ঈদের দিন ৪০ হাজার পিস চামড়া এসেছে সাভারের ট্যানারিতে, ২ দিনে আসতে পারে ৬ লাখ

ছবি: সংগৃহীত

ঈদুল আজহার প্রথম দিনে দুপুর ১২টার পর থেকে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া প্রবেশ করতে শুরু করে ঢাকার সাভারের বিসিক চামড়াশিল্প নগরীতে। প্রথম দিন বিকেল পর্যন্ত সেখানে প্রায় ৪০ হাজার পিস কাঁচা চামড়া প্রবেশ করেছে। এ ছাড়া আজ ‍ও আগামীকাল মিলিয়ে আরও দুই দিনে ছয় লাখ চামড়া আসবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঈদের দিন বিকেলে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক চামড়াশিল্প নগরীতে গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, গতকাল বিকাল পর্যন্ত মোট ৪০ হাজার পিস কাঁচা চামড়া ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে শিল্প নগরীতে প্রবেশ করেছে। এ ছাড়া আগামী দুই দিনে প্রায় ছয় লাখ চামড়াশিল্প নগরীতে প্রবেশ করবে।

তিনি আরও বলেন, সাধারণত চামড়া নষ্ট হয় এতিম খানায় ও লবণের অভাবে। চামড়ার পচনরোধে এ বছর প্রতিটি এতিমখানায় বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশে এ বছর পর্যাপ্ত লবণ মজুত রয়েছে। লবণের বাজার গত বছরের তুলনায় কেজি প্রতি দুই টাকা কম রয়েছে। চামড়া প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে যেন ব্যবসায়ীরা লবণের দাম বাড়াতে না পারে, সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে।

'আমরা চামড়া সংরক্ষণে এক লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন লবণ সংশ্লিষ্টদের সরবরাহ করেছি। অর্থাৎ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন বেশি লবণ সরবরাহ করা হয়েছে। কাজেই লবণ নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। এরপরেও যদি লবণ প্রয়োজন হয়, আমাদের সংশ্লিষ্ট সেল তাৎক্ষণিকভাবে তা সরবরাহ করবে', যোগ করেন তিনি।

বিসিক চেয়ারম্যান বলেন, চামড়ার গুণগত মান নিশ্চিত করতে দেশজুড়ে কোরবানিকৃত পশুর চামড়া যেন ঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও বিসিকের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।

এ বছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে শিল্প নগরীর সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টও ঢেলে সাজানো হয়েছে জানিয়ে বিসিকের এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, 'শুধুমাত্র এই ঈদকে কেন্দ্র করে এ বছর আমরা সিইটিপিতে বেশ কিছু আপগ্রেডেশন করেছি। যেখানে আগে ছয়টি ব্লোয়ার ছিল, এখন ১৭টি ব্লোয়ার চলছে। এক সপ্তাহ যাবৎ সিইটিপির ওভারহোলিং করা হয়েছে।'

এ ছাড়াও প্রথম সাত দিন কোনোভাবেই যেন ঢাকার বাইরের চামড়া ঢাকায় প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করার পাশাপাশি চামড়াবাহী গাড়ি যেন নির্বিঘ্নে শিল্প নগরীতে প্রবেশ করতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক ও সালমা ট্যানারির মালিক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, দুপুর থেকে কাঁচা চামড়া ট্যানারিতে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। দুই দিনে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় লাখ পিস চামড়া শিল্প নগরীতে প্রবেশ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চামড়ার নতুন নির্ধারিত দাম কিংবা লবণ ও রাসায়নিক নিয়েও কোনো সংকট নেই উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, 'ট্যানারিগুলোতে পর্যাপ্ত রাসায়নিক রয়েছে, রয়েছে পর্যাপ্ত লবণের সরবরাহও। কাজেই আপাতত ওভারওল পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। ট্যানারিগুলো নির্ধারিত দামেই চামড়া কিনছে।'

কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, এখন পর্যন্ত চামড়া পাচার নিয়ে কোনো গুঞ্জন ওঠেনি। লবণের দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী দুই দিনে মোট পাঁচ থেকে ছয় লাখ চামড়া শিল্পনগরীতে প্রবেশ করবে।

মেসার্স আজমেরি ট্যানারির মালিক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, সরকার নির্ধারণ করেছেন লবণযুক্ত চামড়ার দাম। যেহেতু এই মুহূর্তে আমরা লবণ ছাড়া কাঁচা চামড়া কিনছি, সেক্ষেত্রে প্রতিটি চামড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কমে কিনছি। লবণযুক্ত চামড়া সরকারনির্ধারিত মূল্যেই কিনছি।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর মোট এক কোটি সাত লাখ পশু কোরবানি হতে পারে, যার চামড়া সংরক্ষণে এক লাখ মেট্রিক টন লবণ প্রয়োজন। গত ৬৩ বছরের ইতিহাসে দেশে এবার সর্বোচ্চ পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়েছে, যার পরিমাণ ২৪ লাখ ৩৭ হাজার মেট্রিক টন।

Comments