এমপি আনার হত্যা: স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারের আবেদন ৩ আসামির, রিমান্ডে নির্যাতনের অভিযোগ

আনোয়ারুল আজীম আনার। ছবি: সংগৃহীত

গত মে মাসে কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার পর থেকে গোয়েন্দা পুলিশ এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়েছে।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ৭ জনের মধ্যে ৬ জন ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।

তবে তিন আসামি তাদের জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। ডিবি পুলিশের রিমান্ডে তাদের নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।

প্রথমে পুলিশ বলেছিল স্বর্ণ চোরাকারবার নিয়ে বিরোধের জেরে এমপি আনারকে হত্যা করা হয়েছে। এর পেছনে তার এক  সহযোগী এমপি এবং ক্ষমতাধর এক ব্যবসায়ীকে সন্দেহ করা হয়।

সোনা চোরাকারবারের বিষয়ে তদন্তকাজ কিছুটা থমকে আছে।

এরপর থেকে তদন্ত এত দিকে মোড় নিয়েছে যে এটা নিয়ে সন্দেহ ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

এমপি আনার হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবুকে গ্রেপ্তারের পরে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন।

তখন, রাজনৈতিক শত্রুতাকে এ হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এদিকে কলকাতার নিউটাউনের ফ্ল্যাটে পাওয়া মরদেহের টুকরো ঘিরে এ রহস্যে আরও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

প্রাপ্ত দেহাবশেষ এমপি আনারের বলে সন্দেহ করা হলেও, ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তার পরিবারকে এখনো কলকাতায় ডাকা হয়নি।

এমপির ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রউফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের ৩ জুলাই কলকাতা যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমরা অনুমোদন পাইনি। অনুমোদন কবে আসবে আমরা জানি না।'

এরপর ঘটনা আরও ঘনীভূত হলো যখন জানা গেল, প্রাথমিকভাবে অপরাধ স্বীকার করা তিনজন তাদের জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন।

বৃহস্পতিবার আদালতে জমা দেওয়া আবেদনে বলা হয়, ডিবি রিমান্ডে তাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছিল।

আওয়ামী লীগ নেতা বাবু জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদনে দাবি করেন, তাকে বাধ্য করা হয়েছে স্বীকারোক্তি দিতে।

পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, হত্যা মিশনের সমন্বয়ক ছিলেন আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া। এই আমানুল্লাহ এবং তার চাচাতো ভাই তানভীর ভূঁইয়াসহ আরও দুজন তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন।

তাদের তিন জনের দাবি, ওইসব স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পুলিশ আগেই লিখে রেখেছিল। নির্যাতন চালিয়ে তাদের কাছ থেকে তাতে সই নেওয়া হয়।

ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হক আবেদনগুলো রেকর্ডে রাখার নির্দেশ দেন।

এর সত্যতা নিশ্চিত করে অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী বলেন, 'আসামিরা রিমান্ডে নির্যাতনের কারণে অসুস্থ থাকায় চিকিৎসার জন্য আবেদন করেছিলেন। আদালত জেল কোড অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।'

জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ওয়ারী বিভাগ) উপ-কমিশনার আব্দুল আহাদ ডেইলি স্টারকে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না।

এদিকে, গত মঙ্গলবার ও বুধবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান ফকির ও ফয়সাল আলী সাজী।

পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের অন্যতম মূল হোতা আক্তারুজ্জামান তার ব্যক্তিগত সহকারী সিয়ামের মাধ্যমে তাদের ভিসা, পাসপোর্ট ও যাতায়াতের ব্যবস্থা করেন। পাশাপাশি  হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ক্লোরোফর্ম ও অন্যান্য অস্ত্রও সরবরাহ করেন সিয়াম।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা শাখা) হারুন অর রশিদ জানান, এমপি আনারকে হত্যার পর মুস্তাফিজ ও ফয়সাল নিউটাউনের ফ্ল্যাট পরিষ্কার করেন।

তদন্তে যাদের নাম উঠে আসছে তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।

গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় গিয়ে এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন এমপি আনার। পরদিন ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা বলে সেখান থেকে বেরিয়ে যান তিনি।

১৮ মে তার পরিবারের সদস্যরা জানায় যে, তারা এমপি আনারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না।

পরে ২২ মে ভারত ও বাংলাদেশের পুলিশ জানায়, এমপি আনারকে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে হত্যা করা হয়েছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda urges unity, quick action to institutionalise democracy

She also demanded a comprehensive list of victims of abduction, murder, and extrajudicial killings

1h ago