এপিআই পার্কে কাঁচামাল উৎপাদনে প্রস্তুত ৩ ওষুধ প্রতিষ্ঠান

এপিআই পার্ক
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বিসিক এপিআই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে দেশীয় তিন ওষুধ প্রতিষ্ঠান অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টসের (এপিআই) বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে।

এই তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একমি ল্যাবরেটরিজ ও ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যাল বর্তমানে ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের অপেক্ষায়। হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস সম্প্রতি এই প্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরির কাঁচামাল সীমিত পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে উত্পাদন করছে।

হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন পেয়েছি। সীমিত আকারে উৎপাদন করছি।'

'কিছু পণ্যের পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের অনুমতি প্রয়োজন। এর জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।'

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ২১ শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ৪২ প্লট বরাদ্দ দিয়ে এই শিল্পপার্ক করেছে।

এ পর্যন্ত চার দেশীয় প্রতিষ্ঠান—একমি ল্যাবরেটরিজ, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস ও ইউনিমেড-ইউনিহেলথ ফাইন কেমিক্যালস এখানে কারখানা করেছে।

গত এপ্রিলে ২০০ একর জমির পার্কটিতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর কথা ছিল। তবে একে এখনো জাতীয় গ্যাস গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করা হয়নি। কার্যকরী বর্জ্য শোধনাগারও (ইটিপি) নেই।

একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান সিনহা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় তিন মাস আগে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছি। অনুমোদনের জন্য নমুনা ওষুধ অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে।'

স্থানীয় এপিআইগুলো বিশ্বমানের করতে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান ও ভারত থেকে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি কিনতে প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে বলে জানান তিনি।

একমি বছরে ৬০০ কোটি টাকার এপিআই উৎপাদন করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন ডেইলি স্টারকে জানান, গত জুনে তারা ওষুধ অধিদপ্তরে নমুনা জমা দিয়েছেন।

'ডিজিডিএ অনুমোদন দিলে এপিআইয়ের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করব। বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর জন্য কারখানা পুরোপুরি প্রস্তুত।'

তবে ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের পরিচালক নাজমুল হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অনেক খরচ হওয়ায় বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর জন্য বর্তমান বাজার পরিস্থিতি অনুকূল নয়। খরচ কমে এলে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবো।'

কারখানা প্রস্তুত, পার্ক নয়

২০০৮ সালে এপিআই পার্ক গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৮ সালে বিসিক ওষুধ কারখানার জন্য প্লট বরাদ্দ দেয়।

স্কয়ার ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো ওষুধ প্রতিষ্ঠান সেখানে প্লট পেলেও এখনো কারখানার কাজ শুরু করতে পারেনি।

এর আগে ২৬৫ দেশীয় ওষুধ কারখানার প্রতিনিধিত্বকারী বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান বলেছিলেন, 'গ্যাস সংযোগ দিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে তাদের অধিকাংশ সদস্য এই পার্কে কারখানা করতে পারেনি।'

হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হালিমুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এপিআই কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রয়োজন। ডিজেল-জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে খরচ অনেক বেড়ে যাবে।'

কার্যকরী ইটিপি না থাকলে সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ও দূষণের ঝুঁকির কথাও জানান তিনি।

বিসিকের বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন আহম্মদ খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এপিআই পার্কের সর্বশেষ অবস্থা জানি না।'

বিসিকের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি সংযোগের আশ্বাস দিয়েছে।'

'একটি সার্থক উদ্যোগ'

দেশের ওষুধ শিল্প গত কয়েক দশকে ব্যাপকভাবে আমদানি-নির্ভর খাত থেকে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ খাতে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ এখন ওষুধের অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৯৭ শতাংশেরও বেশি পূরণের পাশাপাশি ১৫১টিরও বেশি দেশে ওষুধ রপ্তানি করে।

তবে প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো জৈব ও অ-জৈব ক্ষুদ্র অণু এপিআইর জন্য প্রয়োজনীয়তার প্রায় ৮৫ শতাংশ আমদানি করা কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল। এতে বছরে খরচ প্রায় এক দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার।

এই এপিআইগুলো মূলত চীন ও ভারত থেকে আনা হয়।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ও ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্তত ছয় প্রতিষ্ঠান বছরে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি দামের এপিআই উৎপাদন করছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের এপিআইয়ের অন্তত ৫০ শতাংশ চাহিদা স্থানীয়ভাবে মেটানো যায় যদি আরও বড় প্রতিষ্ঠান এ খাতে বিনিয়োগ করে।

বাকি ৫০ শতাংশ আমদানি করতে হবে। কারণ এখন স্থানীয়ভাবে কেবল অ-জৈব ছোট অণু এপিআই উত্পাদন সম্ভব।

একমি ল্যাবরেটরিজের মিজানুর রহমান সিনহা বলেন, 'তবুও, এটি সার্থক উদ্যোগ। কারণ অ-জৈব ক্ষুদ্র অণু এপিআইয়ের দেশীয় বাজার বর্তমানে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা।'

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

8h ago