যেসব অঙ্গরাজ্যের ওপর নির্ভর করবে মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল

কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

সর্বশেষ দুই মার্কিন নির্বাচনেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মধ্যে। এবারের নির্বাচনেও একই রকম লড়াইয়ের পূর্বাভাস দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট নয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন হয় 'ইলেকটোরাল কলেজ' পদ্ধতিতে। এ পদ্ধতিতে ৫০টি মার্কিন অঙ্গরাজ্য থেকে ৫৩৮ জন ইলেক্টর নির্বাচিত হন। তারাই নির্ধারণ করেন প্রেসিডেন্ট কে হবেন।

ইলেকটোরাল কলেজ অনুযায়ী, প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধি বা 'ইলেক্টর' থাকেন। জনসংখ্যার ভিত্তিতে একেকটি অঙ্গরাজ্যকে ইলেক্টর দেওয়া হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি, তাই সেখানে সর্বোচ্চ ৫৪টি ইলেকটোরাল ভোট থাকে। ভারমন্টে সবচেয়ে কম, মাত্র তিনটি।

মেইন আর নেব্রাস্কা ছাড়া বাকি রাজ্যগুলোতে 'উইনার টেকস অল' নিয়মে ইলেকটোরাল ভোট নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ, একটি রাজ্যে যেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সর্বোচ্চ ভোট পাবেন তার ভাগেই যাবে সেই রাজ্যের সবকটি ইলেকটোরাল ভোট।

নির্বাচনে জিততে কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে অন্তত ২৭০ ইলেকটোরাল ভোট পেতে হয়।

এখানে উল্লেখ্য, ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিতে সিংহভাগ অঙ্গরাজ্যের ফলাফল প্রতিবার একই থাকে। কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে ফলাফল ঘনঘন বদলায়। সেগুলোকে বলা হয় দোদুল্যমান রাজ্য (সুইং স্টেট)। এবারের নির্বাচনে যে সাত অঙ্গরাজ্য ব্যবধান গড়ে দিতে পারে, তার একটি তালিকা করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

পেনসিলভানিয়া (১৯ ইলেকটোরাল ভোট)

গত দুই নির্বাচনে যেই প্রার্থী এই অঙ্গরাজ্যে জয় পেয়েছেন, সে-ই হোয়াইট হাউজে জায়গা করে নিয়েছেন। এখানে এক শতাংশেরও কম ভোটের ব্যবধানে ২০১৬ নির্বাচনে জয় পান ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২০ নির্বাচনে জো বাইডেন জয় পান মাত্র এক দশমিক দুই শতাংশ ভোটের ব্যবধানে। এবারও এই রাজ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

গত জুলাইয়ে এখানে প্রচারণা চালানোর সময়ই আততায়ীর আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। গ্রামাঞ্চলের শ্বেতাঙ্গ ভোটের জন্য লড়ছেন তিনি এবং সতর্ক করছেন ছোট শহরগুলো অভিবাসীদের দখলে চলে যাচ্ছে।

এদিকে কমলা হ্যারিস এই অঙ্গরাজ্যের অন্যতম বড় শহর পিটসবার্গের অবকাঠামো উন্নয়নে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের রূপরেখা দিয়েছেন। দুই প্রার্থীই এই রাজ্যে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জর্জিয়া (১৬ ইলেকটোরাল ভোট)

২০২০ নির্বাচনে দশমিক দুই তিন শতাংশ ভোটের ব্যবধানে এই রাজ্যে হেরেছিলেন ট্রাম্প। এরপর রাজ্যের নির্বাচনী কর্মকর্তাদেরকে 'ভোট এনে দেওয়ার' নির্দেশ দিয়েছিলেন। যে কারণে জর্জিয়ার প্রসিকিউটররা তাকে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তও করেছেন। তবে এই মামলার রায় নির্বাচন পর্যন্ত স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

১৯৯২ সালের পর প্রথম ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিসেবে এই অঙ্গরাজ্যে জয় পেয়েছিলেন বাইডেন। গত এক-দুই দশকে এখানে সংখ্যালঘুদের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। যে কারণে এবারও ডেমোক্র্যাটদের জেতার সম্ভাবনাই বেশি।

নর্থ ক্যারোলিনা (১৬ ইলেকটোরাল ভোট)

১৯৮০ সালের পর মাত্র একবার কোনো ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী এই অঙ্গরাজ্যে জয় পেয়েছেন। তবে অভিবাসী ও সংখ্যালঘু ভোট বাড়ায় এবার এখানে জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন কমলা।

এদিকে নর্থ ক্যারোলিনার স্থানীয় এক রিপাবলিকান প্রার্থী কেলেঙ্কারিতে জড়ানোয় এখানে পুরো পার্টির জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। এর প্রভাব প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মিশিগান (১৫ ইলেকটোরাল ভোট)

পূর্বে ডেমোক্র্যাটদের ঘাঁটি হলেও ২০১৬ নির্বাচনে এই অঙ্গরাজ্যে জিতেই হিলারিকে হারিয়েছিলেন ট্রাম্প। ২০২০ নির্বাচনে আবার বাইডেন জেতেন এখানে।

জনসংখ্যার অনুপাতে এই রাজ্যে সবচেয়ে বেশি আরব-আমেরিকান বাস করেন। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার জেরে আরব জনসংখ্যার মাঝে বাইডেন-কমলা প্রশাসনের জনপ্রিয়তা এখন একদম তলানিতে। আরবদের ভোটই এই অঙ্গরাজ্যে ব্যবধান গড়ে দিতে পারে।

অ্যারিজোনা (১১ ইলেকটোরাল ভোট)

এই অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে সবচেয়ে তুমুল লড়াই হয়েছিল ২০২০ সালের নির্বাচনে যেখানে বাইডেন মাত্র ১০ হাজার ৪৫৭ ভোটে জয় পেয়েছিলেন।

এবার ট্রাম্পের আশা মেক্সিকো সীমান্তের এই অঙ্গরাজ্যে বাইডেন-কমলা প্রশাসনের অভিবাসন নীতিতে মানুষের মনে যে হতাশা তৈরি হয়েছে সেখান থেকে ভোটের দিক দিয়ে সমর্থন বাড়বে তার।

কমলা গত সেপ্টেম্বরে অ্যারিজোনা সীমান্ত সফর করেন এবং অভিবাসন ঠেকানো এবং দ্বিপক্ষীয় সীমান্ত বিল পুনরুজ্জীবিত করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

উইসকনসিন (১০ ইলেকটোরাল ভোট)

২০১৬ নির্বাচনে ট্রাম্প ও ২০২০ নির্বাচনে বাইডেন জয় পেয়েছিলেন এই রাজ্যে। এখানে জয়ের জন্য মরিয়া রিপাবলিকান শিবির তাদের জাতীয় কনভেনশন করেছে উইসকনসিনে।

নির্বাচনী প্রচারণার শুরুর দিকে সকল সমীক্ষায় বাইডেনের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু কমলা প্রার্থিতা পাওয়ার পর দুজনের মধ্যে ব্যবধান সবসময় গ্রহণযোগ্য ভুলের মাত্রার (মার্জিন অব এরর) মধ্যে ছিল। যার মানে, কোনো প্রার্থীই এগিয়ে নেই এই রাজ্যে।

নেভাদা (৬ ইলেকটোরাল ভোট)

স্বল্প জনসংখ্যার এই রাজ্যে ২০০৪ সালের পর জেতেননি কোনো রিপাবলিকান প্রার্থী। তবে এখানকার হিস্পানিক ভোটারদের মাঝে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বাড়ায় এখন জয়ের সম্ভাবনা দেখছে রিপাবলিকানরা।

নির্বাচনী সমীক্ষায় শুরুতে এই রাজ্যে বাইডেনের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু কমলা আসার পর নেভাদার ভোটার টানতে ছোট ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করবে এমন কিছু অর্থনৈতিক পরিকল্পনা দেন। এই রাজ্যেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

20m ago