এমপি আনার হত্যা: আলোচনায় দলীয় কোন্দলও

আনার
আনোয়ারুল আজীম আনার। ফাইল ছবি সংগৃহীত

কলকাতার ফ্ল্যাটে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ড নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে স্বর্ণ চোরাচালান, হানি ট্র্যাপ ও মাদকসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে।

তবে গত বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগ নেতা কামাল আহমেদ বাবুকে গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে নেওয়ার পর স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধও সামনে এসেছে।

কামাল জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক।

তদন্তকারীরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন আনার হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের সঙ্গে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের যোগসাজশ ছিল কি না।

ডিবি সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ইতোমধ্যে সন্দেহভাজনদের তালিকা তৈরি করেছে এবং গত বৃহস্পতিবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের অংশ হিসেবে কামালকে নিয়ে যায় ডিবি।

হত্যাকাণ্ডের অন্যতম মূল হোতা আক্তারুজ্জামানের ফুপাতো ভাই কামাল আহমেদ বাবু।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ গতকাল শনিবার বলেন, 'কামালকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।'

কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কামাল সংসদ সদস্য আনারের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী।

এছাড়া তাজ মোহাম্মদ খান ও মোহাম্মদ জামাল হোসেন ওরফে জামাল হাজী নামে আরও দুজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়েছে গোয়েন্দারা।

দুজনই ঝিনাইদহের বাসিন্দা এবং আক্তারুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তাজ ও জামাল আক্তারুজ্জামানের স্বর্ণ চোরাচালানসহ অন্যান্য ব্যবসা দেখাশোনা করতেন।

এই দুইজন স্বর্ণের চালান আক্তারুজ্জামানের খামারবাড়িতে রাখতেন এবং এমপি আনারের সম্মতিতে সেগুলো পাচার করতেন বলে অভিযোগ আছে।

কোটচাঁদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আল মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তাজ ও জামাল পলাতক।

এমপি আনার গত ১২ মে কলকাতায় গিয়ে বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে এক রাত থাকেন। পরদিন ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে যান। ২২ মে ভারত ও বাংলাদেশের পুলিশ নিশ্চিত করে যে সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।

গত ২৮ মে নিউ টাউনের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া লাশের ডিএনএ পরীক্ষা প্রসঙ্গে ডিবি প্রধান হারুন বলেন, খুব শিগগিরই এমপি আনারের পরিবারের সদস্যরা ভারতে যাবেন।

আখতারুজ্জামানকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে হারুন বলেন, 'এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি, তারাও (ভারত) কাজ করছে। আমরা পুলিশ সদর দপ্তরে এনসিবিতে (ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো) প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র জমা দিয়েছি এবং এনসিবি এটি ইন্টারপোলকে জানিয়েছে।'

এদিকে এমপি আনার হত্যার অন্যতম প্রধান আসামি সিয়াম হোসেনের ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে কলকাতার আদালত।

গতকাল আদালত প্রাঙ্গণের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মন্দাক্রান্তা মুখার্জী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, 'পুলিশের যুক্তি ছিল, তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যান্য ব্যক্তিদের এবং তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চায়। এছাড়া পুলিশ আরও বলেছে, সিয়াম একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যিনি এমপি আনারের দেহাংশ কোথায় এবং তাকে হত্যায় কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে তা জানেন।'

নেপাল থেকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার পর শনিবার সিয়ামকে আদালতে হাজির করা হয়।

ডিবি প্রধান বলেন, সিয়াম ও জিহাদ হাওলাদার এমপি হত্যার বিষয়টি জানতেন। তারা লাশ গুম করার সঙ্গেও জড়িত বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, 'ভারতের কাছে এখন দুজনই আছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। প্রয়োজনে আমরাও সিয়ামকে জিজ্ঞাসাবাদ করব।'

হারুন বলেন, সিয়াম নেপালে রয়েছে জানতে পেরে তারা এনসিবিকে জানিয়েছিল এবং এনসিবি তৎক্ষণাৎ তাদের নেপালের সহযোগীদের কাছে এই তথ্য পাঠায় এবং সেখানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

[আমাদের ঝিনাইদহ সংবাদদাতা এই প্রতিবেদন তৈরিতে সাহায্য করেছেন।]

Comments

The Daily Star  | English

Netanyahu now a wanted man

ICC issues arrest warrants for the Israeli PM, his former defence chief for war crimes and crimes against humanity; 66 more killed in Gaza

48m ago