‘বিষাদ ছুঁয়েছে আজ, মন ভালো নেই’

সহিংসতায় প্রাণহানির পাশাপাশি মিথ্যা মামলা ও নির্বিচারে গ্রেপ্তারের ঘটনায় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশে করেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠন। ছবি: মো. আব্বাস/স্টার

স্বজনহারা মানুষ নিস্তব্ধ, নিথর। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন আবু সাঈদদের পিতা-মাতারা। নিজের সামনে প্রাণ যাওয়া সন্তানের পরিবার বাকরুদ্ধ। হাসপাতালের বিছানায় কাতর অনেকে। মৃত্যুর যন্ত্রণায় ছটফট করা মানুষ ভুলে যাচ্ছে জীবনের স্বাদ। 

'বিষাদ ছুঁয়েছে আজ মন ভালো নেই' কবি মহাদেব সাহার কবিতার চরণ মনে পড়ছে বারবার। হামলায় মেধাবী শিক্ষার্থী নিহত, মায়ের কোল খালি-আহাজারি, কান্নায় বিশাল আকাশ ভারি। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে রক্তাক্ত প্রান্তর দেখলে মন ভালো থাকার কথা নয়। সমস্ত বিদ্যাপীঠ বন্ধ, প্রাণের ছোঁয়া নেই কোথাও, ভয়, ভীতির জগতে বসবাস।
 
শুরুটা হয়েছিলো শান্তিপূর্ণভাবেই। কিন্তু এর মধ্যে সরকার ও কোটা সংস্কারপন্থীদের ভাষণ ও স্লোগানে আন্দোলনের গতিপথ পরিবর্তিত হয়। ''মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?''। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর শিক্ষার্থীরা ফুসলে ওঠে। প্রতিবাদ জানাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিলকারীরা আবাসিক হলগুলো থেকে বেরিয়ে এসে 'তুমি কে আমি কে-রাজাকার, রাজাকার', 'কে বলেছে কে বলেছে- সরকার সরকার' 'চাইতে গেলাম অধিকার- হয়ে গেলাম রাজাকার' এ ধরনের শ্লোগান দিয়ে মিছিল করতে থাকে (বিবিসি বাংলা)। 

সরকারের দাবি, প্রকৃত রাজাকারদের বোঝাতেই তিনি শব্দটি ব্যবহার করেছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ধরে নিয়েছেন তাদের উদ্দেশে এমন বক্তব্য। আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসে রাজাকার রাজাকার বলে স্লোগান দিয়েছেন। তাতে সরকার বলছেন এ স্লোগান রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের পরিপন্থি। স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে পাকিস্তানীপন্থী স্লোগান মানে তা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। আন্দোলনকারীরা বলেছেন, নিজেদেরকে তারা রাজাকার দাবি করেননি। প্রধানমন্ত্রীর কথার জবাবে এই শব্দ প্রয়োগ করেছেন মাত্র।
 
ভাষাব্যবহারের বৈচিত্র্য ঘটে স্থান-কাল-পাত্রভেদে। মুনীর চৌধুরীর উক্তি-'স্থান, কাল ও পাত্র ভেদে ভাষার রূপান্তর ঘটে'। লোকপ্রবাদে আছে-'এক দেশের গালি, আরেক দেশের বুলি'। তাদের ভাষার পারজ্ঞমতা অপরিহার্য। আমাদের দেশে ভাষার এমন দৃষ্টান্ত আছে। পাকিস্তানি শাসকচক্র যখন ঘোষণা দিলো-Urdu and Urdu shall be state language of Pakistan''-তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রথম প্রতিবাদ করেছিল। ফলে ভাষা-আন্দোলন সংঘটিত হয়। তৎকালীন সরকার এই ভাষা ব্যবহার না করে মধ্যপন্থা অবলম্বন করলে এমন প্রেক্ষাপট তৈরি হতো কি-না বলা মুশকিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের আগে আয়োজন করা হয় 'প্রেসিডেন্টশিয়াল ডিবেট'। এ বিতর্কের ওপর প্রার্থীদের ভাগ্য অনেকটাই নির্ভরশীল। যে প্রার্থী তাঁর প্রতিশ্রুতি ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারেন, তিনিই জনগণের কাছে আদৃত হন। নির্বাচনে বিতর্কের প্রভাব পড়ে।  

প্রাত্যহিক জীবনে ভাষা প্রয়োগের অপরিহার্যতা স্পষ্ট। ভাষা সাবলীল ও সুন্দর উপস্থাপনের মাধ্যমে মানুষের মন জয় করার হাতিয়ার এটি। ব্যত্যয় হলে সুন্দর পরিবেশেও অসুন্দরের রেখাপাত পড়ে। সুন্দর ও গোছালো উক্তির মাধ্যমে সহজ হয়ে যায় কাঠিন্য।

স্লোগানের ভাষার স্বাতন্ত্র্য আছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে জাগরণী গান প্রচারিত হতো স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে। 'পদ্মা, মেঘনা, যমুনা-তোমার আমার ঠিকানা'-মানুষের মুখে মুখে ধ্বনিত হয়েছে বারংবার। এখন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের বাসিন্দা আমরা। প্রেক্ষাপট ভিন্ন। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এখন এক দলের সঙ্গে অন্য দলের। বিএনপি, আওয়ামীলীগ, বামদলের স্লোগানের ভাষা পৃথক। সরকারি ও বিরোধীদলের ভাষাও ভিন্ন। স্লোগান আবার বিষয়সংশ্লিষ্ট। হল থেকে ছাত্ররা মিছিল নিয়ে মধুর কেন্টিনে যাওয়ার সময় স্লোগান দেয়। তাতে বিরোধীদলের প্রতি ভিন্ন বার্তা বহন করে। নিজের নেতাদের ভূয়সী প্রশংসা, বিরোধীদলের প্রতি কটাক্ষ ও তির্যক বাণ নির্বাপিত হয় কখনও কখনও। দিবস অনুযায়ী স্লোগানের ভাষা পৃথক হতে বাধ্য। 'জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো' কিংবা 'দিয়েছি রক্ত আরও দেবো রক্ত'-এরূপ অসংলগ্ন ভাষাও শোনা যায়। এসব বার্তার কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। বরং তা অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে নির্দেশ করে। 

স্নোগানের ভাষা আবার পেক্ষাপট অনুযায়ী তাৎক্ষণিক তৈরি করা হয়ে থাকে। কাজেই স্লোগানের ভাষার সুনির্দিষ্ট কোনো পূর্ব সংগঠন থাকে না। বরং যা উচ্চারিত ও বর্ণিত হয় তা-ই ভাষাবিজ্ঞানের শৈলীতে ঠাঁই নেয়। এ ভাষার আইনী ভিত্তি নির্ধারণ করাও কঠিন। আমাদের দেশে অধিকাংশ সময় না বোঝে স্লোগানের ভাষা প্রয়োগ করা হয়। তাতে থাকে আবেগ, দলীয় আনুগত্য ও ব্যক্তিগত ভালোবাসা। আইনী প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেখলে অধিকাংশ স্লোগানই আদালতের ভাষার পরিপন্থি বলে গণ্য হবে। এ ভাষাকে এজন্য বিবেচনা করা হয় 'মুক্তবুদ্ধি চিন্তার প্রতিভাষ' হিসেবে। দীর্ঘদিনের ভাষা ব্যবহারের ঐতিহ্যে লালিত হয় স্লোগানের বাণী। তাই কোনো মহল যদি রাজনৈতিক ও প্রথার আশ্রয় নিয়ে আইনীভাবে এ ভাষা মোকাবেলা করে, তাহলে দেশ সঙ্কটে পতিত হতে পারে।

প্রাত্যহিক জীবনে ভাষা প্রয়োগের অপরিহার্যতা স্পষ্ট। ভাষা সাবলীল ও সুন্দর উপস্থাপনের মাধ্যমে মানুষের মন জয় করার হাতিয়ার এটি। ব্যত্যয় হলে সুন্দর পরিবেশেও অসুন্দরের রেখাপাত পড়ে। সুন্দর ও গোছালো উক্তির মাধ্যমে সহজ হয়ে যায় কাঠিন্য। সুন্দর পোশাক পরলে প্রথম দর্শনে স্মার্ট বলা হলেও কথাবার্তা ঠিকঠাক না থাকলে আনস্মার্ট হিসেবে বিবেচিত হওয়া স্বাভাবিক। সাধারণ মানুষের কথাবার্তার ঝুটঝামেলা নেই। নিজের কথা অপরকে বোঝাতে পারলেই হলো। কিন্তু দায়িত্ববানদের ভাষা প্রয়োগে পারদর্শি হতে হয়-এমনকি প্রতিটি শব্দচয়নেও। অফিসের বড় কর্তার ভাষা হতে হয় সাবলীল। শিক্ষকের ভাষায় থাকতে হয় আশার আলো, ডাক্তারের ভাষায় রোগীর বেঁচে থাকার সাহস, আইনজীবীর ভাষায় থাকা উচিত মক্কেলের আস্থা। রাজনীতিবিদগণ দেশের আইন প্রণয়ন করেন। লক্ষ লক্ষ তরুণ প্রেষণা পাবে তাঁর কর্মকাণ্ডে ও ভাষার ব্যবহারে। 

তাঁর ভাষায় নমনীয়তাও কাম্য। জনগণের 'আইডল' নেতার বক্তব্যে প্রতিফলিত হওয়া চাই আদর্শ ও ন্যায়পরায়ণতার দৃষ্টান্ত। সরকার পরিচালনায় মন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির দায় অনেক বেশি। তাঁদের কথা বলতে হয় বাটখারার ওজনে মেপে। কারণ দেশের আপামর জনসাধারণ চেয়ে থাকেন তাঁর অমৃত বাণী শ্রবণের জন্য। সেই নেতা ভুল বাক্য বা শব্দ চয়ন করলে তার খেসারত দিতে হয় পুরো জাতিকে। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের সময় এমন ঘটনা ঘটেছিল। জাপানের হিরোশিমায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আনবিক পারমানবিক নিক্ষেপের পেছনে ভুল অনুবাদ অনেকটা দায়ি।

ভাষা-প্রয়োগের সঙ্গে যুক্ত থাকে শ্লীল-অশ্লীল। কথায় বলে, 'কথায় মিঠা, কথায় তিতা'। গ্রামীণ এই কথাগুলি পরতে পরতে সত্য হয় যখন কথা বলে কেউ বিপদে পড়ে। বিবেকবান মানুষ ভেবেচিন্তে কথা বলেন। মুর্খরা বুলি আওড়াতে উন্মুখ-বিজ্ঞরা ধীরস্থির বাক্যবচনে সুস্থির। যুক্তিহীন কথার মূল্য থাকে না। যুক্তিগ্রাহ্য কথার প্রয়োজন কমে না। তাই কথা বলার পূর্বে দশবার ভেবে কথা বলেন জ্ঞানী মানুষ। সবক্ষেত্রে সবার সব কথা মানায় না। 

বিজ্ঞমহল মনে করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের স্লোগান নিজেদের সত্তা প্রমাণের জন্য নয়। দূরদর্শিতা ও পূর্বপরিকল্পিতও নয়। রাজাকার শব্দের বিদ্রুপ উচ্চারণ মাত্র। এ ভুলের জন্য সারাদেশের মানুষ প্রায় জিম্মি হয়ে পড়েছে। আন্দোলন, হত্যা, বিজিবি মোতায়েন-সব কিছু কেমন যেন তালগোল পাকাচ্ছে।

'রাজাকার' শব্দটি বাঙালি সমাজে নেতিবাচকতা প্রকাশ করে। এ শব্দটির বহুল ব্যবহার পরিহার করা প্রয়োজন। একটি নেতিবাচক শব্দ অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে কোমলমতিদের হৃদয়ে বাসা বাঁধতে পারে। ঘৃণিত এ শব্দ ব্যবহার না করে ইতিবাচক ও আমাদের মূল্যবোধ-আদর্শ প্রকাশক শব্দ প্রয়োগে সচেতন হওয়া জরুরি। জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক হুমায়ুন আহমেদ ঠিক কাজটিই করেছিলেন, তিনি মানুষের মুখে এ শব্দ ব্যবহার করেননি। 'বহুব্রীহি' নাটকে এক টিয়ের ঠোঁটে 'তুই রাজাকার' শব্দগুচ্ছ বলিয়েছিলেন ঔপন্যাসিক।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রাণ গেছে অনেক। নিরস্ত্র সাঈদ, অবুঝ শিশু, রিকসাওয়ালা, পথচারি, স্ত্রী বা অসুস্থ বৃদ্ধ পিতার জন্য ঔষধ কিনতে যাওয়া নিরপরাধ ছেলের। হাসপাতালে আছে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কেউ কেউ। মারাত্মক আহত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে কিনা-এমন শঙ্কাও আছে। মন্ত্রী-এমপিরা বলছেন, সরকার পুলিশকে গুলির নির্দেশ দেননি। (২৪ জুলাই ২০২৪, প্রথম আলো)। 

স্টিফেন গ্যাসিলির 'দ্য ল্যাঙ্গয়েজ অব ডিপ্লোম্যাসি' গ্রন্থে আছে-'সমাজে যার যে অবস্থান, সেই অবস্থানকে বুঝতে পারা এবং সে অনুসারে কথা বলা ও শিখতে পারাটাও যোগ্যতার ব্যাপার'। না হলে কি হয়, কতটা হয় কেউ জানে না। 

কোটা সংস্কারে প্রথম নিহত হন সাঈদ। প্রকাশ্য-দিবালোকে পুলিশ নিরস্ত্র সাঈদকে গুলি করে হত্যা করেছে। এখানে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই। কোটা সংস্কারের মিছিলে হামলা করে ছাত্রলীগ। নিহত ও আহত হয় বেশ কয়েকজন। আন্দোলন আরও জোরদার হয়। জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পায়। রাজনৈতিক দলগুলো ফায়দা নেয়ার জন্য তারাও মাঠে নামে প্রকাশ্যে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধবংস করা হয়।

এসব ক্ষতি জনগণের। জনগণের টাকায় সরকার দেশের উন্নয়ন করে থাকে। সরকারের টাকা বলতে দেশের আপামর জনগণের টাকা। জনগণের সম্পদ ও জীবন রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। এতগুলো প্রাণ ঝরে যাওয়া প্রমাণ করে দেশের মানুষের নিরাপত্তা কতটা হুমকির মুখে। অপরাধী যে-ই হোক না কেন, আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। তা না হলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা দেবে বারবার। দলীয় ফাঁক-ফোকরে দোষী ব্যক্তি পার পেলে দেশের সম্পদ ও জনগণের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হবে না। 

সরকার সবার-কোনো দলের বা গোষ্ঠীর নয়। মন্ত্রী-এমপিরা দায়িত্বশীল পদে থেকে জনগণের ভাষা না বোঝে কথা বলেছেন। ফলে দেশের ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি জনগণের। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। জনগণকে গুরুত্ব দিতে হবে সর্বাগ্রে। কোন সরকার বর্তমান বিশ্বে ফ্রাঙ্কনেস্টাইন স্টাইলে দেশ শাসন শাসন করতে পারে না। মধ্যযুগে ছিল-'কিং ইজ দ্য ফাউন্ডেশন অব জাস্টিজ'-অর্থাৎ শাসকের কথাই শেষ কথা। 

বর্তমানে-'ল ইজ দ্য কিং'-আইনই রাজা। 'আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান'-এমন বাক্যই উচ্চারিত হওয়া জরুরি। উন্নত বিশ্বে এ ধারাই প্রচলিত-গণতান্ত্রিক দেশে বহুল চর্চিত বিষয়। পদানুযায়ী ভাষাব্যবহারের নীতি থাকা বাঞ্চনীয়। স্টিফেন গ্যাসিলির 'দ্য ল্যাঙ্গয়েজ অব ডিপ্লোম্যাসি' গ্রন্থে আছে-'সমাজে যার যে অবস্থান, সেই অবস্থানকে বুঝতে পারা এবং সে অনুসারে কথা বলা ও শিখতে পারাটাও যোগ্যতার ব্যাপার'। না হলে কি হয়, কতটা হয় কেউ জানে না। 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

17h ago