মুসলিম দুনিয়ার ভাস্কর্য সংস্কৃতি

অন্য ধর্মের প্রার্থনার প্রতিমা ভাঙা যে অপরাধ তা কাণ্ডজ্ঞান-সচেতন মুসলমান মাত্রই রাখেন। তার প্রমাণ পাওয়া যায়, যখন কোনো মন্দিরের প্রতিমা আক্রান্ত হয় তার প্রতিবাদগুলো দেখে, মুসলমানদের অবস্থান ও দরদ দেখে। কিন্তু ভাস্কর্যের বিষয়ে ইতিবাচক ধারনা বাংলদেশে পরিস্কার কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

এখন মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যকেও কেউ কেউ অপ্রয়োজনীয় মনে করছে। এগুলো যে আমাদের প্রেরণার বাতিঘর, ইতিহাসের সাক্ষী তা বোঝাতে পারলে আমাদের মধ্য থেকে কট্টরপন্থা দূর হয়ে যেত। সম্প্রতি ভাস্কর্য ভাঙাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাস্কর্য সম্পর্কে অনেকেই মত দিয়েছেন যে, ভাস্কর্য আর মূর্তি এক নয়।

বিশ্বের স্বনামধন্য শিল্পীদের দিয়ে প্রায় চারশর অধিক ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। এই শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন হেনরি মুর, জোয়ান মিরো, আলেকজান্ডার কাল্ডার, মাহা মাল্লুহ্ প্রমুখ। তিনি এর নাম দিয়েছেন 'ওপেন এ্যায়ার স্কাপচার মিউজিয়াম' বা 'উন্মুক্ত ভাস্কর্য জাদুঘর'।

এই মতের সঙ্গে অনেক ইসলামিক স্কলারও সম্মত হয়েছেন। যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সালাফি মতের অনুসারীরা শিল্পকলার সঙ্গে ইসলামের একটি বিরোধ দাঁড় করিয়েছেন। তাদের সৃষ্ট বৈরি পরিবেশের মধ্যেও মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে শিল্পকলার চর্চা থেমে থাকেনি। প্রায় প্রত্যেকটি দেশেই চর্চিত হয়েছে চিত্রকলা এবং ভাস্কর্য। এ দফায় মুসলিম দেশগুলোতে নির্মিত উল্লেখযোগ্য কিছু ভাস্কর্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাক—

সৌদি আরব

মুসলিমদের তীর্থস্থান সৌদি আরব। পবিত্র নগরী মক্কা এবং মদিনা এই দেশে অবস্থিত। প্রতি বছর অগণিত মুসলমান আসেন হজ্জ করতে। এখান থেকেই ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়েছে। সভ্যতার শুরু থেকে শিল্পকর্মের প্রতি মানুষের আলাদা একটা ঝোঁক লক্ষণীয়। দেশটির বিভিন্ন স্থানে পাঁচ শতাধিক ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে। দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী জেদ্দায় প্রায় চারশটি ভাস্কর্যের একটি জাদুঘর রয়েছে। এখানে আছে উটের দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য, মুষ্টিবদ্ধ হাত, হাংরি হর্স, মানব চোখ।  ১৯৭০ সালে জেদ্দার মেয়র মো. সাইদ ফার্সি জেদ্দার 'সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্প' গ্রহণ করেন।

বিশ্বের স্বনামধন্য শিল্পীদের দিয়ে প্রায় চারশর অধিক ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। এই শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন হেনরি মুর, জোয়ান মিরো, আলেকজান্ডার কাল্ডার, মাহা মাল্লুহ্ প্রমুখ। তিনি এর নাম দিয়েছেন 'ওপেন এ্যায়ার স্কাপচার মিউজিয়াম' বা 'উন্মুক্ত ভাস্কর্য জাদুঘর'। তিনি জেদ্দার কর্ণিশেখের সাথে ৭ বর্গকিলোমিটারের পার্ক জুড়ে ২০টি ভাস্কর্য প্রদর্শন করেন। যা স্থানীয়দের কাছে 'আল হামারা' নামে পরিচিত। এই ৪০০টি ভাস্কর্যের প্রায় সবকটিই ছিল বৈশ্বিক, সার্বজনীন, ঐতিহ্যবাহী আরবি ডিজাইন।

এর মধ্যে রয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ, প্রাণী, এবং বিভিন্ন বিষয়ের কিছু মূর্ত-বিমূর্ত ভাস্কর্য। কোন কোন ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে মসজিদের আঙিনাতেই। যেমন দেশটির নারী ভাস্কর মাহামাল্লুহ্-এর ভাস্কর্য 'ফুড ফর থট্‌স' স্থাপিত হয়েছে জেদ্দার 'আল আনানি' নামক মসজিদের সামনে। এটি স্টেনলেস স্টিল দিয়ে তৈরি। ২০১৫ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়, শেষ হয় ২০১৬ সালে।

ইন্দোনেশিয়া

সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক থেকে ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র। ইসলাম ধর্মাবলম্বীর প্রায় তের ভাগ বাস করে। বারোশ শতাব্দীতে ইন্দোনেশিয়ায় ইসলাম প্রবেশ করে। ষোলশ শতকের দিকে জাভা ও সুমাত্রার অধিবাসীরা ইসলামে দীক্ষিত হয়। ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার দ্বীপ রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৬ হাজার দ্বীপে মানুষ বসতি। এই ৬ হাজার দ্বীপের প্রায় প্রত্যেকটিতে স্থাপিত হয়েছে ভাস্কর্য। ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের বাদুংয়ের উসগাসান নির্মিত হয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয়  'গারুদা বিষ্ণু কাঞ্চন'। স্থাপন করেছে। সুমাত্রা, জাভা, সুলাওয়েসি, বোর্নিও ও নিউ গিনি পাঁচটি প্রধান দ্বীপ। চিত্রের ভাস্কর্যটি বালির ডেনপাসার এলাকায় অবস্থিত। প্রচুর ভাস্কর্য রয়েছে গোটা দেশজুড়েই। এর মধ্যে বালিতে ভাস্কর্যের সংখ্যা বেশি।

ইন্দোনেশিয়ার বেশ কয়েকটি স্থানে বড় পাথরের তৈরি মেগালিথিক কিছু ভাস্কর্য আবিষ্কৃত হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার বেশ কয়েকটি স্থানে বড় পাথরের তৈরি মেগালিথিক কিছু ভাস্কর্য আবিষ্কৃত হয়েছে। এতে নিয়াস, বাটক, আসমত, দয়াক এবং তোরাজার সংস্কৃতির আদিবাসীদের বিকাশ ঘটে। এই আদিবাসীরা কাঠ এবং পাথরকে ভাস্কর্যের  মিডিয়া হিসাবে ব্যবহার করেন।

অষ্টম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীতে জাভানীয় সভ্যতা পাথরের ভাস্কর্য ও স্থাপত্য তৈরি করেছে যা হিন্দু-বৌদ্ধ ধর্মীয় সভ্যতা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। এর উদাহরণ হল বোরোবুদুর এবং প্রাম্বানন মন্দির। বোরোবুদুরে আছে বুদ্ধের চিত্র। প্রম্বানন মন্দির প্রাঙ্গনে শিব মহাদেব, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, গণেশ, দুর্গা, অগস্ত্য এবং নন্দীর হিন্দু মণ্ডলও রয়েছে। জাভার প্রজ্ঞাপ্রমিতা জাভানীয় ধ্রুপদী হিন্দু-বৌদ্ধ শিল্পের একটি মাস্টারপিস, যা ১৩ তম শতাব্দীতে পূর্ব জাভা সিংহাসারিতে তৈরি হয়েছিল।

কাঠের খোদাইয়ের শিল্পটি ইন্দোনেশিয়ায় বেশ উন্নত। অসমত, দয়াক, নায়াস এবং তোরাজা অঞ্চলের আদিবাসীদের শিল্পকলায় কাঁচ এবং কাঠের খোদাই সংস্কৃতির জন্য সুপরিচিত। বালির উবুদের নিকটে মাস নামক গ্রামটি তাদের কাঠের খোদাই শিল্পের জন্য বিখ্যাত। তাঁদের চেষ্টাতেই ফলেই বালিতে আজ কাঠের এবং কাঁচের একটি টেকসই পর্যটন বাজার তৈরি হয়েছে।

২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ইসলামের কট্টরপন্থি একটি গোষ্ঠী দেশটির অন্তর্গত পূর্ব জাভার সিদোয়ারজো টাউন স্কয়ারের 'জয়ানদারু' ভার্স্কযটি ভেঙে ফেলার দাবি জানায়। অথচ ভার্স্কযটি তৈরি করা হয় দেশটির অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি জেলে ও কৃষকদরে প্রতি সম্মান জানিয়ে। যারা ভাঙতে চেয়েছিল তারাও ইরাকের আইএসের মত শিরক তথা পূজার প্রসঙ্গটি সামনে আনে। দেশটির প্রগতিশীল ব্যক্তিদের প্রতিবাদের ফলে ভার্স্কযটি এখনো ইন্দোনেশিয়ার বুকে স্বগর্বে দাঁড়িয়ে আছে।

মালয়েশিয়া

জনগোষ্ঠীর দিক থেকে মালয়েশিয়ার অবস্থান মুসলিম বিশ্বে ১৩তম। দেশটির রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় তিন কোটি। এর ৬০.৪ শতাংশ মানুষ মুসলিম। এখানেও রয়েছে আববয়িক দৃষ্টিনন্দন অসংখ্য ভাস্কর্য। মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত ভাস্কর্য ন্যাশনাল মনুমেন্ট, স্থানীয় ভাষায় একে তুগু নিগারা বলে। ওয়াশিংটন মনুমেন্টের আদলে গড়া এই স্মৃতিস্তম্ভটির উচ্চতা ১৫ মিটার। এটি নির্মিত হয় ১৯৬৬ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানিদের দখলের বিরুদ্ধে এবং মালেশিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামে দেশটির শহীদ হওয়া বীরদের স্মরণে এই ভাস্কর্য তৈরি করা হয়। এটি নির্মিত হয়েছে ব্রোঞ্জ মাধ্যমে, এর ডিজাইনার ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ভাস্কর ফেলিক্স ডি ওয়েলডন।

সাতজন বীরের প্রতিমূর্তির মাধ্যমে বিশ্বস্ততা, আত্মত্যাগ আর বন্ধুত্বের বিষয়টি ফুটে উঠেছে এই ভাস্কর্যে। দেশটির উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্যের মধ্যে রয়েছে- সেনোটফ, বাতু কেভসের মুরুগান, মার্জার এবং চৈনিক দার্শনিক কনফুসিয়াসের ভাস্কর্য। মালয়েশিয়ার প্রায় সবকটি ভাস্কর্যে রয়েছে সনাতন এবং আধুনিকতার মেলবন্ধন।

কাতার

কাতারে এই ভাস্কর্যটি রাজধানী দোহায়, কাতার সংস্কৃতি কেন্দ্রের কাতারা আম্পি থিয়েটারের সামনে স্থাপিত হয়।

বর্তমানে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর একটি কাতার। মোট জনসংখ্যার ৭৭.৫ শতাংশ মুসলিম। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ভাস্কর্য হলো 'হারনেসিং দ্য ওয়ার্ল্ড'। এই ভাস্কর্যটি রাজধানী দোহায় অবস্থিত কাতার সংস্কৃতি কেন্দ্রের কাতারা আম্পি থিয়েটারের সামনে স্থাপিত হয়। 'হারনেসিং দ্য ওয়ার্ল্ড' পুরো পৃথিবীর সংযোগ স্থাপনকারী একজন নারীর প্রতিমূর্তি। এর নির্মাতা উরস ফিশার। 'আনটাইটেলড' নামে এই শিল্পীর আরো একটি ভাস্কর্য রয়েছে 'হামাদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট' এর সামনে। এয়ারপোর্টের ভেতরেও আছে বেশকিছু ভাস্কর্য। এমেরিকান শিল্পী রিচার্ড সেররার 'সেভেন', 'ইস্ট ওয়েস্ট/ওয়েস্ট ইস্ট' দেশটির উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য। ভারতীয় শিল্পী সুবোধ গুপ্তের 'গান্ধী'স থ্রি মানকি' ভাস্কর্যটিও  পর্যটকদের আকর্ষিত করছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত

মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের একটি দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। এটি আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত সাতটি স্বাধীন রাষ্ট্রের একটি ফেডারেশন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার একই বছরে সংযুক্ত আরব আমিরাতও স্বাধীন হয়। 'সোর্ড ড্যান্স' বা তলোয়ার নৃত্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের জনপ্রিয় শিল্পমাধ্যম। দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিশ্বের কিছু উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য। যেমন: আরবীয় যুগলের মূর্তি, দুবাইয়ের ওয়াফিতে প্রবেশদ্বারে পাহারাদারের প্রতিমূর্তি হিসেবে সংস্থাপিত কুকুরের মূর্তি। এছাড়াও ইবনে বতুতা মার্কেটে স্থাপিত বতুতার মূর্তিটিও দৃষ্টিনন্দন। মার্কেটের একটা বিশেষ অংশের দেয়াল জুড়ে আছে কিছু প্রাচীন চিত্রকর্ম।

তুরস্ক

তুরস্কের নাম শুনেছেন অথচ মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের নাম শুনেনি এমন লোক পাওয়া দুষ্ককর। তুর্কি ভাষায় 'আতা' শব্দের অর্থ পিতা। 'তুর্ক' মানে তুরস্ক। আতাতুর্ক শব্দের অর্থ তুরস্কের জাতির পিতা। কামাল আতাতুর্ক আধুনিক তুরস্কের জনক, প্রথম রাষ্ট্রপতি, প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা, সামরিক ব্যক্তিত্ব, লেখক, বিপ্লবী এবং সর্বোপরি একজন জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রনেতা। তার নেতৃত্বেই তুরস্কে খেলাফত শাসনের অবসান ঘটে, জন্ম হয় ধর্মনিরপেক্ষ আধুনিক তুরস্কের। ফলে তুরস্কজুড়ে রয়েছে কামাল আতাতুর্কের মূর্তির মেলা।

এসব ভাস্কর্যে শুধু আতাতুর্কই আসেনি, উঠে এসেছে তুরস্কের ইতিহাস, ঐতিহ্য। দেশটির আঙ্কারাতে অবস্থিত ইন্ডিপেনডেন্স টাওয়ারের প্রবেশদ্বারে তুরস্কের জাতীয় সংস্কৃতির ধারক তিন নারীর ভাস্কর্য, আন্তালিয়ায় শিক্ষা আন্দোলনের নেতা তুরকান সায়লানের ভাস্কর্য এবং মর্মর সাগর তীরের মর্মর ভাস্কর্য, দক্ষিণ তুরস্কের আমাছায়া শহরে অবস্থিত ফরহাদ-শিরীনের ভাস্কর্য, ইস্তাম্বুলের অ্যাকদেনিজ নামক নারীমূর্তি তুরস্কের উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য।

ইরাক

ইরাক, জনসংখ্যার ৯৭ শতাংশ মুসলিম। ইরাকজুড়েও আছে ভাস্কর্য। বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে 'দ্যা ফ্লায়িং ম্যান' ভাস্কর্যটি পর্যটকদের যুগযুগ ধরে আকর্ষণ করছে। দেশটির আল মনসুর শহরে আছে আব্বাসীয় খলিফা আবু জাফর আল মনসুরের বিশাল ভাস্কর্য। আল মনসুরের বাবা ছিলেন নবি মুহাম্মদ (স.) এর চাচা আবদুল মুত্তালিবের প্র-পিতামহ। খলিফা ছাড়াও শহরটিতে আছে অনেক সাধারণ সৈনিকের ভাস্কর্য। প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনেরও বেশ কয়েকটি ভাস্কর্য ছিল। ২০০৩ সালে মার্কিন আগ্রাসনের পর এগুলো ভেঙে ফেলা হয়।

রাজধানী বাগদাদে রয়েছে আরো কিছু বিখ্যাত ভাস্কর্য। যেমন: হাম্মুরাবির মূর্তি, আরব্য উপন্যাসের প্রধান চরিত্র শাহেরজাদি এবং রাজা শাহরিয়ারের মূর্তি। ইরাকে পাওয়া গেছে সাত হাজার বছরের পুরনো সংস্কৃতির সন্ধান। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ইসলামের কট্টরপন্থি দল আইএস সদস্যরা দেশটির মসুল মিউজিয়ামে গিয়ে হাজার হাজার বছর আগরে পুরাতাত্ত্বকি সব নিদর্শনগুলো ভেঙে ফেলে। তাই বলে পুরো ইরাক একদম ভাস্কর্যশূন্য হয়ে যায়নি। এখানো ইরাক শতশত দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্যের মালিক।

ইরান

ইরান, প্রায় এক লাখ বছর আগে থেকে যার ইতিহাসের সূচনা। বর্তমানে ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ইরান অন্যতম।  দেশটির রাজধানী তেহরানে দুই বছর পরপর অনুষ্ঠতি হয় সমকালীন ভার্স্কয প্রর্দশনী ও প্রতিযোগীতা। প্রতি বছর দেশটির মাজানদারান প্রদেশে আয়োজন করা হয় বালির তৈরি ভার্স্কয উৎসব 'স্যান্ড স্কাল্পচার ফস্টেভ্যিাল'।

সমগ্র ইরানের পথে পথে আছে দেশটির মনিষীদের তৈরি ভাস্কর্য। এর মধ্যে রয়েছে কবি ফেরদৌসী, ওমর খৈয়াম, পারস্যের নেপোলিয়ন বলে খ্যাত নাদির শাহ, ইবনে সিনার মতো খ্যাতিমান ব্যক্তিদের ভাস্কর্য। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির একাধিক ভাস্কর্য রয়েছে ইরানজুড়ে। ইরানের স্থপতি হোসেন আমানতের নির্মিত 'আজাদি' স্বাধীনতাস্তম্ভটিও দেশটির উল্লেখযোগ্য একটি ভাস্কর্য।

উল্লিখিত দেশগুলো ছাড়াও পৃথিবীর প্রায় সবকটি মুসলিম প্রধান দেশই ভাস্কর্যের গৌরবময় ইতিহাসে নিজেদের নাম লিখিয়েছে। মিশর, পিরামিডের জন্য যে দেশটির খ্যাতি দুনিয়াজোড়া তারাও তাদের হাজার বছরের পুরনো মূর্তিগুলোকে রেখেছে অক্ষত।

লিবিয়া, লেবানন, তিউনিসিয়া-কোথায় নেই ভাস্কর্য। যে পাকিস্তানকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধীরা ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে জানে সেই পাকিস্তানেও জিন্নাহ এবং কবি ইকবালের ভাস্কর্য। বিভিন্নসময় সেখানেও কট্টরপন্থীদের হামলা হয়েছে। তবে এখনো সে দেশের ভাস্কর্যগুলো অক্ষতই আছে। কঠিন বিরোধীতার পরও দুনিয়াজোড়া এইসব উঁচুউঁচু শক্তিশালী ভাস্কর্য জানান দিচ্ছে- ভাস্কর্য ছিল, আছে এবং থাকবে।

Comments

The Daily Star  | English

Matarbari project director sold numerous project supplies

Planning Adviser Prof Wahiduddin Mahmud today said the Matarbari project director had sold numerous project supplies before fleeing following the ouster of the Awami League government on August 5.

1y ago