সড়ক নির্মাণে সংরক্ষিত বনের বালু উত্তোলন, হুমকিতে কুয়াকাটার সবুজ বেষ্টনী

বনের ভেতর ড্রেজার। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর পাকা সড়ক নির্মাণে ড্রেজার মেশিন দিয়ে সংরক্ষিত বনের ভেতর থেকে তুলে আনা বালু ব্যবহার করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এতে বনের ভেতর তৈরি হচ্ছে সুবিশাল সব গর্ত। উজাড় হচ্ছে গাছপালা।

স্থানীয়দের ভাষ্য, এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাননি তারা। উল্টো এই কাজে নিযুক্ত ঠিকাদার তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করার হুমকি দিচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে আগত পর্যটকদের চলাচলের সুবিধার জন্য জিরো পয়েন্টের দুইপাশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর ১৬ ফুট প্রস্থ ও ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই পাকা সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ২২ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এ সড়ক নির্মাণের কাজ করছে 'ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স' নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম পর্যায়ে কুয়াকাটা জিরোপয়েন্ট থেকে পূর্ব দিকে গঙ্গামতি পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণের লক্ষ্যে বালু ভরাটের কাজ শুরু করা হয়। এ বালু ভরাট কাজের দায়িত্ব দেয়া হয় কবির হোসেন নামে স্থানীয় এক বালু ব্যবসায়ীকে।

ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

এই কাজে লোকাল বালু কিনে ট্রাকে করে এনে ব্যবহারের কথা থাকলেও তা জোগাড় করা হচ্ছে সংরক্ষিত বনের ভেতর থেকে। বন কর্মকর্তারা বাধা দিলেও তাতে গা করছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা প্রশাসনের পরোক্ষ সহযোগিতায় বনভূমি থেকে বালু উত্তোলনের কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম। তার দাবি, বিষয়টি জানার পর তিনি সহকারি কমিশনারকে (ভূমি) পাঠিয়ে বালু উত্তোলনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।

কিন্তু রবিউল ইসলামের এই দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। তার সঙ্গে কথা বলার পর সেখানে গিয়ে দেখা যায় বালু উত্তোলনের কাজ এখনো চলছে।

ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল ফকির বলেন, 'আমি জেলা প্রশাসক ও ইউএনওসহ বন বিভাগকে একাধিকবার বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু বালু উত্তোলন বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রতিবাদ করলে চাঁদাবাজির মামলা করার হুমকি দিয়েন সাব ঠিকাদার।'

বালু তোলার কারণে বনের ভেতরের যে জায়গাগুলোতে গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে সেগুলো দ্রুত ভরার করে দেওয়ার দাবি জানান দুলাল ফকির। নাহলে অচিরেই বাঁধটি হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

এলাকার আরেক বাসিন্দা বাবুল মুন্সি বলছেন, 'উপকূলীয় বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে। বাঁধের পাশ থেকে বালু উত্তোলন করে চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া হচ্ছে আমাদের।'

এ ব্যাপারে বালু ব্যবসায়ী কবির হোসেনের দাবি, নিয়ম মেনেই বালু সরবরাহ করছেন তিনি।

কিন্তু বন বিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ওপর সড়ক নির্মাণের জন্য একটি প্রভাবশালী চক্র গঙ্গামতি ও মম্বিপাড়া এলাকার সংরক্ষিত বনভূমি থেকে বালু উত্তোলন করছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।'

জানতে চাইলে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাদেকুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঠিকাদার কোথা থেকে বালু আনল তা মনিটরিং করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা দেখি কাজটা ঠিকভাবে হচ্ছে কি না।'

Comments

The Daily Star  | English

US to make history either way

Kamala Harris and Donald Trump launched a final frenzied campaign blitz yesterday, hitting must-win Pennsylvania on the last day of a volatile US presidential race that polls say is hurtling towards a photo finish.

8h ago