মজুমদারের কবল মুক্ত হলো এক্সিম ব্যাংক

নজরুল ইসলাম মজুমদার, এক্সিম ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক,

দেশের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মজুমদারের কবল থেকে মুক্তি মিলল শরিয়াহভিত্তিক এক্সিম ব্যাংকের। গতকাল ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন বোর্ডে নেই নজরুল ইসলাম মজুমদার।

১৯৯৯ সালে শাহজাহান কবিরের সঙ্গে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। ২০০৭ সাল থেকে তিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সেই বোর্ডের সদস্য ছিলেন তার স্ত্রী নাসরিন ইসলাম। তবে পুনর্গঠিত পাঁচ সদস্যের বোর্ড থেকে তার স্ত্রীকেও বাদ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে, ২০২২ সালের নভেম্বরে এই দম্পতির শেয়ারের একটি অংশ তাদের সন্তান ওয়ালিদ ইবনে ইসলাম ও আনিকা ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর ব্যাংকে তাদের শেয়ারের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ শতাংশ।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দেয়। এরপর তাকে এক্সিম ব্যাংকের বোর্ড থেকে সরিয়ে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে, তিনি এখনো বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের ফোরাম বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকের চেয়ারম্যান আছেন। ২০০৯ সাল থেকে এই পদ তার দখলে। আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে নজরুল ইসলাম মজুমদার বিভিন্ন সুবিধা আদায়ের জন্য এই পদকে ব্যবহার করেছেন।

তিনি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান। প্রভাবশালী এই ব্যবসায়ী ব্যাংকিং খাতের গুরুত্বপূর্ণ নীতি পরিবর্তনে তার প্রভাব খাটিয়েছেন। যেন নীতিগুলো তার ব্যবসার পক্ষে যায়।

এছাড়া নিয়ম-কানুন পাশ কাটিয়ে তিনি ঋণও নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

যেমন- ২০২১ সালে জনতা ব্যাংকের ৬৫৪তম বোর্ড সভায় নাসা গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানের জন্য ২৬১ কোটি টাকার সুদ মওকুফ সুবিধার অনুমোদন দেওয়া হয়। এই দুই প্রতিষ্ঠান হলো- নাসা তাইপেই স্পিনার্স ও নাসা স্পিনার্স।

তবে জনতা ব্যাংকিং নিয়ম লঙ্ঘন করে সুদ মওকুফের অনুমোদন দেওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রথমে এই সুবিধা বাতিল করে। কিন্তু পরে বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয় বাংলাদেশ ব্যাংককে।

এদিকে এক্সিম ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে দিয়ে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ওই চিঠিতে বলা হয়, আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ এর ৪৫ ধারা অনুযায়ী নতুন বোর্ড গঠন করা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর পর্যন্ত এক্সিম ব্যাংকের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৯৩৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৬২৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। তবে ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ আরও অনেক বেশি।

অন্যদিকে মো. নজরুল ইসলাম স্বপন, মো. নুরুল আমিন ও অঞ্জন কুমার সাহাকে নতুন বোর্ডে রাখা হয়েছে। স্পন্সর পরিচালক নজরুল ইসলাম স্বপনের ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং অঞ্জন কুমার সাহার ২ শতাংশ শেয়ার আছে। আরেক স্পন্সর পরিচালক মো. নুরুল আমিনেরও ২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

এছাড়া নতুন বোর্ডে দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এস এম রেজাউল করিম ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট খন্দকার মামুন।

উল্লেখ্য, গত সরকার আরেক সংকটাপন্ন পদ্মা ব্যাংককে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পরে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলে স্থগিত করা হয়।

এক্সিম ব্যাংক ছাড়াও অতি সম্প্রতি ন্যাশনাল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন করেছে ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

আগামী সপ্তাহে আরও কয়েকটি দুর্বল ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠনের পরিকল্পনা আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

 

Comments

The Daily Star  | English
special security for foreign investors in Bangladesh

Police, Bida launch special security measures for foreign investors

Held meeting with officials of foreign companies, introduced dedicated emergency contact line

3h ago