নারায়ণগঞ্জের সেই বাড়ি থেকে পালিয়েছে ‘আনসার আল ইসলাম’ সদস্যরা, মিলেছে ৩ আইইডি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বরপা এলাকায় ‘জঙ্গি আস্তানা’ সন্দেহে চারতলা ভবনে দিনভর অভিযান চালায় পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা। ছবি: স্টার

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বরপা এলাকায় 'জঙ্গি আস্তানা' সন্দেহে আবাসিক ভবনে চালানো অভিযানে একটি ফ্ল্যাট থেকে তিনটি উচ্চমাত্রার আইইডি (ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বোমা ও বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম পাওয়া গেছে।

তবে সারাদিনের অভিযানে ওই ভবন বা ফ্ল্যাট থেকে কাউকে আটক করা হয়নি।  

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) পুলিশ সুপার (অপারেশন) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

উদ্ধার হওয়া বোমা তিনটির একটি ফ্ল্যাটের ভেতর ও বাকি দুটি ভবনের পাশে খালি জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এটিইউ কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন জানান, বরপার আড়িয়াবো এলাকার চারতলা ওই ভবনটির মালিক সৌদি প্রবাসী জাকির হোসেন। ভবনটির তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট কয়েকমাস আগে ভাড়া নিয়ে দুই পুরুষ থাকতেন। 

পরে এক পুরুষ সদস্যের স্ত্রী পরিচয়ে এক নারী দুই শিশুকে নিয়ে সেখানে থাকা শুরু করেন। 

এই তিনজন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য বলে দাবি করেন এটিইউ পুলিশ সুপার ছানোয়ার।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ভবনটি ঘিরে রাখে এটিইউ সদস্যরা। ভবনের অন্যান্য বাসিন্দাদের বের করে দিয়ে ভবনটিসহ আশেপাশের বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুপুর দেড়টার দিকে ভবনটিতে প্রবেশ করে পুলিশের বিশেষায়িত এ ইউনিটের সদস্যরা।

ভবনের নিচতলার ভাড়াটিয়া মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভবনের মালিক জাকির হোসেনের পরিবারের কেউ এ বাড়িতে থাকেন না। গত তিনদিন ধরে তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখেছি।'

তিনমাস আগে তৃতীয় তলার ওই ফ্ল্যাটে নতুন ভাড়াটিয়া ওঠেন। চার সদস্যের পরিবারের গৃহকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোড এলাকার কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন বলে তিনি জেনেছিলেন।

তবে, গত তিনমাসে সন্দেহজনক কোনো গতিবিধি নজরে পড়েনি বলে জানান শাহনেওয়াজ।

তিনি বলেন, 'আজ সকালে দেখি পুলিশের লোকজন বাড়ি ঘিরে রেখেছে। দেখে আতঙ্কিত হয়ে গেছি। পরে তারা জঙ্গির কথা জানিয়েছে এবং আমাদের সবাইকে বাড়ি থেকে নিরাপদে বের করে আনে।'

বিকেল ৫টার দিকে অভিযান শেষে এটিইউ কর্মকর্তা ছানোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, 'গত ৫ জুন নরসিংদীতে এক অভিযানে একটি রাইফেলসহ এক জঙ্গি গ্রেপ্তার হন। পরে ৯ জুন নেত্রকোনায় একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। এটি আনসার আল ইসলামের একটি প্রশিক্ষণ শিবির ছিল। সেখানে নতুন জঙ্গি সদস্যদের বিস্ফোরক তৈরি ও তথ্য-প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।'

'এর ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলে। গত সোমবার কক্সবাজার থেকে এক নারী জঙ্গি সদস্য গ্রেপ্তার হন। তিনি নেত্রকোনার ওই জঙ্গি আস্তানা থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রূপগঞ্জের বরপা এলাকায় আরেকটি জঙ্গি আস্তানা চিহ্নিত হয়,' বলেন তিনি।

তবে, আজ ওই ফ্ল্যাট থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'আনসার আল ইসলামের দুই পুরুষ সদস্য সার্বক্ষণিক এ ফ্ল্যাটে থাকতেন। তাদের মধ্যে একজন নেত্রকোনার জঙ্গি আস্তানাটিতে প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন। কয়েকদিন আগে ওই পুরুষদের একজনের স্ত্রী পরিচয়ে এক নারীও ফ্ল্যাটে থাকা শুরু করেন। নারীর সঙ্গে দুটি শিশু সন্তানও ছিল। তবে তাদের কাউকে ফ্ল্যাটে পাওয়া যায়নি। তারা আগেই পালিয়ে গেছেন। ফ্ল্যাটটি দুইদিন যাবৎ বন্ধ ছিল।'

তিনি বলেন, 'ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে তথ্য ও প্রযুক্তিগত কাজ হতো, অন্য কক্ষে আইইডি তৈরির কাজ হতো। বোমা ছাড়াও মোড়কে মোড়ানো দুটি চাপাতি ও কিছু ছুরি পাওয়া গেছে ফ্ল্যাটে।'

উদ্ধার হওয়া আইইডি বোমা তিনটি এই ফ্ল্যাটেই বানানো হয়েছে বলে ধারণা এ পুলিশ কর্মকর্তার।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এটিইউর এসপি বলেন, 'সবসময়ই জঙ্গিদের একটা হামলার পরিকল্পনা থাকে। ঢাকার অদূরে যেহেতু তারা আস্তানা গড়েছিল, হয়তো তাদের কোনো পরিকল্পনা ছিল। যদি তাদের পরিকল্পনা থেকেও থাকে তা গত কয়েকদিন অভিযানের কারণে ভেস্তে গেছে।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh alleges border abuse by BSF

Those pushed-in allege torture, abuses in India

A Bangladeshi woman has alleged that India’s Border Security Force (BSF) tied empty plastic bottles to her and her three daughters to keep them afloat, then pushed them into the Feni river along the Tripura border in the dark of night, in a chilling account of abuse at the border.

4h ago