আজ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস। কোলাজ ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস। কোলাজ ছবি: রয়টার্স

আজ ৫ নভেম্বর মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আগামী চার বছর যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নীতিসহ বিশ্ব রাজনীতির মেরুকরণে কে প্রভাব বিস্তার করবে এ নিয়ে বিশ্ববাসীর নজর এখন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে।

নির্বাচনের দিনটিকে সামনে রেখে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন দুই প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ মঙ্গলবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে নির্বাচনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। 

আজ যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসির ভোটাররা ভোট দেবেন। যুক্তরাষ্ট্রে ছয়টি টাইম জোন রয়েছে। ফলে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে সময়ের ব্যবধান রয়েছে। তাই সব রাজ্যে সময়কে সমন্বয় করে ভোট শুরু এবং শেষ হবে। ইতোধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৭ কোটি ৮০ লাখ ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন।

নির্বাচনে আলোচনার মূল কেন্দ্রে রয়েছেন বড় দুই দলের প্রার্থী কমলা ও ট্রাম্প। ঐতিহ্যগতভাবে তাঁরাই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। কমলার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে লড়ছেন টিম ওয়ালজ আর ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকছেন জে ডি ভান্স।

এবারের নির্বাচনে আরও চার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী রয়েছেন। তাঁরা হলেন গ্রিন পার্টির জিল স্টেইন, লিবার্টারিয়ান পার্টির চেজ অলিভার, স্বতন্ত্র প্রার্থী কর্নেল ওয়েস্ট ও রবার্ট কেনেডি জুনিয়র। তবে কেনেডি জুনিয়র নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তা সত্ত্বেও, অনেক অঙ্গরাজ্য তাদের ব্যালট থেকে কেনেডির নাম সরিয়ে নিতে অস্বীকার করায় তার পক্ষেও এই নির্বাচনে ভোট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্টের পদ নিজের করে নিতে কম প্রচার চালাননি এসব প্রার্থী। শুরুতে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী ছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ৮১ বছর বয়সী জো বাইডেন। ট্রাম্পের সঙ্গে প্রেসিডেনশিয়াল ডিবেটে ভরাডুবির পর বয়সজনিত কারণে দলীয় চাপে তিনি সরে দাঁড়ান হয়।

গত জুলাইয়ে তাঁর স্থানে আসেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।

নানা জরিপের ফল বলছে, দুজনের লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। নির্বাচনে জয়–পরাজয় ঠিক করে দিতে পারে দোদুল্যমান সাত অঙ্গরাজ্য। তাই শেষ মুহূর্তে দুই প্রার্থীকে এসব অঙ্গরাজ্যে দেখা গেছে।

গতকাল পেনসিলভানিয়ায় নির্বাচনী সমাবেশ করার কথা ছিল কমলার। এর আগে মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভাষণ দেন তিনি। মিশিগানে আরব বংশোদ্ভূত মার্কিন মুসলিম ভোটারদের কাছে টানতে তিনি বলেন, গাজা যুদ্ধ বন্ধে নিজের ক্ষমতার আওতায় সবকিছু করবেন তিনি।

গতকাল নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া ও মিশিগানে সমাবেশ করেন ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প। নর্থ ক্যারোলাইনার কিনস্টোন শহরে সমাবেশে তিনি সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, 'আমরা যেসব সমস্যার মুখে পড়েছি, সেগুলো সমাধান করা সম্ভব। দেশের ভাগ্য এখন আপনাদের হাতে।'

জনপ্রিয়তার লড়াইয়ে কে এগিয়ে

২০২০ সালে জো বাইডেন ক্ষমতায় বসার সময় চলছিল করোনা মহামারি। মহামারি পরিস্থিতি শক্ত হাতে সামলান বাইডেন। তবে মার্কিন অর্থনীতিতে চাপ অব্যাহত থাকায় বেড়ে যায় দ্রব্যমূল্য এবং দেখা দেয় কর্মসংস্থানের অভাব। অভিবাসীদের নিয়েও শক্ত পদক্ষেপ নিতে পারেননি বাইডেন। এসবের জেরে তার জনপ্রিয়তা কমতে থাকে।

মূলত এসব কারণেই বাইডেন ক্ষমতায় আসার কিছু সময় পর থেকে ডেমোক্র্যাটদের দীর্ঘদিনের আধিপত্য কমতে থাকে।

এবারের নির্বাচনী প্রচারে নামার পর ট্রাম্পকে দুবার হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। নেতিবাচক ঘটনা হলেও এতে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বেড়েছে।

রোববার নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, একাধিক ফৌজদারি মামলা ঘাড়ে নিয়ে চলা ট্রাম্প নির্বাচনে জিতলেও সে কৃতিত্ব তার নিজের হবে না। বাইডেন প্রশাসনের প্রতি মানুষের অসন্তোষই তার জয়ের পেছনে কাজ করবে। এর আগে বাইডেনের কাছে ট্রাম্পের পরাজয়ের নেপথ্যেও একই রকম কারোন ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ৪৩টিতে কমলা নাকি ট্রাম্প—কে জিতবেন, তা অনেকটা নিশ্চিত।

মূলত সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান সাত অঙ্গরাজ্য—পেনসিলভানিয়া, অ্যারিজোনা, নেভাদা, উইসকনসিন, নর্থ ক্যারোলাইনা, মিশিগান ও জর্জিয়াই নির্ধারণ করবে কে জিতবেন নিয়ে। এই সাত অঙ্গরাজ্যের ফলই কমলা–ট্রাম্পের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেবে।

গতকাল নিউইয়র্ক টাইমসের জনমত জরিপে দেখা গেছে, দেশজুড়ে ৪৯ শতাংশ মানুষ কমলা ও ৪৮ শতাংশ ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

এ ছাড়া দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্প ১ শতাংশ, অ্যারিজোনায় ৪ শতাংশ, নেভাদায় ১ শতাংশ, নর্থ ক্যারোলাইনা ও জর্জিয়ায় ১ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। কমলা উইসকনসিনে ১ শতাংশ ও মিশিগানে ১ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন।

কবে জানা যাবে ফল

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে স্থানীয় সময় ৫ নভেম্বর রাত বা ৬ নভেম্বর দিনের মধ্যে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে। তবে ঝামেলা হলে চূড়ান্ত ফল জানতে কয়েক দিন লাগতে পারে। যেমন ২০২০ সালের নির্বাচনে চার দিন পর চূড়ান্ত ফল জানা গিয়েছিল। সে বছর কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে বাইডেন ও ট্রাম্পের মধ্যে তুমুল লড়াই হয়েছিল। আবার ২০১৬ সালে ৫ নভেম্বর রাতের মধ্যেই ফল জানা গিয়েছিল।

ভোটাররা মূলত ইলেকটোরাল কলেজ নির্বাচিত করবেন। আগামী ১৭ ডিসেম্বর তাঁদের ভোটে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। যুক্তরাষ্ট্রে মোট ইলেকটোরাল কলেজের ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে একজন প্রার্থীকে ২৭০টি ভোট পেতে হয়। এই ভোট আবার ২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে গণনা করা হবে। সেদিন আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত হবেন নতুন প্রেসিডেন্ট। এরপর ২০ জানুয়ারি শপথ নিয়ে পাকাপাকিভাবে হোয়াইট হাউসে বসবেন তিনি।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Polythene ban: A litmus test for will and eco-innovation

Although Bangladesh became the first country in the world to announce a complete ban on the use of polythene bags in 2002, strict enforcement of the much-lauded initiative has only started taking shape recently.

14h ago