সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা: সাড়ে ১২ লাখ মানুষ পানিবন্দি, আশ্রয়কেন্দ্রে ৩০ হাজার

ধারাবাহিকভাবে ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও সুনামগঞ্জের আরও বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যাকবলিত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ১২ লাখ মানুষ। তাদের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।

এর মধ্যে সিলেট জেলার সিলেট মহানগর ও ১৩টি উপজেলায় মোট পানিবন্দি ছয় লাখ ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ এবং সুনামগঞ্জে পানিবন্দি পাঁচ লাখ ৬০ হাজার মানুষ। এর মধ্যে সিলেটে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ১৭ হাজার ৮২৫ জন এবং সুনামগঞ্জে ১২ হাজার ৫০০ জন।

দেশের উজানে ভারতের মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছুটা কম হওয়ায় এ অঞ্চলের নদীগুলোর পানি উজানে কিছুটা কমেছে। তবে ভাটির দিকে নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হচ্ছে আরও বিস্তীর্ণ এলাকা।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, আজ সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা গতকাল সন্ধ্যায় ১২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

একই নদীর পানি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় বিপৎসীমার ১৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা গতকাল সন্ধ্যায় ১৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি
আশ্রয়কেন্দ্রেও পানি উঠছে। ছবি: শেখ নাসির/স্টার

তবে সুরমা নদীর পানি উজানে কিছুটা কমলেও এখনো সিলেট নগর, সুনামগঞ্জ শহর ও সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার, ৪০ সেন্টিমিটার ও ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এ ছাড়াও কুশিয়ারা নদী সিলেটের জকিগঞ্জের অমলশীদে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে ৯২ সেন্টিমিটার, শেরপুরে ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গোয়াইন নদী গোয়াইনঘাটে বিপদসীমার নয় সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ শহরে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। একই সময়ে তাহিরপুর উপজেলার লাউড়েরগড়ে ৭৮ মিলিমিটার, ছাতকে ৮৪ মিলিমিটার ও দিরাইয়ে ৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

একই সময়ে সিলেট নগরে ৯৪ মিলিমিটার, কানাইঘাটে ৭৭ মিলিমিটার ও শেরপুরে ৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পাউবো।

এদিকে সিলেটে আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার জন্য ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলামের সই করা সতর্কবাণীতে সিলেট বিভাগে ভারী (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে এ অঞ্চলে ভূমিধ্বসের সম্ভাবনার কথাও জানানো হয়েছে।

বন্যার খবর
ছবি: শেখ নাসির/স্টার

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, 'উজানে কম বৃষ্টি হওয়ায় সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমেছে। শহরের বেশিরভাগ অংশ প্লাবিত ছিল, যা থেকে আজ সকালে পানি নেমেছে। তবে যেহেতু বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে, তাই আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।'

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, 'সিলেট নগরীর বরইকান্দি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র বন্যাঝুঁকিতে থাকায় তা রক্ষায় গতরাত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল কাজ করছে। এ ছাড়াও যেকোনো গুরুতর পরিস্থিতিতে কাজ করার জন্য সেনাবাহিনী প্রস্তুত আছে। তবে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি ততটা গুরুতর হয়নি। প্রতিটি উপজেলা প্রশাসন তার স্বেচ্ছাসেবকদের দল নিয়ে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'ইতোমধ্যে জেলার ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ প্লাবিত হয়েছে। যেহেতু ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে এবং এর ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে, তাই আমরা সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করে রেখেছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

1h ago