aviation force over security duties

A conflict has emerged between the Aviation Security Force (AVSEC) and the Airport Armed Police Battalion (APBn) over security responsibilities at Hazrat Shahjalal International Airport (HSIA). APBn claims that AVSEC took control of their office on October 28, hindering their ability to perform duties effectively

54m ago