কৃচ্ছ্রতায় সাশ্রয়ের লক্ষ্য অর্জন হয়নি সরকারের

লক্ষ্য অন্তত ২৩ হাজার কোটি টাকা, সাশ্রয় ১৫ হাজার কোটি টাকা
হবিগঞ্জের নতুন ডিসি জিলুফা সুলতানা

কৃচ্ছ্রতাসাধনের মাধ্যমে সরকার গত অর্থবছরে যে পরিমাণ অর্থ সাশ্রয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, শেষ পর্যন্ত তার কাছাকাছিও যেতে পারেনি।

২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুতে যখন অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে কড়াকড়ির ঘোষণা দেওয়া হয়, তখন আশা করা হয় যে বছরে অন্তত ২৩ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা যাবে।

প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, গত অর্থবছরে সাশ্রয় করা গেছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। দ্য ডেইলি স্টার এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে।

বিদেশ সফরের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে শিথিলতার উদাহরণ টেনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'সবাই ঠিকভাবে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করায় সাশ্রয় কম হয়েছে।'

এ ছাড়া, সরকার সেই অর্থবছরের মধ্যেই অধিকাংশ কৃচ্ছ্রতাসাধনের পরিকল্পনা প্রত্যাহার করে নেয়।

কৃচ্ছ্রতাসাধনের পরিকল্পনায় অন্যতম নির্দেশনা ছিল, যানবাহন, উড়োজাহাজ, হেলিকপ্টার, জাহাজ, নৌযান কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা। সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রকল্পগুলোকে 'এ', 'বি' ও 'সি' শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। 'এ' শ্রেণির প্রকল্পগুলো স্বাভাবিকভাবে চলবে, 'বি' শ্রেণির প্রকল্পগুলোর বরাদ্দের ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় করা হবে ও 'সি' শ্রেণির সব প্রকল্প স্থগিত রাখা হবে—এটাই ছিল পরিকল্পনা।

গত মার্চেই এই মানদণ্ড শিথিল করা হয়। 'বি' শ্রেণির প্রকল্পে বরাদ্দের ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয়ের অনুমতি দেওয়া হয় এবং 'সি' শ্রেণির প্রকল্পগুলোর মধ্যে যেগুলো শেষের দিকে আছে, সেগুলোর কাজ এগিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

গত অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নেও কৃচ্ছ্রতার কোনো প্রতিফলন নেই।

সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে এডিপিতে ১ লাখ ৪৯ হাজার ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়, যা পরবর্তীতে সংশোধিত হয়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬ কোটি টাকায়।

শেষ পর্যন্ত এডিপিতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার ১৬২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, যা আগের বছরের প্রায় সমান।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে নন-ডেভেলপমেন্ট ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ, যা আগের বছরে ছিল ১৫ দশমিক ৮২ শতাংশ।

২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় নন-ডেভেলপমেন্ট খাতে ব্যয় কম হলে কৃচ্ছ্রতাসাধন কাজ করছে বলে ধরে নেওয়া যেত।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা ব্যর্থতা।' তিনি মনে করেন, সরকারের উচিত ছিল আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং কৃচ্ছ্রতাসাধন বাস্তবায়নে কঠোর হওয়া।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, 'সরকার যদি এই পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পারতো, তাহলে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ অনেক কম হতো। টাকা ছাপানোর খুব বেশি প্রয়োজন হতো না।'

বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নগদীকরণের মাধ্যমে ঘাটতি অর্থায়ন মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে তোলে। অর্থনীতিতে টাকা ইনজেক্ট করায় তা অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি করেছে।'

এরপর গত অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির কোনো লাগাম ছিল না।

গত অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল সাড়ে ৮ শতাংশের ওপরে, যা সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মনে হচ্ছে, মন্ত্রণালয়গুলো সাশ্রয় বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পায়নি।'

কৃচ্ছ্রতাসাধনের পরিকল্পনা কার্যকর করার জন্য প্রয়োজন ছিল সমন্বয়, প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি, রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও জবাবদিহিতা। অধ্যাপক সেলিম রায়হান আরও বলেন, 'কিন্তু এর কিছুই ছিল না। কেন মন্ত্রণালয় পর্যায়ে কোনো ত্রৈমাসিক বা অর্ধ-বার্ষিক মনিটরিং করে দেখা হলো না যে তারা কৃচ্ছ্রতাবিষয়ক নির্দেশনা মেনে চলছে কি না।'

Comments

The Daily Star  | English

Uncovering the silent deaths of migrant women

In the shadows of booming remittance flows and the quiet resilience of Bangladesh’s labour diaspora, a disturbing reality persists: numerous Bangladeshi female migrant workers, particularly those employed as domestic help in Gulf countries, are returning home in coffins.

17h ago