গত ১৫ বছরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী শিক্ষক ৩ গুণ বেড়েছে: প্রধানমন্ত্রী
গত ১৫ বছরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী শিক্ষকের সংখ্যা তিন গুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২৩ প্রদান এবং জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৪ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
দেশের শিক্ষা খাতকে এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগের নানা উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'মাত্র ৪৫ ভাগ ছিল আমাদের স্বাক্ষরতার হার। আমরা এক দিকে যেমন প্রত্যেকটা জেলাকে নিরক্ষরতামুক্ত করবার একটা কর্মসূচি হাতে নেই, সেখানে বয়স্কদের শিক্ষার জন্য আলাদা ব্যবস্থা বিভিন্ন এনজিও এবং প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগিয়ে। সেখানে বয়স্কদের স্বাক্ষর জ্ঞান দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছিলাম, আর তাছাড়া বাচ্চাদের স্কুলের ব্যবস্থা আমরা করি। যার ফলে আমরা প্রায় ৬৫ দশমিক পাঁচ ভাগে আমাদের স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি করি।'
তিনি বলেন, 'আমরা একটা আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পাই সেই জন্য। আর সেই টাকা দিয়ে আমরা আবার একটা ট্রাস্ট ফান্ড করে দেই যেন ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে আমরা মানুষকে সহযোগিতা করতে পারি।
'কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য হলো যে, পাঁচ বছর পরে যখন আমার ২০০৯ সালে সরকারে আসি তখন দেখলাম, আমাদের স্বাক্ষরতার হার আবার ওই ৬৫ দশমিক পাঁচ থেকে কমে ৪৪-৪৫ এ নেমে গেছে। কারণ মাঝখানে আট বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল না। ২০০১-এ বিএনপি আসে, এর পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার; কাজেই ওই অবস্থা দাঁড়ায়। আমরা ২০০৯-এ সরকারে আসার পর থেকে এখন যে পদক্ষেপ নিয়েছি তাতে আমাদের স্বাক্ষরতার হার; মাত্র কিছু দিন আগে যে হিসাবটা বের হলো, এর আগে ছিল ৭৬ দশমিক আট ভাগ, এখন দেখা যাচ্ছে সেটা প্রায় ৭৮ ভাগে উন্নীত হয়ে গেছে,' বলেন তিনি প্রধানমন্ত্রী।
স্কুলে মেয়েদের অংশগ্রহণ কম ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আজকে আমি খুবই আনন্দিত, আমাদের দেশে এখন মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার সংখ্যা ৯৮ দশমিক ২৫ শতাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঝরে পড়ার হারও কমে গেছে। এখন মাত্র ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং সেই সঙ্গে আমাদের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরাও যাতে একই সাথে পড়াশোনা করতে পারে এবং এই ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা দিতে হবে যেমন আমরাও ছোটবেলায় আদর্শলিপিতে পড়েছি—কানাকে কানা বলিও না, খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না। কোনো একটা ছেলে-মেয়ে যদি প্রতিবন্ধী হয় বা অটিস্টিক হয় বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হয়; তাদেরকে আপন করে নেওয়া, এক সাথে চলা এবং তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, সেটা শিশু বয়স থেকেই শিক্ষাটা দেওয়া। এ জন্য আমরা চেয়েছি সমন্বিতভাবে সবার জন্য শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করে দেওয়া, যাতে করে তাদের ভেতরে এই মানবিক গুণাবলী যাতে সৃষ্টি হয় সেই ব্যবস্থা করা।'
নারী ক্ষমতায়নের জন্য আওয়ামী লীগ কাজ করে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি ৯৬ সালে আরেকটা পদক্ষেপ নিয়েছিলাম যে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যে শিক্ষক নিয়োগ হবে, তার ৬০ ভাগ আমাদের নারী হতে হবে। সে ব্যবস্থাটা আমরা করে দিয়েছি। ফলে আজকে আমাদের নারী শিক্ষারও প্রসার ঘটেছে, বাব-মা স্কুলে পাঠায়, সেই সাথে সাথে কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হয়েছে এবং শিক্ষা-উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।'
গত ১৫ বছরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী শিক্ষকের সংখ্যা তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, 'প্রায় এক লাখ ১৮ হাজার ৮৯১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন সারা বাংলাদেশে আছে। আর ছয় লাখ ৫৭ হাজার ২০৩ জন শিক্ষক আছে, এর মধ্যে চার লাখ তিন হাজার ১৯১ জন নারী শিক্ষক।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা সব সময় চাই, আমরা একটি সুষম, জনকল্যাণমুখী, সর্বজনীন, মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা করতে চাই। শুধু ওই কেতাবি বই পড়ে না, এই ছোট ছোট শিশুদের ভেতরে যে মেধা-মনন সেগুলোও আমাদের বের করে আনতে হবে। তাদের সুযোগ দিতে হবে।'
তিনি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য প্রতিটি স্কুলে আমরা কম্পিউটার ল্যাব করে দেবো। প্রথমে এটা মাধ্যমিক থেকে শুরু করেছিলাম, এখন আমাদের লক্ষ্য আমরা প্রাইমারি থেকেই শুরু করে দেবো। সেই সাথে প্রি-প্রাইমারি আমরা চালু করি। আর প্রি-প্রাইমারি এক বছরের জন্য, এখন আমরা সেটা দুই বছরের জন্য করতে চাচ্ছি। সেটা পড়াশোনা না, বাচ্চারা যাবে, একসাথে বসবে, বন্ধু-বান্ধবের সাথে খেলাধুলা করবে। ওই খেলাধুলার মধ্য থেকেই তাদের ভেতরের সুপ্ত মেধা কীভাবে বিকশিত করা যায় সেই ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে।'
আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরে ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬৬৪ কোটি ৭৪ লাখ ২৯ হাজার ৮৮৩ কপি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'স্কুল ফিডিংয়ের জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, সরকারিভাবে করতে গেলে হবে এখানে গুদাম বানাও, ওখানে খাবার আনো, ওখানে করো—এসব না। ওটা একেবারে কমিউনিটিভিত্তিক হবে। গার্ডিয়ান আছে, আমাদের জনপ্রতিনিধি আছে, একেবারে ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন-উপজেলা-জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত যারা আছেন, সকলে মিলে স্কুল ফিডিংয়ের ব্যবস্থা করা।
'ঝরে পড়ার আরেকটা কারণ যখনই ক্ষুধা পায়, স্কুল থেকে চলে যায়। শুধুমাত্র ওই পুষ্টিকর বিস্কুট দিয়ে হয় না। ওই বিস্কুট খেতে খুব বেশি একটা টেস্ট না। আমি একবার পরীক্ষা করে পরে বললাম এর সঙ্গে একটু চকলেট ফ্লেভার, একটু ভ্যানিলা ফ্লেভার বিভিন্ন কিছু দিয়ে তৈরি করো বা সুন্দর একটু ডিজাইন করে দাও যেন বাচ্চাদের আকর্ষণ হয়,' যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'শিক্ষক প্রশিক্ষণ সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আধুনিক প্রযুক্তিতে শিক্ষা দিতে গেলে কনটেন্ট তৈরি করা বা কীভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সেগুলো জানার ব্যাপার আছে। সেসব ব্যাপারে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। সকলে বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধাও আমি বৃদ্ধি করে দিয়েছি।'
শিশুদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, ক্রীড়া, শরীর চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, 'সব থেকে সব কথা যে, আজকের যুগটা হলো প্রযুক্তির যুগ। আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন একটি জনগোষ্ঠী আমরা গড়ে তুলতে চাই, সেদিকে লক্ষ্য রেখে সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।'
প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুযোগ মানুষের দ্বোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'আমি চাই এই বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। তাহলে আমাদের স্মার্ট সিটিজেন হবে, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট সোসাইটি। অর্থাৎ, প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি। ছোটবেলা থেকে, শিশুকাল থেকে ধীরে ধীরে তারা সেভাবে গড়ে উঠবে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে এবং দেশের উন্নয়নে তাদের চিন্তা-ভাবনা, তারা আরও নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আজকের শিশু আগামী দিনের কর্ণধার হবে। এই শিশুদের মধ্য থেকেই তো কেউ প্রধানমন্ত্রী হবে, মন্ত্রী হবে, বড় বড় সরকারি চাকরি করবে। বৈজ্ঞানিক হবে। এক সময় তো আমাদের চাঁদেও যেতে হবে। চাঁদও জয় করতে হবে। সেই জ্ঞানটা যাতে আমাদের শিশুরা এখন থেকে পায় তার জন্য ব্যবস্থা করতে হবে।'
Comments