১২ বছরে অনেক পরীক্ষা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে কী হবে বুঝতে পারছি না: পিএসসি চেয়ারম্যান

সংবাদ সম্মেলনে পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন। ছবি: সংগৃহীত

অভিযোগ রয়েছে অন্তত ১২ বছর ধরে ফাঁস হয়েছে বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশনের (পিএসসি) নেওয়ার পরীক্ষার প্রশ্ন। এসব পরীক্ষার বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেছেন, '১২ বছর ধরে অনেক পরীক্ষা হয়েছে। সেসব পরীক্ষার কথা যদি এখন ওঠে তাহলে সেগুলো নিয়ে কতটা কী হবে আমি বুঝতে পারছি না।'

আজ মঙ্গলবার দুপুরে আগারগাঁও কর্ম কমিশন ভবনে প্রশ্নফাঁস নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।

পিএসসি চেয়ারম্যানের ভাষ্য, 'কোনো অপরাধ যদি প্রমাণ হয় এবং সেটা যদি পিএসসির এখতিয়ারভুক্ত হয়, তাহলে আইনে যা ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে, তার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা পিএসসি নেবে।'

তিনি বলেন, 'যখনই কোনো পরীক্ষা হয়, তখন সেখানে কোনো অনিয়ম হলে আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে হোক বা পরীক্ষার্থীদের মাধ্যমে হোক, বা বিভিন্নভাবে (অভিযোগ) আসে। ১২ বছর আগের পরীক্ষা নিয়ে এতদিন পরে প্রমাণ কীভাবে হবে?'

তবে, পিএসসি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে এবং ১২ বছর আগের প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ নিয়েও এই তদন্ত কমিটি কাজ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'পরিপূর্ণ বিষয়টিই আমাদের তদন্তের মধ্যে আছে। আমাদের তদন্তের প্রতিবেদনে পরিপূর্ণ বিষয়টি আনা হচ্ছে হুবহু কোট-আনকোট করে।'

পিএসসির সাবেক গাড়িচালকের প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয় প্রকাশ্যে আসায় পিএসসি বিব্রত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'যেকোনো ঘটনা, সেটা যদি পিএসসিকেন্দ্রিক হয়, তাহলে সেটা আমাদের জন্য কষ্টদায়ক।'

পিএসসি কীভাবে পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি করে এবং সেখানে তৈরিকৃত ছয় সেট প্রশ্ন থেকে কীভাবে একটি সেট চূড়ান্ত করা হয় সেই বর্ণনা দেন সোহরাব হোসাইন।

তাকে প্রশ্ন করা হয়, এই প্রক্রিয়ায় প্রশ্নফাঁসের সুযোগ নেই, এই দাবি তিনি করছেন কি না। উত্তরে পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, 'আমি এটা বলতে চাই না। কারণ, এটা এককভাবে কেউ করে না, অনেক জনের সমন্বয়ে করে। কিন্তু (প্রশ্নফাঁস করা) ভীষণ কঠিন। প্রশ্নফাঁস করলে ছয় সেট ফাঁস করতে হবে। ছয় সেট মানে এক হাজার ২০০ প্রশ্ন।'

তিনি বলেন, 'লটারিতে ছয় সেট থেকে কোনো একটা সেট আসে। লটারিতে কোনটা আসবে, সেটা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ বলতে পারবে না।'

ওইগুলো (আগের পরীক্ষা) সম্পর্কে গভীর চিন্তা করতে হবে এবং এটা আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে পরে কি না, সেটাও দেখতে হবে। এখতিয়ারের বাইরে হলে আমরা কী করবো।

মো. সোহরাব হোসাইন, পিএসসি চেয়ারম্যান

তিনি বলেন, 'সেক্ষেত্রে সব (সেট) প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, সেটাও আমি বলতে পারব না। আবার সব প্রশ্নফাঁস হয়নি, সেটাও আমি বলতে পারব না। তদন্তের আগে কিছুই বলা সম্ভব না।'

তার দাবি, 'যদি (প্রশ্নফাঁস) হয়েও থাকে, তাহলে আমরা কাউকে ছাড়বে না। এমনকি আমারও যদি কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকে, তাহলে আমিও শাস্তির বাইরে যাব না। এটা আমি নিশ্চিত করতে পারি।'

প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি স্বীকার করেছেন আবেদ আলী। তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আপনারা জানেন, আগে এ ধরনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে অনেকে চাকরি হারিয়েছে এবং আবার অনেকে ফিরে এসেছেন। যারা ফিরে এসেছেন তাদের অনেকে কোর্টের আদেশে ফিরে এসেছেন, আবার অনেকে অন্যভাবে ফিরেছেন। আমরা আসলে সবসময় প্রস্তুত সরকারের বিধান বাস্তবায়নে।'

যেসব পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়েছে, সেগুলো প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'যেসব পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়েছে বলতে একমাত্র সর্বশেষ পরীক্ষা—পাঁচ তারিখের—সেই পরীক্ষাটাই আসবে। কারণ এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করেই সব হচ্ছে। সেই পরীক্ষার প্রশ্ন যদি ফাঁস হয়, তাহলে পরীক্ষা বাতিল হবে—সেই সিদ্ধান্ত কমিশন নেবে।'

পরীক্ষা বাতিলের প্রক্রিয়া সম্পর্কেও বিস্তারিত জানান তিনি।

কাউকে রক্ষা করার কোনো উদ্দেশ্য আমাদের নেই। কিন্তু, কোনো পরীক্ষা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে হলে তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণ হতে হবে যে এর প্রশ্নফাঁস হয়েছে।

মো. সোহরাব হোসাইন, পিএসসি চেয়ারম্যান

পিএসসির চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাওয়া হয়, প্রশ্নফাঁসের যে সিন্ডিকেট ধরা পরেছে, তারা যদি সুনির্দিষ্ট করে জানায় যে কোন কোন পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করেছে, তাহলে সেসব পরীক্ষার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'প্রমাণিত হলে কমিশনে এটা নিয়ে আলোচনা হবে। আমি তো এভাবে বলতে পারব না। কমিশনে এর সব দিক নিয়েই আলোচনা হবে। এর জন্য প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি প্রমাণ হতে হবে।'

সর্বশেষ পরীক্ষাটি বাতিল সম্ভব জানিয়ে পূর্বের পরীক্ষাগুলো বিষয়ে তিনি বলেন, 'ওইগুলো সম্পর্কে গভীর চিন্তা করতে হবে এবং এটা আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে পরে কি না, সেটাও দেখতে হবে। এখতিয়ারের বাইরে হলে আমরা কী করবো।'

সোহরাব হোসাইন বলেন, 'কাউকে রক্ষা করার কোনো উদ্দেশ্য আমাদের নেই। কিন্তু, কোনো পরীক্ষা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে হলে তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণ হতে হবে যে এর প্রশ্নফাঁস হয়েছে।'

পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, 'এই প্রতিষ্ঠানটি (পিএসসি) রাষ্ট্রের একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের দিকে লাখো যুবক তাকিয়ে আছে। এই প্রতিষ্ঠানে কোনো তদবির পর্যন্ত হয় না। একটিও না। সেই প্রতিষ্ঠানটি যাতে তার দায়িত্ব পালন করতে পারে, সেরকম একটা পর্যায় রাখতে আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই। পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানে, এমনকি আমারও যদি কোনো অনিয়মে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, আমাকেও চাকরিচ্যুত করা হবে।'

'অনেক সময় বোর্ডের প্রশ্নের মতো দেখতে এমন প্রশ্ন বিক্রি করে একটা চক্র টাকা আয় করে। সেটাও বিবেচনায় আনতে হবে যে এখানেও সেটাই হয়েছে কি না। তেমন হলে এজেন্সি সেটা দেখবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান সবার উপরে। আমি না থাকতে পারি, আপনি না থাকতে পারেন, কিন্তু এটি একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান—অযথা যেন এই প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ও বিশ্বস্ততা নষ্ট না হয়,' যোগ করেন তিনি।

 

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

4h ago