মুখে লাল কাপড় বেঁধে জাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মৌন মিছিল

মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল। ছবি: স্টার

কোটা আন্দোলন ঘিরে দেশব্যাপী শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা, গুম, নির্যাতন ও আটকের প্রতিবাদে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেছেন 'নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়' ব্যানারে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চোখে-মুখে লাল কাপড় বেঁধে শিক্ষকদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে মৌন মিছিলে অংশগ্রহণ করেছেন 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন'র ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে এই মৌন মিছিল বের করেন তারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হল সংলগ্ন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নিহতদের স্মরণে নবনির্মিত ছাত্র-জনতা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে অবস্থান নেয়। সেখানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে সেখান থেকে পুনরায় মিছিল নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একই পথে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে যান। সেখানে সমাবেশ করেন তারা।

সমাবেশে দেশব্যাপী কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষদের হত্যা, তাদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও আটকের ঘটনার প্রতিবাদ জানান শিক্ষকরা। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে 'মিথ্যা মামলায়' রিমান্ড মঞ্জুর করার ঘটনার নিন্দা জানান তারা।

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, 'গত দুইদিন আগে ছয়জন সমন্বয়কারীকে ধরে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে জোরপূর্বক জিম্মি করে আন্দোলন প্রত্যাহারের বক্তব্য আদায় করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে সেই বক্তব্য প্রত্যাখ্যাত হতে দেখেছি। এ আন্দোলনটি ছাত্র সমাজের আন্দোলন। সমন্বয়কারীরা ছাত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে এবং তাদের কোনো কথা থাকলে ছাত্রদের কাছে এসে বলতে হবে। ডিবি কার্যালয়ে থেকে কোনো কথা বললে সেটি ছাত্র সমাজ গ্রহণ করবে না।'

'আজ মঙ্গলবার দেশব্যাপী শোক ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, যে রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত আন্দোলন চলাকালে শহীদদের তথা যাদের জন্য শোক ঘোষণা করেছে তাদের সংখ্যা স্পষ্ট করে বলতে পারছে না এবং যে হত্যার জন্য রাষ্ট্র সরাসরি জড়িত, সেই রাষ্ট্রের শোক ছাত্র সমাজ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। শহীদ ভাইদের হত্যার বিচার ও নয় দফা দাবিতে মুখে-চোখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছি। দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। একইসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।'

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, 'দুঃশাসন ও স্বৈরাচারি মন-মানসিকতার দুঃশাসক যখন রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতায় থাকে, তার পরিপূর্ণ নকশা ও বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা যখন তাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে রাস্তায় নামে, তখন তাদের প্রতিরোধ করতে রাষ্ট্রের বাহিনী, নানান যন্ত্র ও তাদের মদদপুষ্ট সংগঠনগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের আহত করেছে। এখন আবার সরকার শিক্ষার্থীদের নির্বিচারে আটক করছে, জেলে নিয়ে নির্যাতন করছে। একাত্তরের কালো রাতের যে ভয়াবহ অবস্থা ছিল, তা আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি।'

ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার বলেন, 'দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে—সব রাজনীতিবিদ স্পষ্টভাবে একটি বার্তা বুঝে নিন, সংখ্যা কোনো বিষয় নয় যখন একটি শিশুর লাশ পড়ে যায়, তখন সব সচেতন মানুষ একত্রিত হয়ে যায়। আজকে যে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে, ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করেছেন, এগুলোর সমাধান করে নিজেদের দায় স্বীকার করে শিক্ষার্থীর দাবি মেনে নিয়ে নিজেরাও বাঁচুন, আমাদেরকেও বাঁচান।'

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মৃধা মো. শিবলী নোমানের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. মাসউদ ইমরান ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদা আকন্দ প্রমুখ।

Comments

The Daily Star  | English
FY2026 Budget,

How the FY2026 budget can make a difference amid challenges

The FY2026 budget must be more than a mere fiscal statement.

15h ago