পটুয়াখালীর কোন কোন স্থান ঘুরে দেখবেন

কুয়াকাটা
ছবি: জারীন তাসনিম মৌরি/ স্টার

অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি পটুয়াখালী। এই জেলা ভ্রমণের কথা বললে সবার মনে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের নাম আগে আসে। কিন্তু এটি ছাড়াও পটুয়াখালীতে রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান।

এই শীতে যদি পটুয়াখালী যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে তবে এই স্থানগুলো ঘুরে আসতে পারেন।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত

শুভ্র নীল আকাশ, পরিচ্ছন্ন বেলাভূমি, মোহনীয় সৌন্দর্যের এক সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা। ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ও তিন কিলোমিটার বিস্তৃত এ সমুদ্র সৈকতের একই জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। এ ছাড়া ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সাগরের রূপেরও পরিবর্তন ঘটে।

কুয়াকাটা
ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি এখানে দেখার মতো আছে শুঁটকিপল্লী, ঝাউবন, লাল কাঁকড়ার চর, লেবুর চর,‌ গঙ্গামতির চর, তিন নদীর মোহনা। মোটরসাইকেল বা অটোরিকশায় একদিনে এসব দর্শনীয় স্থান দেখা যায়। ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা ভাড়ায় এসব স্থান ঘুরে দেখাবে। তবে দরদাম করে ভাড়া ঠিক করে নিতে হবে।

আলীপুর মাছ বাজার

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের কাছেই বরিশাল-কুয়াকাটা রোড সংলগ্ন এ মাছ বাজার। আলীপুর মাছ বাজার মাছের এক বিশাল আড়ত। এখানে মাঝে মাঝে ছোট হাঙরও পাওয়া যায় বলে জানান স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়াও রূপচাঁদা, কোরাল, কাঁকড়াসহ নানান প্রজাতির দেশি ও সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়।

পটুয়াখালী
ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

কুয়াকাটার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলো দেখে ভোরের দিকে এখানে আসলে ভালো হয়। কারণ সকালে বেশি মাছ বেচাকেনা হয়ে থাকে। সময়ের সঙ্গে তা কমতে থাকে। মাছ বাজার দেখে এর পাশেই ঘাটে আসতে পারেন। এখানে রয়েছে অনেক সাম্পান নৌকা। এ নৌকাগুলো দিয়েই জেলেরা মাছ ধরেন। সারি সারি এ নৌকা দেখতে খুবই মনোমুগ্ধকর। কুয়াকাটা থেকে অটোরিকশায় ৩০ টাকা জনপ্রতি ভাড়ায় এ মাছ বাজারে আসা যায়।

সীমা বৌদ্ধ মন্দির

পটুয়াখালী
ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

কুয়াকাটা থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে মিশ্রিপাড়ায় এটি অবস্থিত। ১৯১১ সালে দুই একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত এ মন্দির। এখানে রয়েছে বিশাল এক বৌদ্ধ মূর্তি। এ মূর্তিটি প্রাচীন অষ্টধাতু দিয়ে তৈরি। এ ছাড়াও সেখানে বিশালাকৃতির এক প্রাচীন ঘণ্টা রয়েছে। মন্দিরটিতে প্রবেশ করতে ১০ টাকা প্রবেশ ফি দিতে হয়।

রাখাইন পল্লী

সীমা বৌদ্ধ মন্দিরের সঙ্গেই রয়েছে রাখাইনদের এক বাজার, যা রাখাইন পল্লী নামে পরিচিত। এখানে রাখাইনদের উৎপাদিত নানান জিনিসপত্র বিক্রি হয়। যেমন রাখাইনদের হাতে বোনা তাঁতের শাড়ি, জামা, ফতুয়া, পাঞ্জাবি ইত্যাদি। এ ছাড়াও কাঠের তৈরি ঘর সাজানো জিনিস, সাজসজ্জার জিনিসপত্রসহ নানা প্রকারের আচার। সেইসঙ্গে দেখতে পাবেন রাখাইনদের জীবনধারা।

রাখাইন পল্লী
ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে এসে সীমা বৌদ্ধ মন্দির ও রাখাইন পল্লীতে আসা ভালো। কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে অটোরিকশায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়ায় এখানে আসা ও আবার কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টে যাওয়া যায়। এক অটোরিকশায় ৫ থেকে ৬ জন যাওয়া যায়।

পানি জাদুঘর

নদী ও পানি সম্পদ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৪ সালে এ জাদুঘর তৈরি করা হয়। এটি ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের পাশে কলাপাড়ায় অবস্থিত। এখানে নদী, নদী পাড়ে বসবাস করা মানুষের জীবন-বৈচিত্র, সংস্কৃতি, নদী পরিচিতি, মৃত নদীসহ নদীকেন্দ্রিক নানা তথ্য-উপাত্ত পাবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের ৯০টি নদীর পানির নমুনা সংরক্ষণ করে রেখেছে এ জাদুঘর।

নদী জাদুঘরটি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ৬টা পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে। সাপ্তাহিক ছুটি রোববার। এখানে প্রবেশ করতে শিক্ষার্থীদের ১০ টাকা, পটুয়াখালী জেলাবাসীদের ২০ টাকা ও অন্যান্য পর্যটকদের জনপ্রতি ১০০ টাকা প্রবেশ ফি দিতে হয়।

ঢাকা থেকে পটুয়াখালী যেভাবে যাবেন

পদ্মাসেতু হওয়ার পর বাসে ঢাকা থেকে পটুয়াখালী বা কুয়াকাটা আসা সহজ হয়েছে। ঢাকার সায়েদাবাদ, আরামবাগ, আব্দুল্লাহপুর অথবা গাবতলী থেকে সাকুরা শ্যামলী, হানিফ, গ্রীনলাইন, ইউরো কোচসহ বেশকিছু বাস যাতায়াত করে। এসি-নন এসিভেদে এসব বাসের ভাড়া ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। এ ছাড়াও বিলাসবহুল স্লিপার কোচে ২ হাজার ৮০০ টাকা ভাড়ায় সরাসরি আসা যায় কুয়াকাটায়।

তবে লঞ্চে আসতে চাইলে ঢাকার সদরঘাট থেকে বরিশাল বা পটুয়াখালীর লঞ্চে আসতে হবে। লঞ্চে কেবিনভেদে ভাড়া ১ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা। লঞ্চে বরিশাল বা পটুয়াখালী এসে সেখান থেকে বাসে চড়ে আবার কুয়াকাটা যেতে হবে। বরিশাল বা পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটা বাসভেদে ভাড়া ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা।

যেখানে থাকবেন

পটুয়াখালী শহরে রাতযাপন না করে কুয়াকাটায় থাকতে পারেন। এতে দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে সুবিধা হবে। কুয়াকাটায় ভালো মানের হোটেলের মধ্যে রয়েছে সিকদার রিসোর্ট। এখানে ৬ হাজার টাকা থেকে ৩২ হাজার টাকায় থাকা যায়।

এ ছাড়াও ইয়ুথ ইন, হোটেল সি গার্ল, সি ভিউ, গ্রেভার ইন, হলিডে হোমসসহ বেশ কিছু হোটেল রয়েছে, যেগুলোতে ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকায় থাকা যায়। তবে ছুটির দিনগুলোতে হোটেল পাওয়া কঠিন হয়। পরিবার নিয়ে আসতে চাইলে আগেই হোটেল বুকিং দেওয়া ভালো।

যা খাবেন

কুয়াকাটায় এলে সামুদ্রিক মাছের বারবিকিউ খেতে ভুলবেন না। সমুদ্র সৈকতের পাশেই রয়েছে বারবিকিউর ব্যবস্থা। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত এ দোকানগুলো খোলা থাকে। এখান থেকে সামুদ্রিক তাজা মাছ দেখে পছন্দ করে কিনবেন। কেনার আগে অবশ্যই দরদাম করে নেবেন। সাগর তীরে বসে সামুদ্রিক মাছের বারবিকিউ আপনাকে অন্যরকম স্বাদ দেবে।

 

Comments

The Daily Star  | English
International Crimes Tribunal 2 formed

Govt issues gazette notification allowing ICT to try political parties

The new provisions, published in the Bangladesh Gazette, introduce key definitions and enforcement measures that could reshape judicial proceedings under the tribunals

6h ago