রিজার্ভ বাড়াতে ‘ভুয়া’ ডলার বাণিজ্য!

গত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের মধ্যে ৫৫০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য চুক্তি হয়। সেই অনুসারে ইসলামী ব্যাংক তারল্য সংকট মেটাতে ৫৫০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ছয় হাজার ৪৯০ কোটি টাকা নিয়েছিল।

আপাতদৃষ্টিতে চুক্তিটিকে উভয় পক্ষের জন্য ভারসাম্যপূর্ণ বলে মনে হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের নথিতে দেখা যায়, মাত্র ১০০ মিলিয়ন ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। বাকি ৪৫০ মিলিয়ন ডলার ১১ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংককে দেওয়া হয়নি।

দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিষয়টি ধরা পড়ে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অভিযোগ—সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ইসলামী ব্যাংককে সুযোগ করে দিতে এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

অভিযোগ উঠেছে—এর ফলে শেষ পর্যন্ত লাভবান হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের তৎকালীন নিয়ন্ত্রক বিতর্কিত এস আলম গ্রুপ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এ ঘটনাকে 'অনাকাঙ্ক্ষিত' আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এই টাকা সমন্বয় করা হয়েছে। অন্যদিকে, দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নথি অনুসারে, আবদুর রউফ তালুকদার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থাকাকালে গত ৩ জুলাই ৫৫০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ইসলামী ব্যাংকে ছয় হাজার ৪৯০ কোটি টাকা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কাগজে-কলমে রিজার্ভে যোগ হয় ৫৫০ মিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ডলার কিনেছে ১১৮ টাকা দরে।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাই শেষে রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ১১ আগষ্ট বাকি ৪৫০ মিলিয়ন ডলার সমন্বয়ের উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। এতে ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাব থেকে ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ পাঁচ হাজার ৩১০ কোটি টাকা কেটে নেওয়া হয়।

এ কারণে ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাবের ব্যালেন্স আবারও নেতিবাচক হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মো. কবির আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাবেক গভর্নরের নির্দেশনা মেনে চুক্তিগুলো করা হয়েছিল। পাওনা পরিশোধ না করায় ইসলামী ব্যাংককে তিন মিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয়েছে।'

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ডেইলি স্টার একাধিকবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

প্রতিবেদনটি তৈরির আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হকের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

মন্তব্যের জন্য ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা ও পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকেও পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এটা অপ্রত্যাশিত। ইতোমধ্যে বকেয়া সমন্বয় করা হয়েছে।

'দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া উচিত' উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরি বলেন, 'অতীতের অনেক অনিয়ম এখন বেরিয়ে আসছে। কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষায় অনৈতিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত।'

যারা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের দ্রুত শাস্তি দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
International Crimes Tribunal 2 formed

Govt issues gazette notification allowing ICT to try political parties

The new provisions, published in the Bangladesh Gazette, introduce key definitions and enforcement measures that could reshape judicial proceedings under the tribunals

2h ago