বকেয়া চেয়ে এক ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করল আদানি

আদানি পাওয়ার, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, এপিজেএল, বিদ্যুৎ, পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ,
রয়টার্স ফাইল ফটো

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে ভারতের আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ড লিমিটেড (এপিজেএল)। সময়মতো বকেয়া বিল না পেয়ে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।

পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসির তথ্যে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে আদানি প্ল্যান্ট অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।

১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বর্তমানে একটি ইউনিট থেকে প্রায় ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, যা জাতীয় উৎপাদনকে প্রভাবিত করেছে। গতকাল রাতে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হয়েছে।

এর আগে তারা বিদ্যুৎ সচিবকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) ৩০ অক্টোবরের মধ্যে বকেয়া বিল পরিশোধ করতে বলেছিল।

চিঠিতে তারা জানিয়েছিল, নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে বিল পরিশোধ না করলে এপিজেএল ৩১ অক্টোবর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) আওতায় প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।

গত ২৭ অক্টোবর পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, আপনি (সচিব) জানেন যে, নির্ধারিত সময়সীমা দ্রুত এগিয়ে আসছে এবং এখন পর্যন্ত পিডিবি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ১৭০ দশমিক ০৩ মিলিয়ন ডলারের ঋণপত্র দেওয়া হয়নি ও বকেয়া ৮৪৬ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেনি।

পিডিবির একজন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, তারা এর আগের বকেয়ার একটি অংশ পরিশোধ করেছিলেন, তবে জুলাই থেকে আদানি আগের মাসগুলোর চেয়ে বেশি চার্জ নিচ্ছে।

তিনি বলেন, পিডিবি সপ্তাহে ১৭ থেকে ১৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করছে, যেখানে চার্জ হচ্ছে ২২ মিলিয়ন ডলারের বেশি।

তার ভাষ্য, 'এ কারণেই বকেয়া বিল আবার বেড়েছে। আমরা কৃষি ব্যাংককে গত সপ্তাহের পেমেন্ট জমা দিয়েছি। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে ব্যাংক পেমেন্টের বিপরীতে ঋণপত্র খুলতে পারেনি।'

অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধের বিষয়ে তিনি বলেন, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে পিডিবি কয়লার দাম নিয়ে প্রশ্ন তুললে আদানির সঙ্গে তাদের একটি সম্পূরক চুক্তি হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী, তাদের ব্যবহৃত কয়লার দাম পায়রা ও রামপালের  মতো অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে কম হবে।

এক বছরের ওই সম্পূরক চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর জুলাই থেকে আদানি আবার পিপিএ (পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট) অনুযায়ী চার্জ নেওয়া শুরু করেছে। পিপিএ অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ান কোল ইনডেক্স ও অস্ট্রেলিয়ান নিউক্যাসল সূচকের গড় দামের ভিত্তিতে কয়লার দাম গণনা করা হয়। ফলে কম দামের কয়লা ব্যবহার করেও বেশি দাম রাখতে পারে আদানি।

আদানির সর্বশেষ চিঠিতে বলা হয়েছে, তারা আবারও পিডিবিকে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে উল্লিখিত বিষয়গুলো সমাধানের অনুরোধ করছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ১০ কার্যদিবসের মধ্যে এলসি ইস্যু করতে সম্মত হয়েছে বলে পিডিবি জানিয়েছে গত ১৭ সেপ্টেম্বর। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা ১০ দিন পিছিয়ে ৩০ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়েছে।

'আমরা আবারো বলছি, ঋণপত্র না খোলা ও নির্ধারিত তারিখের মধ্যে বকেয়া অর্থ পরিশোধ না করা পিপিএ'র আওতায় পিডিবির চুক্তির ব্যত্যয়, যা বিদ্যুৎ সরবরাহে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।'

চিঠিতে আরও বলা হয়, পিডিবির বিপুল বকেয়া ও ঋণপত্র না পাওয়ার কারণে কয়লা সরবরাহকারী ও পরিচালনাকারী এবং ঠিকাদারদের অর্থ পরিশোধের জন্য অর্থ জোগাড় করতে আদানি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

আদানি বলেছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকাকালে এপিজেএল পিপিএর ধারা ১৩.২ (১) এর অধীনে ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় থামাবে না।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বকেয়া পরিশোধের জন্য চাপ দিয়ে আসছে  এপিজেএল। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছিলেন গৌতম আদানি নিজেই।

(এই প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে ভাষান্তর করেছেন রবিউল কমল)

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

10h ago