খালি টিফিনবাক্সটিই আঁকড়ে ধরে আছেন লঙ্কেশ্বর

অতশী প্রসাদ আনার জন্য এই বাক্সটি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। লঙ্কেশ্বর সরকারের কাছে ফিরে এসেছে সেই বাক্সটি, কিন্তু ফিরতে পারেননি অতশী। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

ছোট মেয়ে মনিকার আবদার রাখতে ও অসুস্থ স্বামীর জন্য প্রসাদ (ভোগ) আনবেন বলে রথযাত্রায় গিয়েছিলেন আতশী রাণী সরকার (৪০)। সঙ্গে নিয়েছিলেন ছোট একটি টিফিনবাক্স। সেই টিফিনবাক্স ফিরে এলেও ঘরে ফেরা হয়নি আতশী রাণীর।

খালি টিফিনবাক্সটিই আঁকড়ে ধরে আছেন অতশীর স্বামী লঙ্কেশ্বর সরকার (৪৫)।

হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে কাতরাচ্ছে তার নয় বছরের মেয়ে মনিকা। মায়ের মৃত্যুর খবর এখনো জানে না সে।

গত ৭ জুন বিকেল ৫টার দিকে বগুড়া শহরের আমতলী মোড়ে রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে একজন বগুড়া সদর উপজেলার পুরান বগুড়ার অতশী রাণী।

মঙ্গলবার দুপুরে আতশীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পাড়া-প্রতিবেশীরা শোকে ভেঙে পড়েছেন। নির্বাক হয়ে বসে আছেন আতশীর স্বামী লঙ্কেশ্বর।

এই দম্পতির ছোট মেয়ে মণিকা স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। বড় মেয়ে কণিকার বিয়ে হয়েছে গত ২০ জুন। শেষবারের মতো মায়ের মুখ দেখতে নওগাঁ থেকে ছুটে এসেছেন তিনি।

কণিকা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাকে ছাড়া আমার সবাই অচল। ঘরের কোন জিনিস কোথায় রাখা আছে, মা ছাড়া কেউ আমরা কেউ জানতাম না। মা ছাড়া একটি দিনও চলে না। সেই মা হঠাৎ চলে গেলেন আমাদের ফেলে। এখন আমাদের জীবন কীভাবে চলবে?'

প্রতিবেশীরা জানান, দরিদ্র এই পরিবারের প্রাণ ছিলেন অতশী। স্বামী লঙ্কেশ্বর রাজমিস্ত্রির জোগালি হিসেবে কাজ করেন। স্বামীর অসুস্থতার কারণে সংসারের হাল ধরতে মাঝে মাঝে মানুষের কাপড় সেলাই করে দিতেন অতশী।

লঙ্কেশ্বর সরকার বলেন, 'গত মাসে বড় মেয়ের বিয়ের জন্য আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। ভেবেছিলাম, স্বামী-স্ত্রী মিলে কাজ করে টাকা পরিশোধ করবো। তার মৃত্যু আমার পরিবারের জন্য যেন দুঃস্বপ্ন হয়ে এসেছে।'

রথযাত্রায় সেদিন কী হয়েছিল তা বর্ণনা দিতে গিয়ে লিপি রাণী বলেন, 'সেদিন বিকেল ৪টায় আমার শাশুড়ি (আতশী) আমাকে সঙ্গে নিয়ে রথযাত্রায় যেতে চেয়েছিলেন। আমার কাজ ছিল বলে দেরি করে যাই। সেখানে পৌঁছে তার সঙ্গে আমার দেখা হয়। আমি একটু পেছন দিকে ছিলাম। আমার শাশুড়ি এক হাতে রথ অন্য হাতে মণিকাকে ধরে ছিলেন। হঠাৎ করে এই দুর্ঘটনা ঘটে।'

'বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি রাস্তায় পড়ে যান। তার ডান হাতের একটি অংশ আগুন লেগে পুড়ে যায়। সঙ্গে পিঠ, পা ও শরীরের পেটের নিচের অংশও পুড়ে যায়। তিনি অচেতন ছিলেন। একইভাবে আহত হয় মণিকাও। মাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে,' বলেন তিনি।

হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয় আতশীর। তার মেয়ে মনিকা বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন।

 

Comments

The Daily Star  | English

‘No room for politics under AL name, ideology’

Nahid Islam, adviser to the interim government, spoke with The Daily Star on the nation's key challenges and the way forward.

15h ago