আনন্দবাজার প্রতিবেদন

অর্থের বিনিময়ে ‘প্রভাবশালী’ বাংলাদেশিদের ভারতে আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ

প্রতীকী ছবি

গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে 'প্রভাবশালী' বাংলাদেশিদের অনেকেই অর্থের বিনিময়ে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছেন—এমন অভিযোগ উঠেছে।

আজ বুধবার ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা তাদের অনলাইন সংস্কারে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বাংলাদেশ থেকে 'নিরাপদে' ভারতে পৌঁছে দিতে একাধিক চক্র কাজ করছে। আশ্রয়প্রার্থী ব্যক্তির আর্থিক সঙ্গতি ও সামাজিক পরিচিতি বুঝে টাকা নিচ্ছে চক্র।

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ইতোমধ্যে চক্রের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে এবং বাকিদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান চলছে, জানানো হয় প্রতিবেদনে।

আনন্দবাজার জানায়, অর্থের বিনিময়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্য সপরিবারে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।

তাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ওই সংসদ সদস্য মেহেরপুর উপজেলার কাশারীবাজার থেকে ভারতের সীমান্তবর্তী কাথুলিবাজারে যোগাযোগ করেছিলেন।

নদিয়ার করিমপুর-২ ব্লকের রাউতবাটি গ্রাম থেকে তার কাছে মাথাপিছু এক লাখ রুপি করে দর জানানো হয়। এ ছাড়া, তারা যত দিন 'নিরাপদ আশ্রয়ে' থাকবেন, তত দিন সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের নজর এড়িয়ে থাকতে মাসে ১০ লাখ রুপি করে দিতে হবে।

দর কষাকষির পরে সীমান্ত পার হতে মাথাপিছু ৭০ হাজার এবং আশ্রয়ের জন্য মাসে পাঁচ লাখ রুপিতে চুক্তি হয়। এক দিন অপেক্ষার পর কাথুলি ও কুলবেড়িয়া হয়ে কাঁটাতারের বেড়া নেই ভারতের এমন একটি গ্রামে আশ্রয় নেন ওই সংসদ সদস্য ও তার পরিবার।

বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ চক্রের দুজন সদস্য ২৪ ঘণ্টায় এই 'অপারেশন' সফল করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

আনন্দবাজার কাথুলিবাজার এলাকার ব্যবসায়ী শেখ নাজিমের (পরিবর্তিত নাম) বক্তব্য প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, 'আমরা এসব এলাকা হাতের তালুর মতো চিনি। কোথায় কাঁটাতার আছে, কোথায় নেই, সব মুখস্থ। কোথায় পাচারকারী কাঁটাতার কেটে রেখেছে, সেটাও জানি।'

নাজিম বলেন, 'এই বর্ষায় ভৈরব নদী টইটম্বুর। নদী পুরো খোলা। এ দেশ থেকে যারা ও দেশে (ভারতে) যেতে চাইছে, পরিচিত আর আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে শুধু সীমান্ত পার করিয়ে দিচ্ছি আমরা। বাকি দায়িত্ব ওদের।'

পারাপারে কে কত নিচ্ছে জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী বলেন, 'ঝুঁকি দুপক্ষেরই রয়েছে। তাই টাকার ভাগাভাগিও সমান সমান।'

পশ্চিমবঙ্গের দেবাংশু (পরিবর্তিত নাম) বলেন, 'কাঁটাতার পার হয়ে আমাদের চাষের জমি আছে। রোজ যাতায়াত করি। ওদিক থেকে বেশ কয়েকজন পরিচিত, আত্মীয়-স্বজন ভারতে আসার জন্য মোটা টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। আমরা শুধু পার করে এখানে নিয়ে এসেছি। রাখার দায়িত্ব আমাদের নয়। সেটা দেখে অন্য লোক।'

বিএসএফ-পুলিশের নজর কীভাবে এড়াচ্ছেন জানতে চাইলে দেবাংশু বলেন, 'বিএসএফ এখন খুব সজাগ, সেটা ঠিক। তবে গ্রামে আমাদের সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক। তাই কাউকে আশ্রয় দিয়েছি জানলে কেউ মুখ খুলবে না।'

কাজটা অনৈতিক—আনন্দবাজার প্রতিবেদক দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওই যুবক বলেন, 'ও দেশ থেকে যারা আসছে, তারা তো সত্যিই বিপদে পড়েছে। বিপদে মানুষকে আশ্রয় দেওয়া তো মানুষেরই কর্তব্য!'

এমন মন্তব্য করায় আনন্দবাজার দেবাংশুকে 'দার্শনিক' আখ্যা দেয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের 'ঘনিষ্ঠ' ও সমর্থকরা এখন বাংলাদেশের আন্দোলনকারীদের নজরে। হাসিনার আমলের অনেক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেওয়া হয়েছে।

রাজনীতিতে যুক্ত না এমন মানুষদেরও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দেশ ছাড়ার অনুমতি দিচ্ছে না বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দেশের ভাবমূর্তি ঠিক রাখতে সংখ্যালঘুদের দেশ ছাড়ার ক্ষেত্রেও বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। তার পরেও অনেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাই যে কোনোভাবে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে চাচ্ছেন, বলা হয় প্রতিবেদনে।

ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশিদের নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী গ্রামের বাসিন্দা এবং বিএসএফ শঙ্কিত উল্লেখ করে আরও বলা হয়, ইতোমধ্যে টহল জোরদার করা হয়েছে।

বিএসএফ দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি একে আর্য বলেন, অনুপ্রবেশের সব রকম তথ্য রাখার চেষ্টা করছে বিএসএফ। বেশ কয়েকটি অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকিয়েছে জওয়ানরা, বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে সীমান্ত এলাকায় এই মুহূর্তে কোনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতির খবর নেই।

অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কতটা সক্রিয় জানতে চাইলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) উপমহাপরিচালক (যোগাযোগ) কর্নেল শফিউল আলম পারভেজ আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, 'যারা রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেআইনি এবং অন্যায় কাজ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

'বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযুক্তেরা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে। বাংলাদেশে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ও দেশে যাতে কোনোভাবে রাজনৈতিক আশ্রয় না পায়, তার জন্য আমরা ভারত সরকারকে অনুরোধ জানাব,' আনন্দবাজারকে বলেন শফিউল আলম।

গত ৭ আগস্ট বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার বিজয় পরবর্তী পরিস্থিতিতে কিছু দুর্নীতিবাজ ও দুষ্কৃতিকারী ব্যক্তি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এই অবস্থায় কেউ যাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে সে জন্য সীমান্তে বিজিবির টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যাওয়া রোধে +৮৮০১৭৬৯-৬০০৬৮২ এবং +৮৮০১৭৬৯-৬২০৯৫৪ নম্বরে ফোন করে তথ্য দিয়ে সহায়তা করার অনুরোধ জানায় বিজিবি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, সীমান্তে বিজিবির টহল ও গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধির ফলে ইতোমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ আইসিপি থেকে একজন, যশোরের বেনাপোল আইসিপি থেকে একজন ও চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আইসিপি থেকে দুজনকে আটক করা হয়েছে।

গত ১০ আগস্ট আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিজিবি জানায়, সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, সীমান্ত নিরাপত্তায় বিজিবি কাজ করছে।

এতে আরও বলা হয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর সীমান্তবর্তী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা পরিদর্শন, তাদের সঙ্গে মতবিনিময় ও সম্প্রীতি সমাবেশের আয়োজন করেছে বিজিবি। এছাড়া সংখ্যালঘু অধ্যুষিত সীমান্তবর্তী এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Beximco workers' protest turns violent in Gazipur

Demonstrators set fire to Grameen Fabrics factory, vehicles, vandalise property

2h ago