নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এক দশকের হারের বৃত্ত ভাঙল বাংলাদেশ
নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অবশেষে হারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এলো বাংলাদেশ দল। এই প্রতিযোগিতায় টানা ১৬ ম্যাচ হারার তেতো স্বাদ পেরিয়ে জয়ের আনন্দ মিলল তাদের। বোলারদের সম্মিলিত অবদানে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ হাসি হাসল টাইগ্রেসরা।
বৃহস্পতিবার ২০২৪ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে শারজাহতে ১৬ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ১১৯ রানের সাদামাটা পুঁজি পায় নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। জবাবে পুরো ওভার খেলে ৭ উইকেটে ১০৩ রানে আটকে যায় স্কটিশরা।
নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২২ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের এটি তৃতীয় জয়। দীর্ঘ এক দশক পর এই প্রতিযোগিতায় কোনো ম্যাচ জিতল তারা। তাদের আগের দুটি জয়ই ছিল ২০১৪ সালের আসরে। সেবার প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলতে গিয়ে শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডকে হারিয়েছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।
মুর্শিদা খাতুনের সঙ্গে ২৬ রানের ওপেনিং জুটি গড়েন সাথি রানী। ব্যক্তিগত ১২ রানে ক্যাথরিন ব্রাইসের শিকার হন মুর্শিদা। এরপর সাথির সঙ্গে দলের হাল ধরেন সোবহানা মোস্তারি। দ্বিতীয় উইকেটে ৪৪ বলে ৪২ রানের জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটার। শক্ত ভিত পেয়ে যায় বাংলাদেশ দল।
তবে এই জুটি ভাঙতেই দ্রুত উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। তাই পরে আর স্কোরবোর্ডে সংগ্রহটা বড় হয়নি। দলীয় ৬৮ রানে ক্যাথেরিন ফ্রেজারের শিকার হন সাথি। ৩২ বলে ৩টি চারের সাহায্যে ২৯ রান করেন এই ওপেনার। দলীয় পুঁজিতে আর এক রান যোগ হতেই রানআউট হন অভিষিক্ত তাজ নেহার। রানের খাতা খোলা হয়নি তার।
দলীয় ৮৬ রানে আরেক সেট ব্যাটার মোস্তারিকেও হারায় বাংলাদেশ। ৩৮ বলে ২টি চারে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৬ রান করে স্টাম্পড হন তিনি। সাস্কিয়া হর্লির ঘূর্ণিতে সুবিধা করে উঠতে পারেননি স্বর্ণা আক্তার আর রিতু মনি। দুজনই ব্যক্তিগত ৫ রানে বিদায় নেন।
হর্লির তৃতীয় শিকার হন প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে শততম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা অধিনায়ক নিগার। তিনি ১৮ বলে ১৮ রানে ইনিংসের শেষ ওভারে ক্যাচ তুলে আউট হন। শেষদিকে ফাহিমা খাতুন ৫ বলে ২টি চারের সাহায্যে ১০ রান করে অপরাজিত থাকেন। তার সঙ্গে রাবেয়া ১ বলে ১ রানে অপরাজিত ছিলেন।
লক্ষ্য তাড়ায় স্কটল্যান্ড কখনোই সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল না। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়েছে। তাদের কোনো জুটিই ২০ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। ওপেনার সারাহ ব্রাইস একপ্রান্ত আগলে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকলেও বাকিরা দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হন। ক্যাচ মিসে দুবার জীবন পেয়ে ৫২ বলে ১টি চারের সাহায্যে ৪৯ রানে অপরাজিত থাকেন সারাহ।
দুই অঙ্কে পৌঁছান আর কেবল দুজন। তিনে নামা সারাহর বোন ক্যাথরিন ১১ বলে ১১ এবং অ্যালিসা লিস্টার ১২ বলে ১১ রান করেন। স্কটিশদের ইনিংসে চার ছিল স্রেফ ৫টি। কোনো চারই আসেনি ১১ ওভারের পর। শেষ ওভারে তাদের ২৬ রানের চাহিদা থাকায় বাংলাদেশের জয় একরকম নিশ্চিত হয়ে পরে।
তৃতীয় ওভারে আক্রমণে এসেই লেগ স্পিনার ফাহিমা খাতুন বাংলাদেশকে দেন ব্রেক থ্রু। তার বলে হর্লিকে স্টাম্পড করেন উইকেটরক্ষক নিগার। এরপর সারাহ ও ক্যাথরিনের জুটি বড় হতে দেননি পেসার মারুফা আক্তার। তিনি বোল্ড করেন স্কটল্যান্ড অধিনায়ক ক্যাথরিনকে।
দুই অঙ্ক ছুঁয়ে লিস্টার ক্যাচ দেন মিডিয়াম পেসার রিতুর বলে। প্রিয়ানাজ চ্যাটার্জি পড়েন রানআউটের ফাঁদে। এরপর ডার্সি কার্টারকেও সাজঘরে পাঠান রিতু। সীমানার খুব কাছ থেকে ফাহিমা নেন দারুণ একটি ক্যাচ।
লোর্না জ্যাক-ব্রাউন লেগ স্পিনার রাবেয়া খানের শিকার হওয়ার পর ফ্রেজারকে ঝুলিতে ঢোকান নাহিদা আক্তার। এই উইকেটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন ৮৮তম ম্যাচ খেলতে নামা বাঁহাতি স্পিনার নাহিদা। বাংলাদেশ নারী দলের হয়ে এমন কীর্তি নেই আর কারও।
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সব মিলিয়ে এই সংস্করণে পাঁচটি ম্যাচ খেলে সবকটিতেই জিতল বাংলাদেশ। অক্ষুণ্ণ থাকল তাদের জয়যাত্রা। 'বি' গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে নিগারদের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। আগামী শনিবার একই মাঠে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি।
Comments