এখনো বাবার বাড়ি ফেরার অপেক্ষা করে ৫ বছরের সাদী

দুই ছেলের সঙ্গে আব্দুল্লাহ আল মামুন। ছবি: সংগৃহীত

বাবা আর কখনোই ফিরবে না কেন এই কথাটা পাঁচ বছরের ছোট্ট শেখ সাদীর মাথায় যেন কিছুতেই আসতে চায় না। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে সে। বাবা আসবে, তার জন্য চকলেট নিয়ে বাড়ি ফিরবে।

'যতবার সাদী ওর বাবার কথা জানতে চায় আমাদের বুকটা কষ্টে ফেটে যায়। আমরা কোনো জবাব দিতে পারি না, কী জবাব দেব,' বলছিলেন সাদীর দাদী জহুরা খাতুন

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বিজয় মিছিলে গুলিতে নিহত হন জহুরা খাতুনের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন।

নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার বটতলা গ্রামের বাসিন্দা মামুন। মা জহুরা খাতুন বলেন, পরিবারের চরম দারিদ্র্যতার কারণে খুব বেশিদূর পড়ালেখা করাতে পারেননি ছেলেকে। স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়তে পেরেছিল মামুন। তারপর সংসারের হাল ধরতে ঢাকায় যায় কাজের খোঁজে।

বহু চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে নারায়ণগঞ্জে সোয়েটার কারখানায় কাজ করত। বিয়ের পর পরিবার নিয়ে থাকত সেখানেই।

গত ৫ আগস্ট বিকেলে যাত্রাবাড়ীতে বিজয় সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন মামুন। শান্তিপূর্ণ সেই মিছিল সহিংসতায় রূপ নেয়। বিক্ষোভকারী আর পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। হঠাৎ মামুনের পিঠে লাগে তিনটা গুলি। দ্রুত স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও পরদিন তার মৃত্যু হয়।

মামুনকে দাফন করা হয়েছে তার গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে।

গাজীপুরের একটি সোয়েটার কারখানায় কাজ করেন মামুনের বড় ভাই মো. ওয়ালিউল্লাহ। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা একেবারে শেষ হয়ে গেছি। গত চার মাসে আমরা দুইটা মৃত্যু দেখেছি পরিবারে। বাবার মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ছোট ভাইকেও কবর দিতে হলো।'

মামুনের মৃত্যুর পর তিন শিশু সন্তান নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন মামুনের স্ত্রী সাবিনা আক্তার।

বড় মেয়ে ১০ বছরের সাদিয়া আক্তার মানসিক অসুস্থতায় ভুগছে। নিয়মিত চিকিৎসার দরকার হয় মেয়ের জন্য। আর আছে পাঁচ বছরের সাদী আর চার মাসের শেখ ফরিদ। তিন সন্তানকে নিয়ে গ্রামেই থাকছেন সাবিনা। রোজকার খরচ মেটাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে পরিবারটিকে।

মামুনের স্ত্রী সাবিনা বলেন, 'আমার তো কোনো সঞ্চয় নাই। ছেলেমেয়েদের নিয়ে কীভাবে থাকব, কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না। গ্রামে এসে থাকছি একটা আশ্রয় জুটেছে, কিন্তু আমার ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের জন্য কিছুই নেই আমার কাছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Postgrad doctors block Shahbagh demanding stipend hike

The blockade resulted in halt of traffic movement, causing huge suffering to commuters

1h ago