মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘লজ্জাজনক’ পরাজয়ের জেরে জেনারেলকে কারাদণ্ড

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সো মিন তেত। ছবি: সংগৃহীত
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সো মিন তেত। ছবি: সংগৃহীত

বিদ্রোহীদের তীব্র হামলার মুখে টিকতে না পেরে নিজেদের দখলে থাকা সামরিক ঘাঁটি ছেড়ে পিছু হটার নির্দেশ দেন মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সো মিন তেত। এই ঘটনার শাস্তি হিসেবে তাকে কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির সামরিক সরকার।

গতকাল মঙ্গলবার এই তথ্য জানায় মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতি।

মিয়ানমার-থাইল্যান্ড সীমান্তে অবস্থিত শহর মায়াবতীর নিয়ন্ত্রণ নিতে তীব্র হামলা চালায় মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহীরা। যুদ্ধের শেষ না দেখেই 'পালিয়ে যান' সো মিন। যার ফলে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা আরও একটি 'লজ্জাজনক' সামরিক পরাজয়ের স্বাদ পায়। রাজধানীর নেপিদোর সূত্ররা এই তথ্য জানান।

মায়াবতী শহরে বিদ্রোহীদের টহল। ছবি: রয়টার্স
মায়াবতী শহরে বিদ্রোহীদের টহল। ছবি: রয়টার্স

৪৪তম হালকা পদাতিক বাহিনীর সাবেক কমান্ডার সো মিন হেতকে সম্প্রতি এই ঘটনার জেরে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে সূত্ররা জানান। সাউথ ইস্টার্ন কমান্ডের সামরিক ট্রাইবুনালে তার বিচার হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিনা অনুমতিতে ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন তিনি।

তাকে তাউনগু কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এপ্রিল মাসের এই পরাজয়ে মায়াবতী শহরের দখল হারায় সামরিক জান্তা। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বিদ্রোহীদের হাতে একের পর এক যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভূখণ্ড হারিয়েছে।

এপ্রিলের শুরুর দিকে বিদ্রোহী গোষ্ঠী কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (কেএনএলএ) ও পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) সীমান্তবর্তী বাণিজ্যিককেন্দ্র মায়াবতীতে জান্তার সামরিক অবস্থানে অতর্কিত হামলা চালায়।

এই হামলা প্রতিহত করার চেষ্টা চালান সেখানকার সেনাপ্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সো মিন হেত। এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে তিনি ২৭৫তম লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নের সেনাদের সেখান থেকে প্রত্যাহার করে থাই-মিয়ানমার দুই নম্বর বন্ধুত্ব সেতুতে সরে যান। এই সেতু মায়াবতী ও থাইল্যান্ডের মে সোত শহরকে মোয়েই নদীর ওপর দিয়ে সংযুক্ত করেছে।

এই সেতুর ওপর ২০ এপ্রিল বিদ্রোহীদের সঙ্গে দিনভর সংঘাতে আহত হন সো মিন। তাকে সীমান্তের ওপারে মে সোতের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সামরিক জান্তা তাকে বিমানে করে উড়িয়ে দেশে ফিরিয়ে আনে। সুস্থ হয়ে ওঠার পর সো মিনের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। এতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। এরপর তাকে কারাদণ্ড দিয়ে তুয়ানগু কারাগারে পাঠানো হয়।

পরবর্তীতে সামরিক জান্তা কারেন অঞ্চলের সীমান্তরক্ষীদের সহায়তায় মায়াবতীর দখল ফিরিয়ে নেয়।

মায়াবতী শহরে বিদ্রোহীদের টহল। ছবি: রয়টার্স
মায়াবতী শহরে বিদ্রোহীদের টহল। ছবি: রয়টার্স

এ বছরের শুরুর দিকে সামরিক জান্তা তাদের তিন জেনারেলকে মৃত্যুদণ্ড ও অপর চারজনকে দীর্ঘমেয়াদে কারাদণ্ড দেয়। উত্তরের শান রাজ্যের কোকাং প্রদেশে বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমর্পণের দায়ে তারা এই শাস্তি পান।

এ মাসের শুরুর দিকে জান্তা কেন্দ্রীয় কমান্ড প্রধান মেজর জেনারেল কি খাইংকেও বরখাস্ত করেছে।

১৯ জুন জ্যেষ্ঠ বৌদ্ধ সাধু, শিক্ষক ও লেখক সাজাদো ভেদান্ত মুনিনদাবিভামসা (৭৮) গুলির আঘাতে প্রাণ হারালে কি খাইংকে বরখাস্ত করা হয়।

মান্দালায় প্রদেশে গাড়িতে করে ভ্রমণ করার সময় অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে এই সাধু নিহত হন। এ অঞ্চলের সামরিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় কমান্ড।

শুরুতে জান্তা বিদ্রোহীদের ওপর এই হত্যার দায় চাপালেও পরবর্তীতে দায়ভার স্বীকার করে নেয়।

Comments

The Daily Star  | English

What's causing the unrest among factory workers?

Kalpona Akter, labour rights activist and president of Bangladesh Garment and Industrial Workers Federation, talks to Monorom Polok of The Daily Star about the recent ready-made garments (RMG) workers’ unrest.

8h ago