আমাকে ভোট না দিলে ইসরায়েল ধ্বংস হবে: ট্রাম্প

নিউইয়র্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি (৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪)
নিউইয়র্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি (৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪)

কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলে ইসরায়েলের অস্তিত্ব বিলীন হবে। এমনটাই দাবি করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

গতকাল বৃহস্পতিবার রিপাবলিকান পার্টির ইহুদি ধর্মাবলম্বী সদস্যদের এক জমায়েতে দেওয়া ভার্চুয়াল বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, 'হাজারো বছর ইসরায়েল যাতে টিকে থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে আমি আপনাদের সঙ্গে কাজ করব।'

লাস ভেগাসে আয়োজিত এই সম্মেলনে দেওয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ট্রাম্প আরও বলেন, 'তিনি (কমলা) প্রেসিডেন্ট হলে ইসরায়েলের অস্তিত্ব থাকবে না।'

ইহুদি ভোটার আকৃষ্টের কৌশল

আব্রাহাম অ্যাকর্ডে সাক্ষরের পর নেতানিয়াহু ও তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স
আব্রাহাম অ্যাকর্ডে সাক্ষরের পর নেতানিয়াহু ও তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স

সম্প্রতি ইহুদি ধর্মাবলম্বী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ট্রাম্প বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, তার এই হুশিয়ারি সেই উদ্যোগের অংশ।

মধ্যপ্রাচ্য প্রসঙ্গে ইসরায়েলপন্থি নীতিমালা অনুসরণের আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও ইহুদি ভোটাররা ঝাঁকে ঝাঁকে তার শিবিরে যোগ দিচ্ছেন না—এ বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির দিকে ইঙ্গিত করে ট্রাম্প বলেন, 'আমি বুঝতে পারি না, কী ভাবে তাদেরকে কেউ সমর্থন করতে পারে। এবং এ কথাটি আমি বারবারই বলি—আপনি যদি ইহুদি হয়েও তাদেরকে সমর্থন করেন, তাহলে আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে এবং এর চিকিৎসা প্রয়োজন।'

'তারা (ডেমোক্র্যাটরা) আপনাদের প্রতি অত্যন্ত বিরূপ আচরণ করেছেন', যোগ করেন ট্রাম্প।

ইহুদিদের মধ্যে নিজের সমর্থনের মাত্রা নিয়ে ট্রাম্প বলেন, 'খোলাখুলি ভাবে বলতে গেলে, চার বছরে অন্য যেকোনো প্রেসিডেন্টের চেয়ে ইসরায়েলের জন্য আমি অনেক বেশি কাজ করেছি। তা সত্ত্বেও মাত্র ২৫-২৬ শতাংশ ইহুদি আমাকে ভোট দিয়েছিলেন। এ বছর আশা করছি ৫০ শতাংশ ভোট পাবো।'

সর্বশেষ জুনে মার্কিন ইহুদিদের মধ্যে জরিপ চালানো হয়। এই জরিপে ট্রাম্পের প্রতি ২৪ শতাংশ ইহুদি ভোটার সমর্থন জানান। তবে তখনো তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জো বাইডেন।

ইহুদি মানেই ইসরায়েলি, ইসরায়েলি মানেই ইহুদি!

ফ্লোরিডায় মার আ লাগোতে নেতানিয়াহুকে আপ্যায়ন করেন ট্রাম্প। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
ফ্লোরিডায় মার আ লাগোতে নেতানিয়াহুকে আপ্যায়ন করেন ট্রাম্প। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

সমালোচকরা বলেন, প্রায়ই ট্রাম্প মার্কিন ইহুদি ও ইসরায়েলিদের একই কাতারে রেখে বক্তব্য দেন। এ ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে গতকাল তিনি মার্কিন ইহুদিদের উদ্দেশ্যে বলেন, 'এ মুহূর্তে আপনাদেরকে যার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, তা ভয়াবহ। বিশেষত মৃত্যু, ধ্বংস, অপচয় ও একটি সভ্যতাকে ধ্বংসের উদ্যোগ।' তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না জানালেও উপস্থিত ইহুদিরা করতালি দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন।

'তারা (হামাস) ঢুকে পড়লে আপনারা (ইসরায়েলিরা) বাঁচবেন না , আর তারা (ডেমোক্র্যাট) ঢুকে পড়লে, মার্কিনিরাও বাঁচবে না', বলেন ট্রাম্প।

তিনি সরকারপ্রধান হলে ইহুদিরা নিজেদের নিরাপদ ভাবে—এমন দাবি করেন ট্রাম্প। তবে তথ্য-উপাত্ত মতে, তার শাসনামলে ইহুদিবিদ্বেষ ও এ সংক্রান্ত অপরাধের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল।

তিনি দাবি করেন, 'কমলা হ্যারিস জিতলে জঙ্গিরা পবিত্র ভূমি থেকে ইহুদিদের বের করে দেওয়ার নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম শুরু করবে'।

বক্তব্যের শেষে ট্রাম্প বলেন, 'আমি যখন প্রেসিডেন্ট হব, তখন যেসব বিদেশি জিহাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও হামাসকে সমর্থন করে, তাদেরকে আমেরিকা থেকে বের করে দেব।'

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রতিক্রিয়া

নিউ হ্যাম্পশায়ারে কমলা হ্যারিস। ছবি: রয়টার্স
নিউ হ্যাম্পশায়ারে কমলা হ্যারিস। ছবি: রয়টার্স

তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ট্রাম্পের এসব বক্তব্যের বিরোধিতা করে বিবৃতি প্রকাশ করেছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি।

হ্যারিস-ওয়ালজ প্রচারণা দলের মুখপাত্র মরগান ফিঙ্কেলস্টেইন বলেন, 'ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে ইহুদি আমেরিকানদের অবমাননা করেছেন। তিনি গর্বের সঙ্গে নব-নাৎসিদের সঙ্গে রাতের খাবার খেয়েছেন এবং তিনি এমন একজন মানুষ, যে মনে করে এডলফ হিটলার "কিছু ভালো কাজ করেছেন"। তিনি নানা সময়ে নব-নাৎসিদের প্রশংসাও করেছেন।'

তিনি আরও জানান, 'যতক্ষণ ইসরায়েল তার ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি করবে, ততক্ষণ ট্রাম্প তাদের পাশে থাকবেন। এ বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেছেন এবং আগেও তার এরকম আচরণের নজির রয়েছে।'

'অপরদিকে, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা এ বিষয়টি নিয়ে একেবারেই অকপট। তিনি আজীবন ইসরায়েলি রাষ্ট্রের সমর্থক ছিলেন, যেটি ইহুদিদের গণতান্ত্রিক স্বদেশ। তিনি ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং সব সময়ই তাদের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে এসেছেন। একইসঙ্গে, কমলা দেশে ও দেশের বাইরে ইহুদিবিদ্বেষ দমনে সংকল্পবদ্ধ এবং প্রেসিডেন্ট হলেও তিনি একই উদ্যোগ অব্যাহত রাখবেন', যোগ করেন ফিঙ্কেলস্টেইন।

ইতোমধ্যে কমলা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলপন্থি মধ্যপ্রাচ্য নীতিমালা থেকে সরবেন না তিনি। পূর্বসূরি বাইডেন যেভাবে এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছেন, সে ধারা অব্যাহত রাখবেন বলে নিশ্চিত করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস।

Comments

The Daily Star  | English

Will protect investments of new entrepreneurs: Yunus

Yunus held a meeting with young entrepreneurs at the state guest house Jamuna where15 male and female entrepreneurs participated

4h ago