ডিসিবিহীন ২১ জেলা
পঁচিশ জেলা থেকে জেলা প্রশাসক (ডিসি) প্রত্যাহারের ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও ওইসব জেলায় ডিসি নিয়োগ দেয়নি সরকার।
জেলায় সিভিল প্রশাসনের প্রধান হলেন জেলা প্রশাসক। স্থানীয় প্রশাসন তদারকি এবং জনসেবা কার্যকরভাবে নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তারা। জেলা পরিষদ ও পৌরসভার দায়িত্ব থাকায় ডিসিদের এখন অতিরিক্ত দায়িত্বও পালন করতে হয়।
এখন এই ২১টি জেলার কাজ সামলাতে হচ্ছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের। অন্যদিকে এবং যে চার জন ডিসিকে বদলি করা হয়েছে বন্যার কারণে তাদের জেলাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের আগের কর্মস্থলে থাকতে হচ্ছে।
সূত্র জানায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এখনই জেলাগুলোতে ডিসি নিয়োগ দিতে পারছে না কারণ এ কাজের জন্য উপযুক্ত কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করতে সময় প্রয়োজন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, নতুন ডিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিগত সরকারের তৈরি করা কর্মকর্তাদের তালিকা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবহার করতে চায় না।
ওই কর্মকর্তা বলেন, হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের তৈরি করা তালিকাটি ওই সরকারের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের নিয়ে তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করা হয়।
সাধারণত, বিদ্যমান ডিসিদের বদলির আগে সরকার প্রথমে নতুন ডিসি নিয়োগ করে। কখনো কখনো, দুটো একসাথে করা হয়।
এই কর্মকর্তা বলেন, 'তবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বদলির তালিকা তৈরি না করেই প্রায় অর্ধেক জেলার ডিসিদের বদলির নির্দেশ দিয়েছে।'
সরকার গত ২০ আগস্ট ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও কক্সবাজারসহ জেলাগুলো থেকে ডিসিদের প্রত্যাহার করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও দপ্তরে সংযুক্ত করে।
বন্যার কারণে চাঁদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও মৌলভীবাজারের ডিসিরা তাদের নিজ নিজ স্টেশনে অবস্থান করছেন।
৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর অনেক ডিসি ও ইউএনও অফিসে হামলা হয়। এমনকি কিছু কর্মকর্তাকে প্রাণের ভয়ে তাদের কর্মস্থল ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছিল।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরপরই, অনেক ডিসি বদলি হতে চেয়েছিলেন এবং কর্মকর্তারা, যারা বিশ্বাস করেন যে আওয়ামী লীগের শাসনামলে তাদের একপাশে সরিয়ে রাখা হয়েছিল তারা ডিসি হওয়ার জন্য লবিং শুরু করেছিলেন।
ডিসিদের জেলা পরিষদ ও পৌরসভা প্রশাসকের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ার একদিন পর সরকার তাদের মধ্যে ২৫ জনকে বদলি করেন।
সরকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া পরিষদের গভর্নিং বডিও ভেঙে দিয়েছে।
ফলে তাদের তদারকি ও নতুন কমিটি গঠনের দায়িত্ব পড়ে ডিসিদের ওপর।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জেলা প্রশাসক বলেন, 'এখন যেহেতু কোনো সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি নেই, তাই বিভিন্ন মহল থেকে হুমকিধমকিও আমাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আমাদের আসলে অনেক কিছু সামলাতে হচ্ছে।'
'তাছাড়া, প্রতিনিয়ত বদলির ভয় থাকে। আমাদের পালা কখন আসবে আমরা জানি না, বলেন এই কর্মকর্তা।
বেশ কয়েকজন ডিসি বলেছিলেন যে তারা 'বদলির সময়' নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না কারণ এটি তাদের স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তির জন্য বিষয়টিকে জটিল করে তুলতে পারে। আর এতে কিছু প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান তারা।
একজন ডিসি, যিনি সম্প্রতি তার কর্মস্থল ছেড়েছেন, ডেইলি স্টারকে বলেন তারা ইচ্ছাকৃতভাবে একটি স্কুল পরিচালনা কমিটি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি যদি একটি কমিটি করতাম তবে এটি একটি নতুন বিতর্ক তৈরি করত কারণ আমাকে পূর্ববর্তী সরকারের অনুগত বলা হয়েছিল।
আরও একজন ডিসি বলেন, 'ডিসিদের বড় মাপের বদলির ফলে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আতঙ্কিত। বদলির ভয়ে রুটিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। আসলে যাদের বদলি করা হয়েছে তারা এখন ভালো আছেন।'
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ক্রীড়া সংস্থার কমিটি গঠনের বিষয়ে তারা প্রতিদিন খোঁজ খবর নেন। তবে, "বদলি নিয়ে অনিশ্চয়তার" কারণে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
নতুন ডিসি নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেছুর রহমান বলেন, দ্রুত নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে।
Comments