‘দোকানের শাটার ভেঙে খুব কাছ থেকে পায়ে গুলি করে পুলিশ’

হাসপাতালের বেডে শুয়ে মো. আকাশ। ছবি: স্টার

গত ২০ জুলাই নারায়ণগঞ্জের ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষের মধ্যে জীবন বাঁচাতে দোকানের শাটার টেনে কাঁচের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন ১৯ বছরের মোহাম্মদ আকাশ।

কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মিষ্টির দোকানের সেই শাটার আর কাঁচের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে খুব কাছ থেকে তার বাম হাঁটুতে গুলি করেন বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান তিনি।

বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডারে কাজ করা আকাশের জীবন আর আগের মতো নেই। গত মঙ্গলবার চিকিৎসকরা তার বাম পা কেটে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন।

গত আড়াই বছর ধরে দোকানটিতে কাজ করছিলেন আকাশ। শনিবার তিনি ওই দোকানের দায়িত্বে ছিলেন।

'পুলিশ সব দরজা ভেঙে জোর করে দোকানে ঢুকেছিল।'

পুলিশ তাকে তার পরিচয় গোপন ও সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনে। তবে আকাশ জানায় তিনি বারবারই এইসব অভিযোগ অস্বীকার করলেও পুলিশ তাকে সহিংসতা করে দোকানে লুকিয়ে থাকার কথা বলে।

দোকানের মালিক রাজু হোসেনসহ প্রত্যক্ষদর্শীরাও আকাশের কথায় সমর্থনে করেন। তারা জানান, আকাশ দোকানের একজন নিবেদিত কর্মী। তিনি কোনো ধরনের আন্দোলন, বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত না।

কিন্তু পুলিশ এইসব কথা মানতে রাজি না। হঠাৎই একজন আকাশের বাম হাঁটুতে গুলি করে। সাথে সাথেই মেঝেতে পড়ে যান আকাশ।

প্রচুর রক্ষক্ষরণ আর অসহ্য যন্ত্রণায় কাঁতরাতে থাকা আকাশকে বাঁচানোর জন্য তার পরিবার এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটতে থাকেন।

আকাশের বাবা দুলাল মিয়া বলেন, 'একটা বেসরকারি হাসপাতাল বলছিল দুই লাখ টাকা দিলে ছেলেটার পা বাঁচাতে পারবে তারা। কিন্তু তারা পারে নাই। পরে আকাশকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে আসি। ছেলেটার একটা পা কেটে ফেলতে হইছে।'

পরিবারের আর্থিক দুরবস্থা দূর করার আশায় সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল আকাশের। তবে বন্দুকের একটা গুলি সেই স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে।

আকাশের বাবা বলেন, 'এখন তো ছেলের চিকিৎসার খরচ দিতে গিয়েই নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। সামনের দিনগুলোতে কী হবে তাও জানি না।'

পরিবারটি এরই মধ্যে ৩ লাখ টাকা হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেছে। যার মধ্যে রক্তের জন্য ব্যয় করতে হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। ধীরে ধীরে সঞ্চয় ফুরিয়ে আসছে।

হাসপাতালের বিছানায় অসহায়ভাবে শুয়ে থাকা আকাশ সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না। 'এখন আমি কী করব? রাস্তায় ভিক্ষা করব?,' প্রশ্ন করছিলেন আকাশ।

পরিবার বলছে, যে মানসিক ও শারীরিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে এই তরুণ যাচ্ছে তার মধ্যে দোকানের সামান্য সাড়ে ৭ হাজার টাকা বেতনের চাকরিটাও হয়তো আর করতে পারবে না। 

ছেলের জন্য একটা কৃত্রিম পা পেতে আর্থিক সাহায্য আর ন্যায়বিচারের আশায় দিন কাটছে পরিবারটির।

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

1h ago