জুলাই-সেপ্টেম্বরে এডিপির খরচ ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন

এডিপি
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

অন্তর্বর্তী সরকার সতর্কভাবে খরচ করছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিরতা। এমন পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার অন্তত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকার খরচ করেছে ১৩ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। এটি এডিপি বরাদ্দের চার দশমিক ৭৫ শতাংশ।

গত অর্থবছরের একই সময়ে উন্নয়ন খরচের পরিমাণ ছিল ২০ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়নের সাড়ে সাত শতাংশ।

২০১৯-২০ অর্থবছরে মহামারির মধ্যেও একই সময়ে এই হার ছিল আট শতাংশের বেশি।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিদেশি ঠিকাদাররা দেশ ছাড়ার পর এডিপির অনেক প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়াকে এর কারণ বলে মনে করছেন পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা।

এ ছাড়াও, অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যমান প্রকল্পগুলোর গুরুত্ব পর্যালোচনায় ধীরগতিতে এগোচ্ছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের রিসার্চ ফেলো মুনতাসীর কামাল মনে করেন, 'জুলাই ও আগস্টে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সম্পদের অভাব ও উন্নয়নকাজ ব্যাহত হওয়ায় এডিপির সামগ্রিক বাস্তবায়নের হার ধীর হয়েছে।'

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত তিন মাসে প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল হয়েছে। এটি সামগ্রিক বাস্তবায়নের হার কমিয়ে দিতে পারে।'

এ ছাড়াও, রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেক ঠিকাদার এখন পলাতক।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কেএএস মুর্শিদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে এর উন্নতি হতে পারে। মূল কারণগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আমরা প্রতি বছর এডিপি বাস্তবায়নের কম হার দেখতে পাই।'

প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের প্রক্রিয়াসহ সরকারি প্রকল্পে দেরি হওয়ার অন্যান্য কারণ তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, 'সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের অভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায়ই সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক প্রকল্প রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ব্যক্তি স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত।'

'এ থেকে বের হতে না পারলে এডিপি বাস্তবায়নে গতি আসবে না। এর সুবিধা পাওয়া যাবে না।'

অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ও টেকসই উন্নয়নে কৌশল প্রণয়নে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি কেএএস মুরশিদের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আলোচনার জন্য আইএমইডির সঙ্গে বসবো। প্রকৃত সমস্যা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো।'

এডিপি বাস্তবায়নের হার বাস্তব পরিস্থিতিকে যথাযথভাবে তুলে ধরে না বলেও মনে করেন তিনি।

বলেন, 'প্রকল্পের ধরন দেখতে হবে। কখনো তুলনামূলকভবে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প দ্রুত শেষ হয়। এটি সামগ্রিক বাস্তবায়নের হার বাড়িয়ে দেয়।'

অর্থনীতিতে এর সার্বিক প্রভাব সম্পর্কে মুনতাসীর কামাল বলেন, 'প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে অনেক নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিকের রুটিরুজি জড়িত।'

'ধীরগতির বাস্তবায়নের প্রভাব সামগ্রিকভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি মোট দেশজ উৎপাদনের হিসাব-নিকাশেও প্রভাব ফেলে।'

এডিপি বাস্তবায়ন হার কম হলে অর্থনীতিতে তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়ে না বলেও মনে করেন তিনি।

তার আশঙ্কা, প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নেওয়ায় জনগণের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বেসরকারি খাতের বিকাশ বন্ধ করে দিতে পারে।

'যেহেতু ঋণের বিষয় আছে তাই আমরা কীভাবে প্রকল্পের টাকা জোগাড় করবো, তা গুরুত্বপূর্ণ।'

গতকাল সোমবার পরিকল্পনা কমিশনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রকল্পের গুরুত্বকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছি। কোন প্রকল্প চলবে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।'

Comments

The Daily Star  | English

July 5, 2024: Nationwide protests persist despite holiday

Even on a holiday, the quota reform protests show no sign of slowing. Students across Bangladesh take to the streets, block roads, form human chains, and voice their rejection of the reinstated quota system in government jobs.

6h ago