পেটের মেদ কমানোর ৫ ইয়োগা আসন

ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে সার্টিফিকেট অর্জনকারী অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক এলিজা চৌধুরী আমাদের ৫টি ইয়োগা আসন সম্পর্কে বলেছেন, যা মূলত পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করবে।
ইয়োগা
ছবি: এলিজা চৌধুরী

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জীবনধারায় শারীরিক পরিশ্রম কমে আসছে। এর ফলাফল? শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে পেটে জমে যাচ্ছে মেদ। ইয়োগা বা যোগব্যায়াম শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার পাশাপাশি পেটের মেদ-চর্বি কমাতে যেমন সাহায্য করে, তেমনি সামগ্রিক সুস্থতায় বিরাট ভূমিকা রাখে।

ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে সার্টিফিকেট অর্জনকারী অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক এলিজা চৌধুরী আমাদের ৫টি ইয়োগা আসন সম্পর্কে বলেছেন, যা মূলত পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করবে।

ইয়োগা
ছবি: এলিজা চৌধুরী

নৌকাসন

এই আসনটি করার সময় আপনার শরীর একটি নৌকার আকার ধারণ করবে। সেখান থেকেই এর নামকরণ করা হয়েছে।

এলিজা চৌধুরী বলেন, `এই আসনটি শরীরের গুরুত্বপূর্ণ মাসলগুলোর জন্য খুব উপকারী। তবে পেটের মেদ কমানোর জন্য এটি সবচেয়ে কার্যকর। এই আসনটি পেটের মেদ কমায়, পেটের মাংসপেশী মজবুত করে, হজমে সাহায্য করে এবং চাপ মোকাবিলা করতে সহায়তা করে।'

যেভাবে করবেন

এই আসনটি করতে প্রথমে চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। এরপর তলপেটের পেশি শক্ত করে আস্তে আস্তে শরীরের উপরের অংশ ও পা উপরে তুলুন। কোমর ও নিতম্বে ভর দিয়ে ইংরেজি 'ভি' (V) অক্ষরের মত করুন। মাটির সমান্তরালে আপনার দুই হাত ছড়িয়ে দিন।

হালাসন

কোমরের চারপাশের মেদ কমানোর জন্য পরিচিত এই আসনটি মূলত তাদের জন্য যারা পেটের মেদও কমাতে চান। এলিজা চৌধুরীর মতে, এই আসনটি কোমর, নিতম্ব ও তলপেটের চারপাশের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে বেশ কার্যকর। নিয়মিত এই আসনটি প্র্যাকটিস করলে ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস এবং গাইনোকোলজিকাল বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

যেভাবে করবেন

প্রথমে চিত হয়ে শুয়ে শরীরের দুই পাশে দুই হাত রাখুন। শরীরের নিচের অংশ এবং পা উপরে তুলুন, পা মাথার উপর নিয়ে আসুন। পায়ের আঙুল দিয়ে মেঝে স্পর্শ করার চেষ্টা করুন। ১০-১৫ সেকেন্ড এই অবস্থানটি ধরে রাখুন। তারপর আবার আগের জায়গায় ফিরে ১০ সেকেন্ড বিশ্রাম নিন। ৩-৫ বার এই আসনটি অনুশীলন করুন।

পশ্চিমোত্তানাসন

পশ্চিমোত্তাসন আসনটি একটি জায়গায় বসে সামনের দিকে ঝুঁকে করতে হয় যা পেটের চারপাশের অংশগুলোকে উদ্দীপিত করে।

এলিজা চৌধুরী বলেন, 'এই আসনটি আপনার শরীরের গভীরের পেশিগুলোকে শিথিল ও নমনীয় করে তুলবে। এই আসনটির কার্যকারিতার মধ্যে রয়েছে পেটের মাংসপেশি শক্তিশালী করে তোলা ও হজমে সহায়তা করা।'

এ ছাড়াও এই আসনটি মনিপুর চক্রকে উদ্দীপিত করে যা আত্মবিশ্বাস, আত্মমর্যাদা বাড়িয়ে শারীরিক সুস্থতা, মানসিক স্বাস্থ্য ও কর্ম শক্তির মধ্যে একটি সামঞ্জস্য আনতে সাহায্য করে।

যেভাবে করবেন

প্রথমে দুই পা সোজাভাবে সামনে ছড়িয়ে বসুন। মেরুদণ্ড সোজা রেখে পায়ের আঙুল সোজা করে রাখুন, জোরে শ্বাস নিন। দুই হাত মাথার দুই পাশে রেখে উপরে তুলুন, ধীরে ধীরে সামনে নিচের দিকে ঝুঁকে শ্বাস ছাড়তে থাকুন। এভাবে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত হাত নিয়ে আসুন এবং এক কবজি দিয়ে আরেক কবজি ধরুন, কপাল হাঁটুতে নিয়ে আসুন। সামনে ঝুঁকে শ্বাস নেয়ার সময় কোমর সোজাভাবে যথাসম্ভব সামনের দিকে ছড়িয়ে রাখার চেষ্টা করুন। তারপর ধীরে ধীরে হাত ছেড়ে দিয়ে আগের জায়গায় ফিরে আসুন।

সেতুবন্ধাসন

এই আসনটি পেটের পেশিগুলোতে সরাসরি প্রভাব ফেলে আপনাকে চাপমুক্ত রাখতে সাহায্য করবে। সেতুবন্ধাসনের গুরুত্ব বর্ণনা করে এলিজা চৌধুরী বলেন, 'সেতুবন্ধাসন পিঠ, নিতম্ব এবং হ্যামস্ট্রিং এর মাসলকে শক্তিশালী করে, পাশাপাশি বুক এবং মেরুদণ্ডের জড়তা খুলে দেয়।'

এই আসনটি পেটের দিকের অঙ্গ এবং থাইরয়েড গ্রন্থিকে সরাসরি উদ্দীপিত করতে পারে, যা হজম এবং বিপাক ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই আসনটি মস্তিষ্ককে শান্ত করে বিষণ্ণতা কমাতে সাহায্য করে ও চাপমুক্ত করে। ফলে আপনি সহজেই নিজের উদ্বেগ কমিয়ে মানসিক স্বস্তি লাভ করবেন।

যেভাবে করবেন

পিঠের ওপর শুয়ে পড়ুন। হাঁটু সমান করে মাটিতে রাখুন। দুটো পা পাশাপাশি রাখুন তবে একদম কাছাকাছি না। হাত দিয়ে গোড়ালি ধরার চেষ্টা করুন অথবা গোড়ালির কাছাকাছি হাত রাখুন। পা মাটিতে রেখে শরীরের নিচের অংশ উপরের দিকে তুলে একটি সেতুর আকার তৈরি করুন এবং এভাবে ৩০ সেকেন্ড থাকুন। তারপর শরীর নিচে নামিয়ে আগের জায়গায় ফিরে আসুন ও পা ছড়িয়ে দিন। ৩ থেকে ৫ বার এটি করুন এবং আস্তে আস্তে সময় বাড়িয়ে দিন।

জানু শীর্ষাসন

জানু শীর্ষাসন এমন একটি আসন যা বসে বসেই করা যায় এবং এটি শরীর ও মনের উন্নতি সাধন করে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটায়। স্নায়ুতন্ত্রকে ভালো রাখে ও পরিপাকতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে।

এই আসনটির অপরিসীম গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে এলিজা বলেন, 'এই আসনটি উদ্বেগ এবং ক্লান্তি কমিয়ে মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এটি মেরুদণ্ড, কাঁধ এবং হ্যামস্ট্রিংকে প্রসারিত করে।'

যেভাবে করবেন

দুই পা সামনে প্রসারিত করে বসুন। ডান পায়ের হাঁটু ভেঙে দুই পায়ের সংযোগস্থলে গোড়ালি রাখুন। ডান পায়ের পাতা বাম উরুর সঙ্গে লেগে থাকবে। সামনের দিকে এগিয়ে দুই হাত দিয়ে বাম পায়ের বুড়ো আঙ্গুল ধরুন এবং হাঁটুতে কপাল স্পর্শ করার চেষ্টা করুন। বিশ থেকে ত্রিশ সেকেন্ডের জন্য অবস্থানটি ধরে রাখুন তারপর পূর্বের  অবস্থানে ফিরে আসুন।

অপর দিকেও একইভাবে এই পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করুন। প্রয়োজন অনুসারে শবাসনে বিশ্রাম নিয়ে এই আসনটি চার থেকে ছয় বার অনুশীলন করুন।

অনুবাদ করেছেন সৈয়দা সুবাহ আলম

 

Comments

The Daily Star  | English

President's fate a political decision; no need to stage demos: Nahid

Information adviser says govt got the people's message, and decision has to be taken through discussions

2h ago