‘ভাতের অভাবে শহরে আইছিলাম, মাইয়া মরলো গুলি খাইয়া’

‘এই বিচার আমি কার কাছে চামু?’
সুমাইয়া আক্তার | ছবি: পরিবারের সৌজন্যে

ছয়তলা ভবনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন সুমাইয়া আক্তার। হঠাৎ তিনি মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন সুমাইয়ার মা আসমা বেগম (৪৪)। তখনো তিনি বুঝতে পারেননি তার মেয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

'এত ডাকলাম, কোনো কথা বলে নাই। তখন বুঝলাম, আমার মাইয়া আর নাই। আমারে একটা শব্দও কইতে পারে নাই। তার আগেই লুটাইয়া পড়ে। এই কথাডাও কইতে পারে নাই যে, মা আমি তো থাকমু না, আমার মাইয়াডারে তুমি দেইখা রাইখো,' বলছিলেন আসমা।

গত ২০ জুলাই বিকেলে যখন সুমাইয়া গুলিবিদ্ধ হন, সে সময় নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় কোটা সংস্কার দাবিতে সড়কে নেমে আসা শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ চলছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আসমা নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী নতুন মহল্লা এলাকার একটি ভবনে ছয়তলা বাসায় ভাড়া থাকেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ওই ভবনের অদূরেই একটি বহুতল ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এরপরই শুরু হয় সংঘর্ষ। চলে মুহুর্মুহু গুলি।

সুমাইয়া মেঝেতে লুটিয়ে পড়লে আসমা বেগম তার মাথা কোলে তুলে নেন। তখনই তার হাত রক্তে লাল হয়ে যায়। আসমার দুই ছেলে তখন বাড়িতেই ছিল। তিনজন মিলে সুমাইয়াকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে আনার আগেই সুমাইয়ার মৃত্যু হয়েছে।

অভাবের ঘোচাতে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ থেকে স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানকে নিয়ে শহরে এসেছিলেন সেলিম মাতবর। নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কাজ করতেন। মহামারি চলাকালে করোনায় তার মৃত্যু হয়।

গত ১২ মে সুমাইয়া আক্তার কন্যা সন্তানের মা হন। আসমা জানান, সুমাইয়ার স্বামী মো. জাহিদ পোশাক কারখানায় কাজ করেন। থাকেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুরে একটি ভাড়া বাসায়। সুমাইয়া নিজেও পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। অন্তঃসত্ত্বা হলে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে কুমিল্লায় শ্বশুরবাড়িতে চলে যান।

সন্তান হওয়ার পরে তার কুমিল্লায় ফেরার কথা ছিল। আসমা বেগম সুমাইয়াকে হাসপাতাল থেকে তার কাছে নিয়ে আসেন।

'এক সপ্তাহ পরেই মেয়েটা কুমিল্লা চলে যেত। এর মধ্যেই এইসব হইয়া গেল। আমি কেন মেয়েটারে আমার কাছে আনলাম,' বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে ওঠেন আসমা।

তিনি আরও বলেন, 'আমি প্রথমে কিছু বুঝতেই পারিনি। যখন মাথায় হাত দিলাম, রক্তে আমার হাত ভাইসা যাইতেছে। চাইপা ধইরাও রক্ত পড়া থামাইতে পারি নাই। আমার চিৎকারে তখন ঘরে থাকা দুই ছেলে আসে। ডাক্তারের কাছে নিলে কইলো সে তো আর নাই! আমারে একবার মা বইলাও ডাকতে পারে নাই। মা আমার ছোট্ট নাতিডারে রাইখা গেল গা।'

আসমা বলেন, 'আমরা গরিব মানুষ গো বাবা। ভাতের অভাবে ছোট পোলাপান লইয়া ঢাকা শহরে আইছিলাম। আর মাইয়া আমার গুলি খাইয়া মরলো। এই বিচার আমি কার কাছে চামু?'

Comments

The Daily Star  | English

Former planning minister MA Mannan arrested in Sunamganj

Police arrested former Planning Minister MA Mannan from his home in Sunamganj's Shatiganj upazila yesterday evening

3h ago