কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্তে অনড় বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘ

বান্দরবানের জেলা প্রশাসনের আয়োজনে প্রস্তুতি সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের। ছবি: স্টার

খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে সাম্প্রতিক বেশ কিছু সহিংসতার ঘটনার পর কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা।

জেলা প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি সরকারি বিভিন্ন সংস্থার অনুরোধের পরেও একই সিদ্ধান্তে অনড় আছেন তারা।

রাঙ্গামাটি ও খাগড়ছড়িতে বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা, মূর্তি ভাঙচুরের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ অক্টোবর কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান না করার ঘোষণা দেন 'পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের' নেতারা।

পরে বান্দরবান জেলা প্রশাসন আজ বুধবার আসন্ন প্রবারণা উৎসব ও কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিমূলক সভা আয়োজন করে।

সভায় বৌদ্ধ ভিক্ষু, বৌদ্ধ ধর্মালবম্বী নেতা ও জেলার মুসলিম সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।

সভায় বান্দরবান জেলার প্রবারণা উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি অংচমং মারমা বলেন, 'সম্প্রতি রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর ওই দুই জেলায় প্রবারণা পূর্ণিমায় প্রবারণা উৎসব হচ্ছে না। আমাদের বান্দরবানেও উৎসবমুখর পরিবেশ নেই।'

সভায় উপস্থিত জেলা সদরের বিভিন্ন বৌদ্ধ ধর্মীয় উপাসনালয়, মন্দির ও প্যাগোডার অধ্যক্ষ বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বলেন, সম্প্রতি খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে বৌদ্ধদের উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর, দানবাক্স লুটসহ বৌদ্ধ মূর্তি ভেঙে ফেলা হয়েছে। 

জেলার স্বর্ণজাদির বিহারাধ্যক্ষ গুনবর্ধণ মহাথের বলেন, 'আমরা অনেকটা নিরাপত্তারহীনতায় ভুগছি। তাছাড়া, বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক মহামানব গৌতম বুদ্ধের শাসনামল থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘের সব ভিক্ষুরা একটা চেইন অব কমান্ডে চলি। যেহেতু তিন পার্বত্য জেলার বৌদ্ধসংঘের শীর্ষ নেতারা এবারের কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান না করার ঘোষনা দিয়েছেন, সেহেতু এ ঘোষণার বিপক্ষে যাওয়ার আমাদের কোনো সুযোগ নেই।'

সভায় বান্দরবান পার্বত্য ভিক্ষু পরিষদের যুগ্ম-সম্পাদক তিক্ষীন্দ্রীয় থের বলেন, 'বৌদ্ধ ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী সব বৌদ্ধ সম্প্রদায় ও ভিক্ষুদের জন্য এই তিন মাস সাধনার মাস। এসময় ভিক্ষুদের নিজ নিজ বিহার, মন্দির, খিয়াং, প্যাগোডার বাইরে অবস্থান করা নিষেধ।  কিন্তু খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটির ঘটনায় এমন হয়েছে যে, ভিক্ষুদের নিজ বিহারে ঢুকতে আইনশৃঙ্খলা সংস্থার অনুমতি নিতে হচ্ছে। অনেকে বাইরে রাত্রিযাপন করছেন বাধ্য হয়ে। তাই সবদিক বিবেচনা করে ভিক্ষু সংঘের শীর্ষ নেতারা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সে সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়া আমাদের কারও পক্ষে সম্ভব নয়।'

'কঠিন চিবর দান অনুষ্ঠান শুধু ভিক্ষুদের জন্য না। বৌদ্ধ ধর্মালবম্বী সবার একটা বড় ভূমিকা আছে। দায়ক-দায়িকারা দান না দিলে সেক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার থাকে না,' বলেন তিনি।

সভায় জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার বিষয়ে অভয় দেন। তখন ভিক্ষুরা বলেন, 'শুধু প্রবারণা উৎসব পালন সীমিত আকারে করা যেতে পারে। কিন্তু কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ভিক্ষু সংঘের নেতাদের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়া যাবে না।'

সভায় জেলা প্রশাসক জানান, এ বছরে বান্দরবান জেলায় মোট ৫৪৩ বৌদ্ধ বিহারে প্রবারণা পূর্ণিমা তথা প্রবারণা উৎসব উদযাপন করা হবে।

জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিনের সভাপতিত্বে, বিজিবি সেক্টর কমান্ডার, পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছার, অতিরিক্ত জেলা (সার্বিক) প্রশাসক উম্মে কুলসুম, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সব উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় আরও ছিলেন বান্দরবান সার্বজনীন কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের ভিক্ষু চন্দ্র জ্যোতি থের, সত্যজিত মহাথের, প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন কমিটির সভাপতি অংচ মং মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মো. মজিবর রহমান, পার্বত্য বাঙালি পরিষদের  ছাত্রনেতা আসিফ ইকবাল প্রমুখ।

উল্লেখ্য, কঠিন চীবর দান হলো বৌদ্ধ ধর্মের একটি ধর্মীয় আচার বা উৎসব, যা সাধারণত বাংলা চন্দ্রপঞ্জিকা অনুযায়ী প্রবারণা পূর্ণিমা পালনের এক মাসের মধ্যে সুবিধাজনক সময়ে পালন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে মূলত বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ত্রি-চীবর নামে বিশেষ পোশাক দান করা হয়। ধর্মাবলম্বীরা পূণ্যের আশায় প্রতি বছর এভাবে চীবরসহ ভিক্ষুদের অন্যান্য আনুষঙ্গিক সামগ্রী দান করেন।

ত্রি-চীবর হলো চার খণ্ডের পরিধেয় বস্ত্র। এতে আছে দোয়াজিক, অন্তর্বাস, চীবর ও কটিবন্ধনী। এই পোশাক পরতে দেওয়া হয় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের। প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে, সাধারণত আষাঢ়ি পূর্ণিমা থেকে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই পোশাক বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দেওয়া হয়। 

 

Comments

The Daily Star  | English

Crimes against humanity: trial against Hasina begins at ICT

Co-accused in the case are former home minister Asaduzzaman Khan Kamal and former IGP Abdullah Al-Mamun

16m ago