গরমে ঘামাচি হলে কী করবেন

গরমে ঘামাচি
ছবি: সংগৃহীত

গরমে ঘামাচি অসহ্য যন্ত্রণার নাম। ঘামাচি থেকে বাঁচতে কী করবেন জেনে নিন চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ ও মার্কস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. কাজী ইমরান হাসানের কাছ থেকে।

ঘামাচি কী ও কেন হয়

ডা. ইমরান হাসান বলেন, গরমের সময় অনেকের ত্বক লাল হয়ে যায়, ফুসকুড়ি দেখা দেয় যা ঘামাচি বা হিট র‌্যাশ হিসেবে পরিচিত। ঘামাচি এক ধরনের চর্মরোগ। ঘামাচি হলে প্রচণ্ড চুলকায়, গরমে শরীর ঘামলে জ্বালা অনুভূত হয়। সাধারণত সারা শরীরেই ঘামাচি হয়। তবে পিঠে, বুকে, কপাল, গলায় এবং ঘাড়ে বেশি দেখা যায়। শিশুদের সবচেয়ে বেশি ঘামাচি হয়।

ত্বকের নিচে ঘর্মগ্রন্থি আছে যেখানে স্টেফ এপিডারমাইডিস নামের এক ধরনের জীবাণু থাকে। গরমের সময় শরীরে ঘাম বেশি হয়। ময়লা, ধুলোবালি বা কোন কারণে যখন ঘর্মগ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে যায় সেখান থেকে ঘাম নিঃসৃত হতে পারে না। তখন সেখানে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বা প্রদাহ বেড়ে যায়। তখন লাল লাল গোটা বা ফুসকুড়ির মত ঘামাচি দেখা দেয়।

ঘামাচির ধরন

ডা. ইমরান হাসান বলেন, ঘামাচি সাধারণত চার ধরনের হয়।

মিলিয়ারিয়া রুব্রা:  ত্বকে লাল লাল গুটি হয় র‌্যাশের মতো।

মিলিয়ারিয়া ক্রিস্টালিনা:  এ ধরনের ঘামাচি পানি জাতীয়, পানির ফোস্কার মতো হয়। এটি শিশুদের বেশি হয়।

মিলিয়ারিয়া পাস্তুলোসা:  ঘামাচি ইনফেকশনের পর্যায়ে চলে যায়, পুঁজ সৃষ্টি হয় অর্থাৎ পুঁজযুক্ত ঘামাচি এটি।

মিলিয়ারিয়া প্রোফান্ডা:  ত্বকের গভীরে থেকে হয়,  এটি খুব একটা হয় না।

প্রথম তিনটি ধরন দেখা যায় আমাদের দেশে, মিলিয়ারিয়া রুব্রা ও মিলিয়ারিয়া ক্রিস্টালিনা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

ঘামাচি হলে কী করবেন ও প্রতিরোধ

১. যাদের শরীরে ঘাম বেশি হয় তাদের যত দ্রুত সম্ভব ঘামে ভেজা পোশাক পরিবর্তন করতে হবে। ঘাম হলে সঙ্গে সঙ্গে নরম কাপড়, তোয়ালে বা রুমাল দিয়ে মুছে নিতে হবে।

২. প্রতিদিন গোসল করতে হবে, সম্ভব হলে দিনে দুইবার গোসল করতে হবে। স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে গোসল করতে হবে। শরীর পরিষ্কার রাখার জন্য সাবান ব্যবহার করতে হবে, কম ক্ষারযুক্ত অথবা অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল সাবান ব্যবহার করতে পারেন।

৩. মাথায় চুলের গোড়ায় অনেকের ঘাম বেশি হয়। সেখানে যাতে ইনফেকশন না হয় সেজন্য চুলে শ্যাম্পু করতে হবে।

৪. ঘামাচির জায়গাগুলো নখ দিয়ে স্পর্শ না করাই ভালো। ঘামাচি নখ দিয়ে চুলকালে বা আঁচড়ালে ইনফেকশন হতে পারে। ঠান্ডা পানিতে নরম কাপড় ভিজিয়ে আক্রান্ত স্থান মুছে দিলে ঘামাচি অনেকাংশে কমে যায়।

৫. ঘামাচি রোধক বা ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে ঘামাচি দূর করার জন্য। তবে পাউডার ব্যবহারের আগে শরীর ভালো করে মুছে নিতে হবে যাতে ঘাম না থাকে। একসঙ্গে অনেক বেশি পরিমাণ পাউডার ব্যবহার করা যাবে না। এতে ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। পাউডার হালকা প্রলেপে শরীরে লাগাতে হবে। অ্যান্টিসেপটিক লোশন, কিছু হোম রেমিডি, অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা যেতে পারে।

৬. শিশুকে গরমে ডায়াপার বেশি না পরানোই ভালো। তাতে ঘামাচি হওয়ার  ঝুঁকি বেশি থাকে।

৭. প্রচণ্ড রোদে যাতে শিশুরা বাইরে না যায়, রোদে খেলাধুলা না করে সেদিকে নজর রাখতে হবে।

৮. গরমে ঢিলেঢালা, পাতলা সুতির পোশাক পরতে হবে।

৯. যথাসম্ভব গরম এড়িয়ে চলতে হবে, বসবাস ও কাজের জায়গা যাতে খোলামেলা ও বাতাস চলাচল করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ফ্যানের নিচে, এসিতে থাকলে ঘামাচি কম হয়।

১০. ঘামাচি থেকে সংক্রমণ যদি বেশি হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka cannot engage with non-state actors: foreign adviser

Md Touhid Hossain also emphasised that peace and stability in the region would remain elusive without a resolution to the Rohingya crisis

29m ago