আসলেই কি উইকেটের কারণে ঝড় তোলার অভ্যাস হয়নি শান্তদের?

Najmul Hossain Shanto

কখনো পাওয়ার হিটিং, কখনো ইন্টেন্ট, কখনোবা আবার অ্যাপ্রোচ। বিগত সময়ে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ে উন্নতির আলাপে এসবই আওয়াজ উঠেছে। এখন নিজেদের ঘাটতির পেছনে ঘরের মাঠের উইকেটের কারণ সামনে আনছেন ক্রিকেটাররা।

সদ্য সমাপ্ত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচের পর নাজমুল হোসেন শান্ত। দ্বিতীয় ম্যাচের পর তাসকিন আহমেদ। তৃতীয় ম্যাচের পর তাওহিদ হৃদয়। ঘুরেফিরে তিনজনই সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন- ঘরের মাঠের পিচ ভালো করা প্রয়োজন। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজজুড়ে বাংলাদেশ দলের সদস্যদের মুখে পিচের প্রসঙ্গ যেভাবে এসেছে, কেউ ভেবে বসতেই পারেন, টাইগারদের লড়াইবিহীন একপেশে তিনটি হারের পেছনে সব দোষ বুঝি এদেশের ২২ গজের!

বাংলাদেশিরা ঘরের মাঠে নিয়মিত ভালো ব্যাটিং পিচে খেলেন না ঠিক। সেই অভ্যাস না থাকায় বিদেশে ফ্ল্যাট পিচে খেলতে গেলেও বড় স্কোর করতে পারেন না তারা। প্রথম ম্যাচের পর বলা অধিনায়ক শান্তর এই কথা অস্বীকারের সুযোগ নেই। কিন্তু এদেশে বিদেশি ব্যাটারদের পারফরম্যান্স আবার শুধু উইকেটের দিকে আঙুল তুলতেও দিচ্ছে না।

বাংলাদেশের মাটিতে গত তিন বছরে যা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের খেলা হয়েছে, এতে বিদেশি ১৮ জন ব্যাটার ১৩৫ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে কমপক্ষে ২০০ রান করতে পেরেছেন। আর দেশি এমন ব্যাটার পাওয়া গেছে মাত্র তিনজন! সাকিব আল হাসান (১৫১.৬৭), তাওহিদ হৃদয় (১৩৬.৯৮) এবং জাতীয় দলের যোজন যোজন দূরে থাকা জিয়াউর রহমান (১৩৭.২৬)। তাহলে দেখা যাচ্ছে, একই ধরনের উইকেটে খেলে বিদেশিরা ঠিকই মানানসই স্ট্রাইক রেটে রান তুলতে পারছেন।

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের গড়ে উঠা ও উঠে আসার মঞ্চ বিপিএলে তাকানো যাক। এদেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের পিচের দুর্নাম বহুদিনের। মোটাদাগে ব্যাটিংয়ের জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং উইকেটই যে থাকে এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে দেশিদের জন্যই যেন দুর্বোধ্য হয়ে উঠে নিজেদের উইকেট!

বিপিএলের ইতিহাসে বাইরের ক্রিকেটাররা মানসম্মত স্ট্রাইক রেটেই ব্যাট করেছেন। ২০১২ সাল থেকে শুরু হওয়া আসরটিতে যেসব ব্যাটার অন্তত ২০০ রান করেছেন, তাদের হিসাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে দেখা যাচ্ছে- বিদেশিদের স্ট্রাইক রেট যেখানে ১৩৪.০৯, দেশি ব্যাটারদের ক্ষেত্রে সেটি ১১৯.৫৪।

যত নষ্টের গোড়া দেশের পিচ, এই কথার জোর তাহলে থাকে আর কতটুকু? মাঝেমধ্যে অজুহাতের দ্বারস্থ না হয়ে ব্যর্থতা স্বীকার করে নেওয়াটাই সমীচীন হয়। জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার ও সাবেক ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার ইয়ান বিশপ তো বলেন, সাফল্যের অংশই হচ্ছে ব্যর্থতা।

অবশ্য দেশের উইকেটের সঙ্গে নিজেদের দক্ষতায় উন্নতির কথাও যোগ করেছেন শান্ত-হৃদয়রা। এদেশের ক্রিকেটাররা যেমন ছক্কা মারায় বেশ পিছিয়ে। নিম্ন স্ট্রাইক রেটের পেছনে তা অন্যতম কারণ। বিপিএলে দেশি ব্যাটারদের একটি ছয় মারতে লেগেছে প্রায় ২৩ বল। আর বিদেশিরা প্রতি ছয় মেরেছেন প্রায় ১৫ বলে।

ভিনদেশি ক্রিকেটাররা একটা পর্যায়ে উঠেই না তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে ডাক পান। বিপিএল সেখানে দেশি ক্রিকেটারদের জন্য গড়ে উঠার মঞ্চ। বড় রানের অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন। ভালো উইকেটের তাই বিকল্প নেই। কিন্তু কেবল ভালো উইকেটই যে সমাধান নয়, সেটি নিশ্চয়ই মনে রাখছেন শান্তরা।

 

উদাহরণ হিসেবে চোখের সামনেই তো রয়েছে পাকিস্তান। দেশটিতে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সব ব্যাটিং সহায়ক উইকেটেই খেলা হয়। তবুও টি-টোয়েন্টি সংস্করণে পাকিস্তানের অবস্থান কোথায়, সেটি অজানা থাকার কথা নয় বাংলাদেশিদের।

Comments

The Daily Star  | English
Kudos for consensus in some vital areas

Kudos for consensus in some vital areas

If our political culture is to change, the functioning of our political parties must change dramatically.

2h ago