ত্বকে রেটিনলের কাজ, ব্যবহারের বয়স ও নিয়ম কী, জানুন চিকিৎসকের পরামর্শ

বিস্তারিত জানিয়েছেন নর্দার্ন ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. আসমা তাসনীম খান।
রেটিনল
ছবি: সংগৃহীত

ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে এখন অনেকেই রেটিনল ব্যবহার করছেন। কিন্তু কোন বয়সে রেটিনল ব্যবহার করতে হয়, কীভাবে ব্যবহার করতে হয় এবং কী কী সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় জানেন না অনেকেই।

এসব সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন নর্দার্ন ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. আসমা তাসনীম খান।

রেটিনল কী ও ব্যবহারের বয়স

ডা. আসমা তাসনীম খান বলেন, ভিটামিন-এ এর বিভিন্ন ফর্মের একটা হচ্ছে রেটিনল। ভিটামিন-এ এর বিভিন্ন ফর্মকে এক অর্থে রেটিনয়েডস বলা হয়, এই রেটিনয়েডসের মধ্যে আছে রেটিনল, রেটিনাল, ট্রিটিনোইন। এর মধ্যে রেটিনল সবচেয়ে লো কনসেন্ট্রেশানের, খুবই হালকা। রেটিনালের কাজ একটু বেশি রেটিনয়েলের চেয়ে, আর ট্রিটিনোইন চিকিৎসকরা তাদের কাজে ব্যবহার করেন। ত্বকের বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে, বিউটিফিকেশনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় এটি ব্যবহার করা হয় বিভিন্নভাবে।

অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্ট এবং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে রেটিনলের বিভিন্ন পণ্য ব্যবহার করা হয়। রেটিনল বলতে সিরাম, ক্রিম ফরম্যাটে যেটি ত্বকে ব্যবহার করা সেটাকেই সাধারণ মানুষ জানে।

মুখের ব্রণ কিংবা কালো দাগ কমানোর জন্য বিভিন্ন বয়সে রেটিনল ব্যবহার করা হয়। তবে অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্টের জন্য যখন রেটিনল ব্যবহার করা হয় সেক্ষেত্রে ৩০ বছর পর থেকেই শুরু করা উচিত। কারণ ৩০ বছর বয়সের পর থেকেই ত্বকে  বয়সের ছাপ পড়তে থাকে। ওই সময় এটি কমানোর জন্য রেটিনল সিরাম, ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।

ত্বকের যত্নে রেটিনলের কাজ

১. রেটিনল ত্বকে কোষ নবায়নে সাহায্য করে, নতুন করে সেল তৈরি করে। যার কারণে পুরোনো সেলগুলো উপর থেকে চলে যায়। ডেড সেল দূর হলে এবং নতুন সেল তৈরি হলে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।

২. মুখে ব্রণ থাকলে তা দূর করে।

৩. মুখে ছোপ ছোপ ও কালো দাগ থাকলে তা কমাতে কাজ করে রেটিনল।

৪. রেটিনল কোলাজেন ফরম্যাশনে সাহায্য করে। কোলাজেন ত্বকের বিউটি ফ্যাক্টর। কোলাজেন বেড়ে যাওয়ায় রেটিনল ত্বক টান টান করে, বয়সের ছাপ পড়া থেকে ত্বককে ভালো রাখে।

ত্বকে রেটিনল ব্যবহার এমন একটি ট্রিটমেন্ট, যা দীর্ঘসময় ধরে চালিয়ে যেতে হয়। এক কিংবা দুই মাস রেটিনল ব্যবহার করলেই ভালো ফল পাওয়া যাবে না।

ত্বকে রেটিনলের ব্যবহার

ডা. আসমা তাসনীম খান বলেন, কোন বয়সে ত্বকে কোন সমস্যা দেখা দিচ্ছে এবং কার ত্বক কেমন তার ওপর নির্ভর করে রেটিনলের বিভিন্ন ফরম্যাটের ব্যবহার।

কারো ত্বক অনেক বেশি সেনসিটিভ, কারো শুষ্ক থাকে, অ্যালার্জির সমস্যা থাকে অর্থাৎ একেক জনের ত্বকে একেক রকমভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ত্বকে রেটিনল ব্যবহারে সতর্কতার সঙ্গে ধীরে সুস্থে এগুতে হবে। রেটিনল খুবই লো কনসেন্ট্রেশানের পণ্য। সাধারণত লো কনসেন্ট্রেশানে রেটিনলের সিরাম ত্বকে কোনো ধরনের সমস্যা তৈরি করে না। কিন্তু যাদের ত্বক অনেক বেশি হাইপার সেনসিটিভ, সেনসেটিভ বা অতিরিক্ত শুষ্ক তাদের ত্বকে রেটিনল ব্যবহার করলে ত্বক খারাপ হতে পারে, চুলকানি হতে পারে, লাল হয়ে যেতে পারে, জ্বালাপোড়া হতে পারে।

প্রথমে একটি রেটিনল সিরাম সপ্তাহে ২ বা ৩ দিন এভাবে এক থেকে দেড় মাস ব্যবহার করার করা যেতে পারে। এরপর যখন ত্বকের সঙ্গে রেটিনল সিরাম মানিয়ে যাবে তখন সপ্তাহে ৪ দিন বা ৬ দিনই ব্যবহার করতে পারবেন। দীর্ঘ সময় ব্যবহারে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেতে থাকে।

তবে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ত্বকে ভালো ফলাফল পাওয়ার পর অনেকের মনে হতে পারে রেটিনল ব্যবহারে ত্বকে খুব বেশি ভালো ফল পাচ্ছেন না আর। এর কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের পরিবর্তন হয় আর তার সুরক্ষার জন্য যে মেডিসিন বা প্রোডাক্ট ব্যবহার করা হয় সেটার কনসেনট্রেশানও পরিবর্তন হয়। তাই ত্বকের চাহিদা অনুযায়ী রেটিনল কনসেনট্রেশানও কম-বেশি মানের পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে পারে।

ডা. আসমা তাসনীম খান বলেন, ত্বকের যত্নে রেটিনল অবশ্যই রাতে ব্যবহার করতে হবে। প্রথমে ক্লিনজার বা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে মুছে নিতে হবে। এরপর এক অথবা দুই ফোঁটা রেটিনল সিরাম হাতে নিয়ে হালকা করে মুখে লাগিয়ে নিতে হবে চোখ ও ঠোঁটের চারদিক বাদ দিয়ে। আধা ঘণ্টা পর একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে মুখে।

মনে রাখতে হবে ত্বকের যত্নে রেটিনল ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন ডার্মাটোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হবে।

রেটিনল ব্যবহারে সতর্কতা

১. গর্ভাবস্থায় বা সন্তানসম্ভবা নারীদের রেটিনলের প্রোডাক্ট ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি কেউ সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন, ল্যাকটেশন পিরিয়ড বা বাচ্চাকে দুধ খাওয়ান এমন মায়েদেরও রেটিনলের কোনো প্রোডাক্ট ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ এতে করে টেরাটোজোনিক প্রভাব বা বাচ্চার গঠনগত বিভিন্ন ত্রুটি দেখা দেয়।

২. রেটিনলের ব্যবহার ত্বককে শুষ্ক করে দেয়। যাদের ত্বক শুষ্ক, রেটিনল ব্যবহারে তাদের ত্বক আরও বেশি শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। তাই এ ব্যাপারে নজর রাখতে হবে।

৩. রেটিনল ব্যবহারে সান সেনসিটিভ কিছুটা বাড়ে, বিশেষ করে রেটিনয়েডস যারা মুখে খাচ্ছেন। তাই দিনের বেলায় অবশ্যই ভালো মানের সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।

 

Comments