আশ্রয়কেন্দ্রে বাড়ছে বানভাসি মানুষের ভিড়

বড়লেখার টেকাহালির একটি আশ্রয়কেন্দ্রে রান্না করছেন এক নারী। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা

ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে সিলেট বিভাগের চার জেলাতে পানি বাড়ছে। এতে বিভাগের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ। এছাড়া পৌরসভার বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও দোকানপাঠে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এতে সাধারণ মানুষজন ছুটছে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে।

বড়লেখা উপজেলার টেকাহালি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন সাহেদা বেগম। ৫৫ বছর বয়সী এই নারী বলেন, 'বন্যার কারণে পানি বাড়ছেই। ঘরে কোমর পানি। দাঁড়াইবার জায়গা নেই। বন্যার পানির স্রোতে আমার ঘরের বেড়া ভেঙে গেছে। ঘরের ভিতরে আর থাকার মতো না। পরিবারের সদস্য নিয়ে বিপাকে পড়েছি।'

'দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে না গেলে বন্যার পানিতে শিশুদের বিপদ বাড়তে পারে। তাই বাড়িঘরের সব ফেলে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাচ্ছি। না ফেলে উপায় নেই সব নষ্ট হয়ে গেছে,' বলেন তিনি।

একই কথা বলেন রানু বেগম। ৩৫ বছর বয়সী রানু বেগমের ভাষ্য, 'বন্যার পানিতে আমার বাড়িটা ধসে গেছে। উপায় না পেয়ে গতকাল রাতে এখানে এসে উঠি। এই স্কুলে ৩০টি পরিবার থাকছে।'

আজ বুধবার সকালে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মৌলভীবাজার জেলায় ৭২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩৭টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত। বন্যা কবলিত গ্রামের সংখ্যা ৪৩২। বন্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯০ জন। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৯৮টি।

সিলেট জেলার সিলেট মহানগর ও ১৩টি উপজেলায় মোট পানিবন্দি ৬ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ। সুনামগঞ্জে পানিবন্দি ৫ লাখ ৬০ হাজার মানুষ। এর মধ্যে সিলেটে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ১৭ হাজার ৮২৫ জন এবং সুনামগঞ্জে ১২ হাজার ৫০০ জন।

জানা গেছে, গত দুদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বড়লেখা পৌর এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও দোকানপাঠে পানি প্রবেশ করেছে। বিভিন্ন গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি উঠেছে বাড়ির মধ্যে। এতে শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাই ঘরে থাকতে না পেরে অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে।

তালিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান এখলাছ উদ্দিন বলেন, 'আমার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে কিছু পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে পানি ঢুকেছে। এরমধ্যে ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। সবমিলিয়ে এক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।'

তিনি সায়পুর আশ্রয় কেন্দ্রে আছে উল্লেখ করে বলেন, 'এই কেন্দ্রে ১২টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এসব পরিবারকে আমরা খিচুড়ি রান্না করে খাইয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার পাঠানো হচ্ছে। তবে রাস্তাঘাটে পানি থাকায় সড়কে যান চলাচল বন্ধ আছে। এছাড়া পাদদেশ ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে।'

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজরাতুন নাঈম বলেন, 'বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি ও আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব পরিবারের মাঝে খাবার দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শুকনো খাবারও পাঠানো হচ্ছে।'

পাউবো মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল বলেন, 'ত্রিপুরায় গত রাতেও বৃষ্টি হয়েছে। আজ সকাল থেকেও মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। তাই মনু ও ধলাই নদে উজানের পানি ঢুকছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Trump says Iran has 'maximum' two weeks, dismisses Europe peace efforts

Israel's war with Iran entered its second week on Friday with the Israeli military chief warning of a "prolonged campaign"

1h ago