‘রৌমারীতে থানার বারান্দায় ঘুরে বেড়ায় মাদকের গডফাদাররা’
কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্তে মাদকদ্রব্য ও গরু চোলাচালানের সঙ্গে পুলিশ জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও রৌমিরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকির হোসেন।
গত শনিবার রৌমারী উপজেলা পরিষদ হলরুমে এক সভায় তার দেওয়া একটি বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
সাবেক প্রতিমন্ত্রীর সাড়ে ৪ মিনিটের বক্তব্যের ভিডিওতে তিনি বলেন, কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় থানার বারান্দায় ঘুরে বেড়ায় মাদকের চিহ্নিত গডফাদাররা। তারা পুলিশের কাঁধে হাত রাখে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে কিছু মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে। মাদকদ্রব্য বহনকারীকে আটক করে। কিন্তু মাদকদ্রব্যের মালিক ও গডফাদারদের আটক করে না। রৌমারীতে কারা কারা মাদকদ্রব্যের গডফাদার এটা সকলেই জানেন।
তিনি বলেন, রৌমারীতে গরু চোরাচালান বেড়ে গেছে। থানার বর্তমান ওসি আগের ওসির চেয়ে গরু প্রতি রেট বাড়িয়েছে। মাদকদ্রব্য ও গরু চোরাকারবারিরা থানায় ঘুরে বেড়ায়। মাদকদ্রব্য ও গরু চোরাচালানের সাথে পুলিশ জড়িত।'
গতকাল সোমবার সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে তার ভিডিওর বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সম্প্রতি রৌমারী উপজেলায় মাদকদ্রব্য ও গরু চোরাচালান ব্যাপকহারে বেড়েছে। রৌমারী উপজেলার ৪৫ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে চলছে মাদক ও গরু চোরাচালানোর রমরমা কারবার।'
'আমি যখন প্রতিমন্ত্রী ছিলাম তখন রৌমারীতে মাদকদ্রব্য ও গরু চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে ছিল। আমি এলাকায় প্রায়ই সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করতাম।'
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'শুধু প্রশাসনের পক্ষে মাদক ও চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এজন্য আমাদের সচেতন হতে হবে।'
জাকির হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রৌমারীতে সীমান্ত এলাকার রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী তাই বিজিবি সদস্যরা ঠিকঠাক টহল দিতে পারেন না। চিহ্নিত মাদক ও গরু চোরাকারবারিরা বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায় না। তারা পুলিশের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়।'
অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লা হিল জামান গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাবেক প্রতিমন্ত্রী একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি। তিনি কেন এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন সেটা আমার বোধগম্য নয়। এ ব্যাপারে আমি মন্তব্য করতে চাই না।'
আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে রৌমারী উপজেলায় মাদকদ্রব্য ও গরু চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
ওসি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক আলোচনা সভায় অন্য বক্তারা রৌমারী উপজেলার আইনশৃঙ্খলার প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, পুলিশের সঙ্গে মাদকদ্রব্যের কোনো গডফাদারই ঘুরে বেড়ায় না। থানা চত্বরে তারা আসেন না। আমরা মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি।
'সীমান্ত এলাকা বিজিবি নিয়ন্ত্রণ করে। সীমান্ত এলাকায় মামলা সংক্রান্ত কোনো বিষয় থাকলে বিজিবিকে তথ্য দিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়,' বলেন ওসি।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কেন এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন সেটা তিনি ভালো বলতে পারবেন। রৌমারী উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঈদ পরবর্তী শনিবার বিকেলে বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। এটা নিয়মিত সভা নয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম-৪ আসনের আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য বিপ্লব হাসান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান সামসুল দোহা, রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মুশাহেদ খান, রৌমারী বিজিবি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার নায়েক সুবেদার আবদুর রাজ্জাকসহ অনেকে।
Comments