ছাত্রলীগ নেতার অনুমতি ছাড়া মিছিল, কর্মীকে গুলি করে হত্যা

নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রাম থেকে ফারাবিকে গ্রেপ্তার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসান আল ফারাবি জয়কে প্রাধান্য না দিয়ে সদর উপজেলা নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে আনন্দ মিছিল আগে আগে বের করায় ক্ষোভে একই দলের কর্মী আশরাফুর রহমান ইজাজকে গুলি করে হত্যা করা হয়। 

হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছাত্রলীগ নেতা ফারাবি গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গতকাল শুক্রবার ভোরে নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রাম থেকে ফারাবিকে গ্রেপ্তার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে যায়।

পরে ফারাবির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের সেতু সংলগ্ন একটি ঝোপ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তল উদ্ধার করে পুলিশ।

আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়।

এসময় পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন জানান, সদর উপজেলা নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে ইজাজসহ অন্যরা আগে আগে আনন্দ মিছিল বের করায় একই প্রার্থীর সমর্থক জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফারাবি মনক্ষুণ্ন হয়। তার অনুমতি ছাড়া মিছিল বের করার ক্ষোভে সে মিছিলে গুলি চালায়। মিছিল বের করার বিষয়টি অজুহাত হিসেবে দেখালেও মূলত ফারাবির সঙ্গে ছাত্রলীগ কর্মী ইজাজের পূর্ব বিরোধ ছিল। বুধবার সকালে ভোটকেন্দ্রে তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়েছিল। সন্ধ্যায় ইজাজসহ অন্যরা বিজয় মিছিল বের করলে ফারাবি ওই মিছিলে গুলি চালায়। 

ফারাবির জবানবন্দির বরাত দিয়ে এসপি জানান, কলেজপাড়ার আরেক বাসিন্দা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জালাল হোসেন খোকা এবং ছাত্রলীগ নেতা জয় একে অপরের ঘনিষ্ঠ। নিহত ইজাজও তাদের সঙ্গে চলাফেরা করতেন। তারা একই পাড়ার বাসিন্দা। কলেজপাড়া এলাকায় এককভাবে প্রভাব বিস্তার করতেন খোকা ও ফারাবি। তাদের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারতেন না ইজাজসহ কলেজপাড়ার দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকজন যুবক। এ কারণেই ইজাজ ও তার কয়েকজন বন্ধুর প্রতি ক্ষিপ্ত ছিলেন খোকা ও ফারাবি। এ বিরোধ ধীরে ধীরে চরম আকার ধারণ করে। গত ৫ জুন ভোটের দিন ভিপি খোকা একটি অস্ত্র সংগ্রহ করে ফারাবির হাতে তুলে দেন। এই অস্ত্র পেয়ে সন্ধ্যায় কলেজপাড়ার জামাল মিয়ার বাড়ির মোড়ে ইজাজকে গুলি করেন ফারাবি। 

ফারাবি গুলি করার বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন বলেও জানান তিনি।

ফারাবি পুলিশকে জানায়, এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখতে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পিস্তল সংগ্রহ করে ইজাজকে গুলি করেন তিনি। মামলার প্রধান আসামি সাবেক ভিপি খোকাসহ আরও অনেকেই এ পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত।

এসপি জানান, ফারাবিকে গ্রেপ্তার অভিযানে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি টিম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে সহায়তা করে। আসামি গ্রেপ্তারের পর অস্ত্র উদ্ধারের জন্য তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ আশপাশের কয়েকটি জেলায় অভিযান পরিচালনা করেন। গ্রেপ্তারকৃত ফারাবি পুলিশকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি জেলায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করিয়েছেন। 

ঘটনার পর একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ফারাবি হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে ইজাজকে গুলি করে কোমরে পিস্তল গুঁজে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন। 

ফারাবিকে গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে ভিড় করেন ইজাজের স্বজন ও এলাকাবাসী। এসময় তারা ক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং ভিপি খোকাসহ অন্যদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবু বক্কর সিদ্দিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্রেপ্তারকৃত আসামি ফারাবিকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।' 
 

Comments

The Daily Star  | English

Nahid warns against media intimidation, vows stern action

The government will take stern action against those trying to incite violence or exert undue pressure on the media or newspapers, said Information Adviser Nahid Islam today

2h ago