বন্যায় প্লাবিত ফেনী, উদ্ধারে যাচ্ছে সেনাবাহিনী-কোস্টগার্ড

ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গতরাত থেকে প্লাবিত হয়েছে ছাগলনাইয়া উপজেলার অধিকাংশ এলাকা। 

এই তিন উপজেলায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। রাস্তা-ঘাট ও ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে, পুকুরের মাছ গেছে ভেসে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। 

সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ড সদস্যরা আজ বুধবার সকালে কুমিল্লা থেকে স্পিডবোট নিয়ে রওনা হয়েছেন বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার।

স্থানীয়দের কাছ থেকে পরশুরামে একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ আছে।

কয়েকটি ডিঙ্গি নৌকায় পানিবন্দিদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য। উদ্ধার কাজে এগিয়ে এসেছে ফায়ার সার্ভিস।

ছবি: সংগৃহীত

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

জেলা প্রশাসন, পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, তিন উপজেলায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে ও হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন।

গত ২ জুলাই থেকে এই অঞ্চলে এবারসহ তৃতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে। ২ আগস্ট দ্বিতীয় দফা বন্যায় বেড়িবাঁধের ১২টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছিল। এবার বাঁধের সেই ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে তিন উপজেলায় ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। 
 
অনেক এলাকায় গতরাত থেকে বিদ্যুৎ নেই। অনেকে রান্নাও করতে পারছেন না।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরশুরাম উপজেলায় বন্যায় আগেই বেড়িবাঁধের ১২টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছিল। গত কয়েকদিনের অতিবৃষ্টি এবং ভাঙনের স্থানগুলো দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে পরশুরাম উপজেলায় পৌরসভা এবং তিন ইউনিয়নের প্রায় ৯৫ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।'

তিনি বলেন, 'গতরাত থেকে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় ১০০ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। ৫০০ পরিবারকে শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। আরও ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার এবং ৫০ টন চাল মজুদ আছে।'

উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহযোগিতা চেয়েছেন বলে জানান তিনি।

উদ্ধারে নেমেছে বিজিবি। ছবি: সংগৃহীত

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মুহুরি, সিলোনিয়া ও কহুয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফুলগাজী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন। বহু বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে।'

মুহুরি ও সিলোনিয়া নদীর বাধে নতুন ফাটল না দেখা দিলেও আগের ফাটল দিয়ে এবং বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বর্তমানে ফেনী-বিলোনিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের ফুলগাজী ও পরশুরাম অংশ প্লাবিত হওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে উপজেলার সড়কপথে যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। 

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি থাকলেও প্রয়োজন আরও বেশী।

ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও ছাগলনাইয়া পৌর এলাকার বেশীরভাগ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সব ধরনের গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে মানুষ।

জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার বলেন, 'বন্যা পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে। পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করছেন। তবে প্রয়োজনের তুলনায় যা খুব সামান্য।'

এদিকে, ফেনী জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বন্যাদুর্গত মানুষদের উদ্ধারে নেমেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ফেনী ব্যাটালিয়ন (৪ বিজিবি)।

বিজিবি এক বিবৃতিতে জানায়, গত দুই দিনের ভারী বর্ষণে মুহুরি নদীর বাঁধ ভেঙে ফেনী জেলার পরশুরাম, ছাগলনাইয়া এবং ফুলগাজী উপজেলার প্রায় ৮০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে বিজিবি নৌকা ও ট্রলারের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি উদ্ধারকৃতদের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও জরুরি শুকনা খাবার বিতরণ করছে।

বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিজিবি উদ্ধার ও অন্যান্য সহায়তামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে বলেও জানানো হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
remittance earning of Bangladesh

Remittance rises 30% in July

Migrants sent home $2.47 billion in the first month of the current fiscal year

6h ago