কর্ণফুলীর তলদেশে মিললো ‘১৫০ বছরের পুরোনো ব্রিটিশ’ জাহাজ

বন্দরের ৬ ও ৭ নম্বর জেটির মধ্যবর্তী ডাঙ্গারচর এলাকায় নদীর তলদেশে মিলেছে জাহাজটি। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বন্দরের চ্যানেল সংস্কার করার লক্ষ্যে কর্ণফুলী নদী খনন করতে গিয়ে মিলেছে ১৫০ বছরের পুরোনো বাণিজ্যিক জাহাজের সন্ধান। বন্দরের ৬ ও ৭ নম্বর জেটির মধ্যবর্তী ডাঙ্গারচর এলাকায় নদীর তলদেশে মিলেছে জাহাজটি। উদ্ধার হওয়া জাহাজে পাওয়া গেছে রৌপ্যমুদ্রা, রূপার জিনিসপত্র, দূরবীন। সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, এই জাহাজটি প্রায় ১৫০ বছরের পুরোনো।

প্রায় ৩৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের জাহাজটি কয়লাচালিত ইঞ্জিন দিয়ে পরিচালিত হতো। জাহাজে বিপুল পরিমাণ কয়লা মজুদ রয়েছে। নদীর তলদেশ থেকে কেটে কেটে জাহাজটির দুটি অংশ উদ্ধার করা হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। এখনও এর একটি অংশ নদীর তলদেশে রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের ৬ ও ৭ নম্বর জেটির মধ্যবর্তী স্থানে খনন কাজ করার সময় ডুবন্ত একটি জাহাজের সন্ধান পায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই জাহাজটি উদ্ধার ও অপসারণ করার জন্য দুটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। পরে বন্দর কর্তৃপক্ষ হিরামনি স্যালভেজ লিমিটেড নামে একটি কোম্পানিকে দায়িত্ব দিলে তারা জাহাজটি উদ্ধার করে।

হিরামনি স্যালভেজ লিমিটেডের কর্ণধার মো. আবুল কালাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্দরের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী আমরা এই জাহাজটি উদ্ধার ও অপসারণ করেছি। এ ছাড়াও নদীতে আরও দুটি ডুবন্ত জাহাজ রয়েছে। সেই দুটিও উদ্ধার ও অপসারণে কাজ চলমান রয়েছে। ডুবন্ত জাহাজগুলো অপসারণ করা গেলে চট্টগ্রাম বন্দর তথা কর্ণফুলী চ্যানেল নিরাপদ ও গতিশীল হবে।'

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন

কর্ণফুলী নদীর তলদেশ থেকে উদ্ধার হওয়া জাহাজটি প্রত্নতত্ত্ব ও ইতিহাসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাহাজটিতে তামা, পিতল ও রূপার তৈরি থালা-বাটি, হাড়ি-পাতিল, গ্লাস, পানির পাত্র, চামচ, বিভিন্ন নকশা করা শৌখিন জিনিসও পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও রয়েছে মোমবাতিদানি, ফুলের টব, হ্যারিকেন ও কুপিবাতি, হাতির দাঁত, দূরবীনসহ অনেক জিনিসপত্র।

উদ্ধার হওয়া জাহাজে পাওয়া গেছে রৌপ্যমুদ্রা। ছবি: সংগৃহীত

এসব উদ্ধারকৃত জিনিসের ধরন দেখে ধারণা করা যায়, জাহাজটি ব্রিটিশ আমলের। ধারণা করা হচ্ছে, ভারত উপমহাদেশে জাহাজটি বাণিজ্য করতে এসে কর্ণফুলী নদীর এই স্থানে ডুবে যায়।

জাহাজটির উদ্ধার কাজে নিয়োজিত সিনিয়র ডুবুরি মো. জহির বলেন, 'জাহাজটি নদীর তলদেশের ৬০ ফুট গভীরে ছিল। এই জাহাজের কারণে নদীতে পলি জমে চর জেগে উঠেছে। পরে আমরা ড্রেজিং করে জাহাজটি উন্মুক্ত করি। অর্ধেক অংশ উদ্ধারের জন্য ৪টি স্যালভেজ বার্জ নিয়োজিত করি। বার্জের মাধ্যমে উদ্ধার করা অংশটি নদীর তীরে আনার পর আমরা বিভিন্ন জিনিসপত্র দেখে নিশ্চিত হই এটি ব্রিটিশ আমলের জাহাজ।'

হিরামনি স্যালভেজ কোম্পনির পরিচালক জিহাদ হোসেন বলেন, 'নিজস্ব অর্থায়নে আমরা ডুবন্ত এই জাহাজটি উদ্ধার ও অপসারণ করেছি। বন্দরের এত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এত বছর ধরে এই জাহাজটি ডুবন্ত অবস্থায় ছিল। ফলে পলি মাটি জমে বন্দরে চলাচলরত জাহাজগুলোর জন্য হুমকির কারণ হয়ে উঠেছিল এটি।'

তিনি আরও বলেন, 'জাহাজে পাওয়া রৌপ্যমুদ্রাগুলো ১৮৬২ থেকে ১৮৮২ সালের তৈরি। এ থেকে আমরা ধারণা করছি, জাহাজটি ১৫০ বছরের পুরোনো।'

উদ্ধার হওয়া দূরবীন। ছবি: সংগৃহীত

তবে উদ্ধার হওয়া জিনিস তারা এখনও বিশেষজ্ঞ কাউকে দেখাননি বলে জানান জিহাদ হোসেন।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম বলেন, 'কর্ণফুলী চ্যানেলে ডুবন্ত জাহাজ উদ্ধারের জন্য আমরা হিরামনি স্যালভেজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছি। তারা সম্প্রতি অনেক পুরোনো একটি জাহাজ নদীর তলদেশ থেকে উদ্ধার এবং অপসারণ করেছে।'

চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের উপপরিচালক ড. আতাউর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভারতবর্ষে যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় তখন রানি ভিক্টোরিয়া এই উপমহাদেশের দায়িত্ব নিজ হাতে নেন ১৮৫৮ সালে। তখন রানি ভিক্টোরিয়া ভারতবর্ষের মানুষের কল্যাণে কাজ শুরু করেন। ভিক্টোরিয়ার শাসনামলের প্রথম দিকের মুদ্রা এগুলো। হয়তো জাহাজটি আরও পুরোনো।'

Comments

The Daily Star  | English

Yunus lands in Chattogram for day-long visit

He landed at Shah Amanat International Airport at 9:22am

1h ago