গোপন নথি ফাঁস: ইরানে যেভাবে আক্রমণ করতে চেয়েছিল ইসরায়েল

গত ১ অক্টোব ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ছবি: রয়টার্স

গত শুক্রবার ইরানে ইসরায়েলের হামলার পরিকল্পনা সম্বলিত দুটি গোপন নথি ফাঁস হয় অনলাইনে। এসব নথি নিয়ে শুরুতে সংশয় থাকলেও এখন বিশ্লেষকরা বলছেন, এগুলো আসল। গতকাল সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই ফাঁস নিয়ে 'গভীর উদ্বেগ' প্রকাশ করেছেন। 

আজ বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফাঁস হওয়া নথিগুলো ঠিক ইসরায়েলের পরিকল্পনার না। বরং ইসরায়েলের পরিকল্পনার উপর যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারির দুটি স্যাটেলাইট নথি ফাঁস হয়েছে। 

গতকাল মার্কিন হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে বলা হয়, নথিগুলো ফাঁস হয়েছে না হ্যাক হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি তারা।

কেন নথিগুলো 'ভুয়া' না?

বিবিসি জানায়, নথির শিরোনামে যেসব বাক্যাংশ ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো পূর্বে ফাঁস হওয়া গোপন নথিগুলোর মতোই। উপরে 'টপ সিক্রেট' শিরোনামের নিচে লেখা 'এফজিআই', যার পূর্ণরূপ 'ফরেন গভমেন্ট ইন্টেলিজেন্স'। বাইরের দেশের উপর যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা নজরদারি প্রতিবেদনে সাধারণত এই শিরোনাম থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট নজরদারির ক্ষেত্রে যেসব আদ্যক্ষর ব্যবহার করা হয়, সেগুলোও ছিল এখানে। 

সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, 'ফাইভ আইস অ্যালায়েন্স'-এর জন্য তৈরি করা হয়েছিল এসব গোয়েন্দা নথি। এই জোটে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি আছে তাদের চার মিত্র দেশ—যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। এই দেশগুলো নিজেদের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদান করে।

কী আছে নথিতে?

ফাঁস হওয়া নথি দুটো মার্কিন ন্যাশনাল জিওস্প্যাশিয়াল-ইনটেলিজেন্স এজেন্সির ১৫-১৬ অক্টোবরের গোয়েন্দা প্রতিবেদন। ইরানে ইসরায়েলের আসন্ন হামলা কীভাবে হতে পারে, সেটির গোয়েন্দা বিশ্লেষণ ছিল সেই প্রতিবেদনে।

দুটি এয়ার লঞ্চড ব্যালিস্টিক মিসাইল সিস্টেমের কথা উল্লেখ আছে এই প্রতিবেদনে। যার একটি প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূর থেকে আঘাত হানতে পারে। আরেকটি মাটির উপরে ও গভীরের লক্ষ্যবস্তু, সবখানেই হামলা করতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গত এপ্রিলে ইরানে যে মিসাইল হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল, নথি অনুযায়ী সেরকম আক্রমণের পরিকল্পনাই করছে তারা। তবে এবারের মাত্রা অনেক বেশি হবে। 

নথিতে কী আসেনি? 

কখন ও কোন লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করা হবে, তা উঠে আসেনি এসব নথিতে। 

ইরানের পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র ও তেল স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ না করার ব্যাপারে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হলে ইরানের প্রতিক্রিয়া ভয়ানক হতে পারে বলে ধারণা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

বিবিসির মতে, ইরানের সামরিক স্থাপনাগুলো আক্রান্ত হতে পারে। ইরানের বিপ্লবী রক্ষী বাহিনী ও বাসিজ মিলিশিয়াদের সামরিক ঘাঁটিতে আক্রমণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইচ্ছে করেই ফাঁস করা হয়েছে এসব নথি? 

বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইচ্ছে করে ফাঁস করার সম্ভাবনাই বেশি। ইসরায়েলের আক্রমণে দেরি করাতে এসব নথি ফাঁস করা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ হত্যার জবাবে গত ১ অক্টোবর ইসরায়েলের সামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে দুই শতাধিক মিসাইল ছোঁড়ে ইরান। এই হামলার জবাব আরও তীব্র হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছে ইসরায়েল। তবে তিন সপ্তাহ পার হয়ে গেছে, এখনো পাল্টা জবাব দেয়নি ইসরায়েল। 

ধারণা করা হচ্ছে, নভেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে এই আসন্ন আক্রমণে দেরি করাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এই নথি ফাঁস তারই ইঙ্গিত বহন করছে। 

Comments

The Daily Star  | English

‘No room for politics under AL name, ideology’

As the interim government approaches six months in office, calls for a national election are growing louder. Nahid Islam, one of the key leaders from the July uprising who is now serving as an adviser to the interim government, recently spoke with The Daily Star's Wasim Bin Habib and Baharam Khan on a range of pressing issues.

12h ago