কোরবানির পশুর হাটে বেচাকেনা কম, শেষ সময়ে ভালো বিক্রির আশা

গরুর হাট
পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার শরৎনগর হাট থেকে গত শনিবার তোলা ছবি। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/ স্টার

ঈদুল আযহার বাকি আর মাত্র এক সপ্তাহ। তবে এখনও ঈদের আগে আশানুরূপ কোরবানির পশু বেচাকেনা শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও খামারিরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বাজারে ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। তবে ক্রেতারা বলছেন, বাজেটের মধ্যে পছন্দের পশু মেলাতে পারছেন না তারা, তাই এক হাট থেকে অন্য হাটে ঘুরতে হচ্ছে।

পাবনার কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।  

পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার হারুপারা গ্রামের খামারি আব্দুল কাদের দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তিনি প্রায় ২৬৮টি মোটাতাজাকরণ গরু বিক্রি করে ভালো লাভ করেন। তবে এ বছর মোটাতাজা গরুর চাহিদা কিছুটা কম থাকায় এবং পশু পালন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৫০টি গরু লালন করেন। এর মধ্যে ১০০টি গরু বিক্রি হয়েছে। গত শনিবারের হাটে ৫০টি গরুর মধ্যে মাত্র ৪টি বিক্রি হয়েছে। পশু বিক্রি করে আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না বলে জানান তিনি।

খামারের সবচেয়ে বড় গরুটি বিক্রির জন্য ২৬ লাখ টাকা দাম চাওয়া হলেও বিক্রি হয়েছে ১৫ লাখ টাকায়। ৮ থেকে ১০ মণ ওজনের গরু ২ থেকে আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে তাকে। দাম না পাওয়ায় হতাশ তিনি।

আশানুরূপ বিক্রি হয়নি বলছেন গরুর খামারি ও ব্যবসায়ীরা, অন্যদিতে ক্রেতারা বলছেন বাজেটে মিলছে না কোরবানির পশু। ছবি: স্টার

পাবনা জেলা ডেইরি খামার মালিক সমিতির সভাপতি মো. সাইফুল আলম বলেন, এ বছর পশুপালন খরচ অনেক বেড়েছে। কমপক্ষে ১৬ থেকে ১৮ কেজি দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর পর গরুর মাংস এক কেজি বৃদ্ধি পায়।

প্রতি কেজি দানাদার খাবার কমপক্ষে ৪৫ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। পাশাপাশি খামারের যাবতীয় খরচ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় একটি বড় গরু তৈরি করতে মণপ্রতি ২৭ থেকে ২৮ হাজার টাকা পর্যন্ত লাগছে বলে জানান তিনি।

কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা মণ দরে বড় গরু বিক্রি করতে পারলে খামারিরা লাভের মুখ দেখতে পারবে। তবে বাজারে ২৬ থেকে ২৮ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে খামারিরা ভালো দাম পাচ্ছে না বলে দাবি করলেও ক্রেতারা বলছেন সাধ্যের মধ্যে পছন্দের গরু কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার কলেজ শিক্ষক আব্দুর রহিম বলেন, তিন থেকে সাড়ে তিন মণ ওজনের একটি গরু কিনতে হাটে যেয়ে রীতিমত হোঁচট খেতে হয়েছে তাকে। তিন মণের গরু এক লাখ টাকার ওপরে দাম চায়। এত দাম দিয়ে গরু কেনার বাজেট নেই তার, বাধ্য হয়েই গরু কেনার জন্য আরও কয়েকটি হাট ঘুরতে হবে তাকে।

ব্যবসায়ীরা জানায়, কোরবানির হাটে ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা অনেক বেশি থাকে ফলে ৫ মণের নিচের ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুর দাম কিছুটা বেশি পড়ে।

ঈশ্বরদীর গরু ব্যবসায়ী জিন্নাত আলী বলেন, তিনি প্রায় এক ডজন ছোট ও মাঝারি গরু খামারিদের কাছ থেকে কিনে হাটে তুলেছেন। খামার থেকেই গরু কিনতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা মণ খরচ পড়েছে। কয়েকদিন লালন পালন করে হাটে নিয়ে আসতে খরচ হয়েছে মণপ্রতি আরও ১ থেকে ২ হাজার টাকা। এ অবস্থায় ৩৫ হাজার টাকা মণের নিচে গরু বিক্রি করলে লাভের মুখ দেখা যাবে না বলে জানান তিনি।

পাবনার সাথিয়া উপজেলার বিলচাপরি গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আব্দুল গফফার বলেন, অন্যান্য বছর ঈদের আগে প্রতি হাটে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫টি গরু বিক্রি করেছেন। গত তিনটি হাট ঘুরে তিনি মাত্র ৫টি গরু বিক্রি করতে পেরেছেন।

পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার শরৎনগর হাট থেকে গত শনিবার তোলা ছবি। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/ স্টার

তবে আশা ছাড়ছেন না ব্যবসায়ী ও খামারিরা। ঈদের আগে তিন থেকে চার দিন হাটে অনেক বেশি বেচাকেনা হবে বলে আশা করছেন তারা।

পাবনার অন্যতম বৃহত্তম পশুর হাট ভাঙ্গুরা উপজেলার শরৎনগর হাটের খাজনা আদায়কারী আব্দুস সালাম বলেন, গত বছর ঈদের আগে প্রতিটি হাটে প্রায় ২৫০০ থেকে ৩০০০ পশু বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এ বছর বেচাকেনা অনেক কম। গত সপ্তাহে এক হাটে ৪০০ থেকে ৫০০ পশু বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে ৭০০ থেকে ৮০০ পশু বিক্রি হয়েছে। আশা করছি ঈদের আগে শেষ হাটে পশু বিক্রি ভালো হবে।

প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানায়, এ বছর দেশে প্রায় ১ দশমিক ৩ কোটি কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে পাবনা ও সিরাজগঞ্জে সর্বাধিক কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে।

পাবনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গৌরাঙ্গ কুমার তালুকদার জানান, পাবনায় এ বছর ৩ দশমিক ১২ লাখ কোরবানির পশুর চাহিদা থাকলেও ইতোমধ্যে ৬ দশমিক ৩৪ লাখ কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, সিরাজগঞ্জে এ বছর ২ দশমিক ১৭ লাখ কোরবানির পশুর চাহিদা থাকলেও ৬ দশমিক ২৫ লাখ কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে।

এ দুই জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা জানান, অতিরিক্ত কোরবানির পশু দেশের অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এ বছর বাইরে থেকে পশু না আসায় বিক্রেতারা ভালো দাম পাবেন বলে আশা করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

1,500 dead, nearly 20,000 injured in July uprising: Yunus

He announced plans to demand the extradition of deposed dictator Sheikh Hasina from India

1h ago